ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুদের দণ্ড দেয়া অবৈধ: হাইকোর্ট

আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভ্রাম্যমাণ আদালতে কোনো শিশুকে দেয়া অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ১২১ শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দেয়া দণ্ড অবৈধ ও বাতিল করে বুধবার রায় দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ।


বিজ্ঞাপন

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। শিশুদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ও আইনজীবী ইশরাত হাসান।

এর আগে এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর গত ৩১ অক্টোবর হাইকোর্ট মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ডিত দুই শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা ১২ বছরের নিচের শিশুদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন। এছাড়া বাকিদের ছয় মাসের জামিন দেন।


বিজ্ঞাপন

একইসঙ্গে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর বিভিন্ন সময়ে তাদের মুক্তি দেয়া হয়।


বিজ্ঞাপন

রায়ের পর ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, ১২১ শিশুকে দণ্ড দেয়া নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সে রুলের শুনানি শেষে রায় হয়েছে। এই ১২১ শিশুর দণ্ড সম্পূর্ণরুপে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। আদালত আরও বলেছেন- কোনো শিশুকে মোবাইল কোর্ট কোনো দণ্ড দিতে পারবেন না। কারণ মোবাইল কোর্ট কোনো শিশুকে দণ্ড দিলে, সেই দণ্ড সংবিধানের ৩০ এবং ৩৫ অনুচ্ছেদে মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। ১২১ শিশুকে দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রেও মৌলিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

তিনি বলেন, শিশুকে ভ্রাম্যমাণ আদালত দণ্ড দেবে, সে ক্ষমতা কোনো আইনে নেই। একমাত্র শিশু আইনে শিশু আদালত শিশুদের দণ্ড দিতে পারবেন। অন্য কোনো আদালত কোনো অবস্থাতেই তাদের দণ্ড দিতে পারবেন না।

ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম আরো বলেন, আদালত বলেছেন, এই মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে দেশে আসলে দুই ধরনের বিচার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থা এবং মোবাইল কোর্ট বিচার ব্যবস্থা। এই মোবাইল কোর্ট বিচার ব্যবস্থা স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে একটি সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে। যা শুধু অসাংবিধানিকই নয়, মৌলিক অধিকারের পরিপন্থীই নয়, গণতান্ত্রিক ন্যায়-নীতির পরিপন্থী, মানবাধিকারের পরিপন্থীও।

‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন ৩১ অক্টোবর আদালতের নজের আনেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু আইনে স্পষ্টই বলা আছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, অপরাধে জড়িত থাকা শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতেই হবে। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত শিশুদের দণ্ড দিয়ে চলেছেন। এ মুহূর্তে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১২১ জন শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের দণ্ড দিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরা তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

শিশু আইনের পাশাপাশি হাইকোর্টের একাধিক রায়েও বলা হয়েছে, শিশুর বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের বিচার শুধু শিশু আদালতেই হতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত দূরের কথা, অধস্তন আদালতের কোনো বিচারক শিশুদের বিচার করলেও তা হবে বেআইনি।

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছরের ৩ মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত ১২১টি শিশু সেখানে রয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী রয়েছে ২৮ জন। ২৬ জনের বয়স ১৬, ২০ জনের বয়স ১৫, ১৬ জনের বয়স ১৪, ১১ জনের বয়স ১২। ৭ জনের বয়স ১৩। বাকি ১২ জনের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর। একজনের বয়স উল্লেখ নেই।

দণ্ডিতদের মধ্যে ৭৫ জনকে দণ্ডবিধির ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী চুরির দায়ে ছয় মাস এবং ৩৪ জনকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী এক বছর করে শাস্তি দেয়া হয়েছে। শুধু একটি শিশু ছয়মাসের সাজা পেয়েছে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায়। ১৩ বছর বয়সী শিশুটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় সাজা দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারি কর্মচারীকে ক্ষতিসাধনের হুমকির।

এছাড়া যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেও ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত একটি শিশু রয়েছে। কেশবপুরের এই শিশুটি বাল্যবিয়ের কারণে এক মাসের সাজা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ।

👁️ 24 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *