!! ফলোআপ !! টাকার বিনিময়ে নোটিশ গায়েব !! রাজউক জোন–৫/২ এর অথরাইজড অফিসার ইলিয়াসের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যের আরও সম্প্রসারণ হচ্ছে !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

 

রাজউক জোন–৫/২ এর অথরাইজড অফিসার মো. ইলিয়াস হোসেন।


বিজ্ঞাপন

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার রক্তঝরা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের পরও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) যেন রয়ে গেছে পুরোনো দুর্নীতির ছোবলে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, সচিব নজরুল ইসলাম কিংবা রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান—কেউই যেন নড়েচড়ে বসছেন না রাজউক জোন–৫/২ এর অথরাইজড অফিসার মো. ইলিয়াস হোসেনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে।

রাজউক জোন–৫/২ এলাকা জুড়ে রয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব অঞ্চল—তেজগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ, নিউ মার্কেট, হাজারীবাগ থেকে শুরু করে কেরানীগঞ্জের আটি বাজার পর্যন্ত। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় ইলিয়াসের একক আধিপত্যে চলছে “নোটিশ বাণিজ্য”। অভিযোগ উঠেছে, ভবন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে নোটিশ ইস্যু করে টাকা নিয়ে সেগুলো “গায়েব” করে দিচ্ছেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

নোটিশের বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা :   চলতি বছরের  মে মাসে ফার্মগেট তেজতুরি বাজার এলাকায় দুটি অবৈধ ভবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে রাজউকে। অথচ ব্যবস্থা নেননি অথরাইজড অফিসার ইলিয়াস। সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি প্রথমে বলেন, “এই এলাকা আমার নয়”—পরে বিষয়টি ফাঁস হলে তড়িঘড়ি করে পরিচালক মো. হামিদুল ইসলামের নির্দেশে ডিপিডিসিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের চিঠি পাঠানো হয়।


বিজ্ঞাপন

কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে, ঐ ভবনদ্বয় থেকে মোটা অঙ্কের লেনদেন হয়েছিল ইলিয়াসের সঙ্গে। চিঠি গেলেও বাস্তবে কোনো অভিযান হয়নি। ভবন দুটি এখনো বহাল তবিয়তে চলছে, যেন প্রশাসনও বাণিজ্যের অংশীদার!

সাত দিনের নোটিশ” আট মাসেও শেষ হয়না ! : পূর্ব রাজাবাজারের হোল্ডিং নং ১৩১/১–এ ৮ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে সাত দিনের সময় বেঁধে নোটিশ দিয়েছিলেন ইলিয়াস। কিন্তু আট মাস কেটে গেলেও সে নোটিশে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ? স্থানীয় সূত্র জানায়, “ফাইল চাপা পড়েছে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে।”

অন্যদিকে, ধানমন্ডির কলাবাগানে আরেকটি ভবনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের  ৬ জানুয়ারি,  নোটিশ দিয়েছিলেন ইলিয়াস। অভিযোগ আছে—১২ লাখ টাকার বিনিময়ে সেই নোটিশই উধাও! প্রতিবেদকের হাতে আছে নোটিশ গায়েবের প্রমাণস্বরূপ তথ্য–উপাত্ত।

নির্মাণ নিষেধাজ্ঞার পরও চলছে কাজ ! :  নিউ এলিফ্যান্ট রোডের ল্যাবরেটরি রোডে হোল্ডিং নং ১১০, ১১১, ১১২ এবং ৮২ নম্বর ভবনে অনুমোদিত নকশার বাইরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছিল।  গত বছরের  ২০ অক্টোবরে  এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনির হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ভবন আংশিক উচ্ছেদ ও ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়—মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ওই ভবনগুলোতে আবার শুরু হয় নির্মাণকাজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম। তদন্তে জানা যায়, ৩৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইলিয়াস সব নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন।

পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বানিয়ে বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক : রাজউকের কোনো ইমারত পরিদর্শকের ব্যক্তিগত সহকারী থাকার নিয়ম নেই। অথচ ইলিয়াস নিজের ছোট ভাইকে পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের “সহকারী” বানিয়ে রেখেছেন। এই ভাইকেই ব্যবহার করা হচ্ছে টাকার লেনদেন, নোটিশ আদান–প্রদান ও গোপন সমঝোতার কাজে।

হাতিরপুলেও টাকা আদায়ের অভিযোগ : হাতিরপুল এলাকার একাধিক ত্রুটিপূর্ণ ভবন থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করেন ইলিয়াস ও তার ঘনিষ্ঠ পরিদর্শকরা—এমন অভিযোগ বহুদিনের। তবে “রাজউকের অভ্যন্তরীণ প্রভাবশালী চক্রের “ কারণে এসব বিষয় তদন্তেই যায় না।

কাজের চাপ’ অজুহাতে দায় এড়ানো : এইসব অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদক সরাসরি কথা বললে ইলিয়াস বলেন, “আপনারা শুধু দোষ দেখেন। আমরা কীভাবে সাইটে যাই, কষ্ট করি তা কেউ লেখে না। আমাদের তো কোনো বাইকও নেই!”

অর্থাৎ দুর্নীতির প্রশ্নে দায় এড়িয়ে তিনি নিয়মিত ‘কষ্টের গল্প’ শুনিয়ে যান।

কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও প্রশ্নের মুখে রাজউক : জোন–৫ এর পরিচালক মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, “আপনাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে অবশ্যই সামনে আনুন।”

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—তথ্যপ্রমাণ প্রকাশের পরও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না রাজউক ?  রাজউকের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পর্যন্ত সবাই জানেন অথরাইজড অফিসার ইলিয়াস ও তার ভাইয়ের দুর্নীতির কথা। তবু তারা বহালতবিয়তে, আগের তুলনায় আরও বেপরোয়া।

রাজউকের সাদা পোশাকে ঢেকে রাখা এই কালো কারবার এখন উন্মোচিত হওয়া সময়ের দাবি। রাজধানীর নকশাহীন ভবন, গায়েব হওয়া নোটিশ আর টাকার বিনিময়ে ‘আইন বিক্রি’—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে এখন অথরাইজড অফিসার মো. ইলিয়াস হোসেন।

তার বাণিজ্যিক রাজনীতি শুধু রাজউক নয়—পুরো নগর প্রশাসনের নৈতিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

পরবর্তী অনুসন্ধানে : কারা ইলিয়াসকে রক্ষা করছে রাজউকের ভেতর থেকে? “নোটিশ বাণিজ্যে” বছরে কত কোটি টাকা হাতবদল হয়? গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকাই বা কী?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *