নিজস্ব প্রতিবেদক : কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসকে হাতিয়ার করে প্রতারণার রাজত্ব গড়ে তুলেছেন এক ভণ্ড কবিরাজ—প্রদীপ নামে এই ব্যক্তি। “ভাগ্য পরিবর্তন, “সংসারে শান্তি ফেরানো” কিংবা “জিন-ভূত তাড়ানো”র নামে তিনি গড়ে তুলেছেন এক ভয়ংকর প্রতারণা চক্র।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভণ্ড কবিরাজ প্রদীপের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাখরনগর এলাকায়। নিজেকে তিনি পরিচয় দেন “আধ্যাত্মিক চিকিৎসক” বা “কবিরাজ” হিসেবে। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়ে তিনি সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে অল্পশিক্ষিত ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের টার্গেট করেন।
তার প্রতারণার কৌশল সহজ—মিষ্টি কথায় বিশ্বাস অর্জন করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া। কারও পারিবারিক কলহ, কারও প্রেমে ব্যর্থতা, আবার কারও ভাগ্য উন্নতির আশায় তিনি দেন নানা প্রতিশ্রুতি। দোয়া, “তাবিজ, “পানিপড়া” বা “যজ্ঞ” করার নামে নেন মোটা অঙ্কের টাকা।

সম্প্রতি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে কবিরাজ প্রদীপ তার কাছ থেকে ১৩ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—“সংসারে শান্তি আসবে, সব ঝামেলা দূর হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা—তার সংসার ভেঙে গেছে।

ভুক্তভোগীর ভাষায়, সে খুব মিষ্টি করে কথা বলে। এমনভাবে বিশ্বাস করায় যে মনে হয়, এখনই সব ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর থেকেই সবকিছু উল্টো হয়ে গেল। এখন ফোন ধরেও না।
স্থানীয়দের দাবি, প্রদীপ দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা চালিয়ে আসছে। অনেকেই তার ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার টাকা হারিয়েছেন, কিন্তু প্রতিশ্রুত ফল কেউ পাননি।
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “এমন ভণ্ড কবিরাজদের কারণে সমাজে কুসংস্কার আরও বেড়ে যাচ্ছে। মানুষ চিকিৎসার পরিবর্তে এমন প্রতারকদের কাছে ছুটছে, যা ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কবিরাজ প্রদীপের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভুক্তভোগীর অভিযোগ আংশিকভাবে স্বীকার করে বলেন, আমি কিছুটা ভুল করেছি, স্বীকার করছি। তবে আমি কাউকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এটা করিনি। আমাদের বাপ-দাদার সময় থেকেই এই কাজ চলে আসছে, আমিও তাই করছি। সত্যি বলতে, আমার কোনো সরকারি লাইসেন্স বা অনুমোদন নেই।
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, এই ধরনের প্রতারক কবিরাজদের কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ না করলে আরও অনেক মানুষ তাদের মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।