নওগাঁ প্রতিনিধি : ন্যায়বিচার পেতে বিলম্ব এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থার সংকটে আবারও চরম জনরোষের সাক্ষী হলো নওগাঁ জেলা। এক প্রবাসীর স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তদের ধরে স্থানীয় জনতা নিজেরাই প্রকাশ্যে ভয়ঙ্কর শাস্তি কার্যকর করেছে। ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

ঘটনার বিবরণ : স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁর এক প্রবাসীর স্ত্রীকে কয়েকজন যুবক দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। অভিযুক্তদের আটক করার পর পুলিশি প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা না করে উত্তেজিত জনতা তাদের প্রকাশ্যে খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ঘৃণ্য অপরাধের প্রতীকী বিচার হিসেবে অভিযুক্তদের পুরুষাঙ্গে ইট ঝুলিয়ে শাস্তি প্রদান করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মূলত ছিল জনতার জমে থাকা ক্ষোভের বিস্ফোরণ। তাদের মতে, ধর্ষণের মতো অপরাধে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হয় এবং অভিযুক্তরা সহজেই আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়।

জনমতের প্রতিক্রিয়া : ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের তৎপরতা যথাসময়ে কার্যকর হয় না। মামলার দীর্ঘসূত্রিতা, অভিযুক্তদের জামিন পাওয়া এবং অপরাধীদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে মানুষ ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। ফলে ক্ষুব্ধ জনগণ নিজেরাই আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত : সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচার যখন ব্যর্থ হয়, তখন জনতার আবেগপ্রসূত প্রতিক্রিয়া নৈরাজ্যের জন্ম দেয়। এভাবে বিচারপ্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া সমাজে আইনের শাসনকে দুর্বল করে তোলে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের ক্ষোভ যথার্থ হলেও আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া কখনোই সভ্য সমাজের কাম্য হতে পারে না। রাষ্ট্রকে দ্রুত ও কার্যকর বিচার নিশ্চিত করে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
পুলিশের ভূমিকা : পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। পরে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শুরুর আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—এই আশ্বাস বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে?
উপসংহার : নওগাঁর এই ঘটনা আবারও স্পষ্ট করল, মানুষ ন্যায়বিচার দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলকভাবে দেখতে চায়। রাষ্ট্র যদি বিচার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য করতে ব্যর্থ হয়, তবে জনতার ক্ষোভ আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে অবিলম্বে বিচার ব্যবস্থাকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে।