সুপারশপগুলোকে ভোক্তা-বান্ধব করতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে মতবিনিময় সভা

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  রাজধানীর সুপারশপগুলোকে সত্যিকারের ভোক্তা-বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজ সোমবার (২১ অক্টোবর ২০২৫) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো এক গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় সভা। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব ফারুক আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় দেশের শীর্ষস্থানীয় সুপারশপ— স্বপ্ন, আগোরা, ইউনিমার্ট, প্রিন্স বাজার, আমানা বিগ বাজার, ট্রাস্ট ফ্যামিলি নিডস—এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।


বিজ্ঞাপন

সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা একমত হন যে, ভোক্তার আস্থা ও সন্তুষ্টি অর্জনই একটি টেকসই ব্যবসার মূলভিত্তি। সভার শুরুতে অভিযোগ ও তদন্ত বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, “বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন। আমাদেরও সেই সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভোক্তা-স্বার্থ রক্ষার মধ্য দিয়েই ন্যায্যতাভিত্তিক বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

অধিদপ্তরের উপপরিচালকবৃন্দ বাজার পরিদর্শন ও অভিযোগ নিষ্পত্তির সময় সুপারশপগুলোর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ তুলে ধরেন। মেয়াদোত্তীর্ণ, মানহীন ও অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রির মতো অভিযোগের প্রতি তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সুপারশপ কর্তৃপক্ষকে নিজ উদ্যোগে এসব সমস্যা সমাধানে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। আলোচনায় অংশ নেন উপপরিচালক (কার্যক্রম) আতিয়া সুলতানা, উপপরিচালক (অভিযোগ) মাসুম আরেফিন, উপপরিচালক (প্রচার ও প্রশিক্ষণ) আফরোজা রহমান, উপপরিচালক (তদন্ত) শাহনাজ সুলতানা, ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস, এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা।


বিজ্ঞাপন

সুপারশপ প্রতিনিধিরা বলেন, “বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে সুলভমূল্যে মানসম্মত পণ্য সরবরাহের বিকল্প নেই।” তারা পণ্য ও সেবার মান উন্নয়নে অবিরাম সচেষ্ট থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।


বিজ্ঞাপন

সভাপতি মহাপরিচালক ফারুক আহম্মেদ সতর্ক করে বলেন, “মেয়াদোত্তীর্ণ বা নকল পণ্য বিক্রি করা, কিংবা নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্তে বিক্রি করা—এগুলো আইনের দৃষ্টিতে দণ্ডনীয় অপরাধ।” তিনি অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুপারশপগুলোর ব্র্যান্ড ভ্যালু ব্যবহার করে অনলাইনে নকল বিদেশি পণ্য বিক্রি করছে। এতে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

বিস্তৃত আলোচনার পর সভায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়—প্রতিটি সুপারশপ কর্তৃপক্ষ নিয়মিত আউটলেট পরিদর্শন করবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ বা মানহীন পণ্য সরিয়ে ফেলবে। আউটলেট পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের নিয়মিত তদারকি ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। চটকদার বিজ্ঞাপন বা অফারের মাধ্যমে মানহীন পণ্য বিক্রি করা যাবে না। আউটলেটের দৃশ্যমান স্থানে অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও বিকল্প কর্মকর্তার নাম ও ফোন নম্বর প্রদর্শন করতে হবে।
প্রতিটি আউটলেটে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করতে হবে, যাতে ভোক্তারা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ জানাতে পারেন।

এছাড়া সুপারশপ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি ‘কনজুমার-ফ্রেন্ডলি এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন’ গঠনের সম্ভাবনা যাচাইয়ের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

সভায় জানানো হয়, শুধু সুপারশপ নয়—অধিদপ্তর ভবিষ্যতে অন্যান্য খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এ ধরনের মতবিনিময় সভা আয়োজন করবে, যাতে সমন্বিতভাবে ভোক্তা-বান্ধব ব্যবসায় সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এই উদ্যোগ দেশের খুচরা বাজারে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা ও ভোক্তা আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *