
নিজস্ব প্রতিবেদক : গণপূর্ত অধিদপ্তরের সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে আছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আতিকুল ইসলাম (আতিক)। ২০০৮ সালে ২৭তম বিসিএস ব্যাচে যোগদান করা এই প্রকৌশলী এখন শেরে বাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–৩–এর এক্সেন হিসেবে কর্মরত। ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকে তিনি গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির এক অদৃশ্য সাম্রাজ্য, যার পরিধি এখন রাজধানীর প্রতিটি বড় টেন্ডার, বদলি বাণিজ্য ও কমিশন নেটওয়ার্ক পর্যন্ত বিস্তৃত।

ব্যক্তিগত ও শিক্ষাগত পরিচিতি : ১৯৮১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের যাদুপুর শিমুলতলায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেন আতিকুল ইসলাম। তার বাবা-মা দুজনেই সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে এসএসসি, রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৯৯ সালে এইচএসসি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ২০০৫ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৮ সালে গণপূর্তে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিয়ে ২০১০ সালে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (SDE) এবং ২০১৭ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী (Exen) পদে উন্নীত হন। তার স্ত্রী কানিজা মুস্তারিনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে বর্তমানে ঢাকা সিটি কলেজে সহযোগী অধ্যাপক (CSE)।
ঢাকাকেন্দ্রিক চাকরি জীবন ও ক্ষমতার পরিধি : এই সিন্ডিকেটের হোতা আতিকুল ইসলাম আতিক চাকরি জীবনে তিনি ২০১১/১২ সাল থেকে অদ্যাবধি ঢাকায় পোস্টেড। (মাঝে ৪/৫ মাস নড়াইল জেলার দায়িত্বে ছিলেন।) ২০০৮ সালে সহকারী প্রকৌশলী এবং ২০১০ সালে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এই সময়টুকুই শুধু ঢাকার বাইরে ছিলেন তিনি। ২০১১/১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত এসডিই হিসেবে ঢাকার শেরে বাংলানগরে। ২০১৭ এ ৪/৫ মাস নড়াইল। ২০১৭ এর শেষদিকে সেগুনবাগিচার রক্ষনাবেক্ষন বিভাগে। জুলাই ২০২২ এ ঢাকা বিভাগ ১ এ, জুলাই ২০২৪ এ শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ ৩ এ। তারিক সিদ্দীকির সাথে তার সখ্যতা ছিলো অত্যাধিক। মনে রাখতে হবে হাসিনা ও রেহানার বাসা মেইন্টেইন করার এক্সেন তৎকালীন সময়ে শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদের বিশ্বস্ত দালাল না হলে করা হতোনা। গুলশান-২ এর ৮৪ নম্বর রোডের ১০ নং বাড়িটি ছিলো শেখ রেহানার। এটি গণপূর্ত রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের অধীনে। এর এক্সেন ছিলো সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহ আলম ফারুক চৌধুরী। ২০১৮ সালে গণভবন, ধানমন্ডি ৩২ ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জন্য যখন নতুন এক্সেন প্রয়োজন তখন এই শাহ আলম ফারুক চৌধুরী ছাড়া বিশ্বস্ত আওয়ামী আর কাউকে পাওয়া যায়নি। সে ও বিশ্বস্ততার সাথে সাড়ে ছয়টি বছর সেখানের এক্সেন ছিলো। কিন্তু ফারুক কে হাসিনার নিকট নেয়া হলে রেহানার বাড়ির জন্য তারিক সিদ্দীকির বিশ্বস্ত আওয়ামী দালাল প্রয়োজন ছিলো। তখন আতিক কে খুজে বের করেন তারিক সিদ্দীকি। তারিক সিদ্দিকীর মাধ্যমেই আতিক ১৮-১২-২০১৭ এ গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগে পদায়িত হয়। প্রায় ৫ টি বছর কাটিয়ে ০২-০৭-২০২২ এ সেখানে আরেক ছাত্রলীগার মোস্তাফিজ সবুজ কে পদায়িত করে আতিক ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ ১ এ গেলো। সেখানে ২ বছর থেকে ২৪-০৭-২০২৪ এ গেলো শেরে বাংলা নগর ৩ এ। এক্সেন এর আগে চাকুরীর প্রথম দুই বছর বাদে পুরোটা সময় ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পদায়িত ছিলো।

২০১১–২০১৭: শেরে বাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ (SDE)
২০১৭: অল্প সময় নড়াইল ২০১৭ শেষদিকে: গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ, সেগুনবাগিচা ২০২২: ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–১, ২০২৪: শেরে বাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–৩।

এই দীর্ঘ সময় রাজধানীতে অবস্থানের সুযোগে আতিক তৈরি করেছেন শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। জানা যায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামে কোনো নির্বাহী প্রকৌশলী পদে বদলি হতে চাইলে আতিককে টাকা না দিলে আদেশ হয় না। এমনকি সচিব বা উপদেষ্টার সুপারিশও তখন কার্যকর হয় না। এই বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে গত ৮–৯ মাসে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ও তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
শেখ রেহানার “ক্যাশিয়ার” হিসেবে আতিকের উত্থান : ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আতিক ছিলেন গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের দায়িত্বে—যেখানে গুলশান–২–এর ৮৪ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি (শেখ রেহানার সরকারি বাসভবন) তার তত্ত্বাবধানে ছিল। এই দায়িত্বে থেকেই আতিক ধীরে ধীরে তারিক সিদ্দিকী ও শেখ রেহানার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। সূত্র অনুযায়ী, সেই সময় গণপূর্ত থেকে সংগৃহীত কমিশনের অর্থ আগে যেত জিকে শামীমের মাধ্যমে, পরে নুসরাত হোসেনের হাত ঘুরে আতিকের মাধ্যমে শেখ রেহানার বাসায় পৌঁছত। ফলে গণপূর্ত মহলে আতিককে “শেখ রেহানার ক্যাশিয়ার” নামে ডাকা হতো।
স্ত্রীর নামে ফার্ম খুলে ঠিকাদারি : “Adroit Consultants & Engineers” কেলেঙ্কারি, ২০০৮ সালে আতিকের বন্ধু জাহিদুর রহমান এবং স্ত্রী কানিজা মুস্তারিনা মিলে “Adroit Consultants and Engineers” নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। প্রথমে চারজন পার্টনার থাকলেও, ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত এক আইনগত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়—দুই পার্টনার তাদের শেয়ার হস্তান্তর করার পর ফার্মটির একমাত্র মালিক হন জাহিদ ও কানিজা, অর্থাৎ আতিকের স্ত্রী। (সূত্র: বাংলাদেশ গেজেট, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮) চাতুর্যের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন, এনলিস্টমেন্ট, রেজিস্ট্রেশনসহ সব কাগজপত্রে স্ত্রী কানিজার নাম গোপন রাখেন আতিক। এভাবে সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করে তিনি নিজের স্ত্রী ও বন্ধুর নামে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন। সরকারি e-GP পোর্টালে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে—Adroit Consultants & Engineers নামে ফার্মটি এককভাবে ১৬৭টি কাজ পেয়েছে, যার অধিকাংশই নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ ও ইএম বিভাগ–৯ থেকে। এই দুটি বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীরা প্রায় সবাই “আতিক সিন্ডিকেটের” সদস্য। আতিকের নির্দেশ অমান্য করলে বদলির ভয় থাকে—ফলে সবাই বাধ্য হয়ে তার প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ দেন।
ইজিপি পোর্টালে প্রাপ্ত তথ্য মতে এখন পর্যন্ত এই ঠিকাদারি ফার্মের একক নামে প্রায় ১৬৯ টি কাজের তথ্য পাওয়া গেছে যার কন্ট্রাক্ট মূল্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। কাজগুলোর মোট মূল্য প্রায় ৭৩.৮২ কোটি টাকা। এই ১৫৭টি কাজের মধ্যে ১৩২টি কাজই পিপিআর এর নিয়ম ভংগ করে একক দরদাতার মাধ্যমে ওয়ার্ক অর্ডার প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জয়েন্ট ভেঞ্চার এর মাধ্যমে যে ৭টি কাজের তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোর মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রায় ১৪০ কোটি টাকা।
S B Construction–এর মাধ্যমে অর্থ পাচার : এনএসআই এর সাবেক ডিজি টি এম জুবায়ের এর ভাইরা ভাই খন্দকার আবুল কাইয়ুম কে আতিক এসবি কন্সট্রাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে দিয়ে জাল কাগজপত্র বানিয়ে দিয়ে তাকে কাজ দিয়েছেন। • আতিক কে ব্যবহার করে কাইয়ুমও গড়ে তোলেন সম্পদের পাহাড়। • আতিক এর সহায়তায় ও পরামর্শে জুবায়ের অর্থের বিনিময়ে ঠিকাদারদের বিভিন্ন বিভাগের ঠিকাদারির কাজ পাইয়ে দেয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল অর্থ। • আতিক এর সহায়তায় কাইয়ুম কে দিয়ে তিনি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসের আসবাবপত্র কেনার জন্য প্রতি বছর সরকারের বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। • জুবায়ের এনএসআই প্রধান কার্যালয়ের বহুতল ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেন মোটা অঙ্কের কমিশন যেটির মধ্যস্ততা করে আতিক। • দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়, গুলশান-২ এর ৮৪ নম্বর সড়কে লেকের পাশে একটি বাড়ি এনএসআইয়ের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হতো। রাষ্ট্রীয় ওই বাড়িটি গণপূর্তের আতিক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় নিজের এক আত্মীয়ের নামে দখল করেছেন টিএম জোবায়ের। • আতিক এর মাধ্যমে জুবায়ের নিয়মিত মাসোয়ারা নিয়ে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর গদি টিকিয়ে রাখতে নিয়মিত সুপারিশ করতেন প্রধানমন্ত্রীর দরবারে।
কমিশন বাণিজ্য, পোস্টিং সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক যোগসাজশ : গণপূর্তের বদলি ও পদায়ন বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন এককভাবে আতিকের হাতে। আগে এই ভূমিকা পালন করতেন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ক্যাশিয়ার “চুন্নু” ও ওবায়দুল মুক্তাদিরের ঘনিষ্ঠ “মোস্তাফিজ সবুজ”। কিন্তু বর্তমানে “আতিককে টাকা দিলেই কাঙ্ক্ষিত পোস্টিং”—এই নীতি চলছে অধিদপ্তরে। আতিক গতবছর গ্রেফতার হওয়া টেন্ডার মাফিয়া নূসরাত হোসেনের ঘনিষ্ট। এই মাফিয়া নূসরাতের বন্ধু অবৈধ প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার তাকে সেফগার্ড দিবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নুসরাত ইদানীং পর্দার অন্তরালে চলে গেলে সেই দায়িত্ব নেন আতিকুল ইসলাম আতিক। ইদানীং আতিক ও নুসরাতের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটি করেন আশরাফ উদ্দীন রিজু। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৮টা থেকে ধানমন্ডি ২ নম্বর রোডের “প্যানেড এরিয়া” রেস্টুরেন্টে বসে পোস্টিং টেন্ডারবাজির বৈঠক হয়। সেখানে দেখা যায় বিভিন্ন নির্বাহী প্রকৌশলী, ঠিকাদার এবং আতিকের সিন্ডিকেট সদস্যদের উপস্থিতি। সূত্র জানায়, চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্তরের অনুমোদন পেতে হলে আতিককে ১% কমিশন না দিলে কোনো টেন্ডার পাশ হয় না।
রাজনৈতিক অর্থায়ন ও আন্দোলন দমনের অর্থপ্রবাহ : ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ছাত্র–জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে, আতিক প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের নির্দেশে বিপুল অর্থ পাঠান আওয়ামী ক্যাডার নেতা নুসরাত হোসেন লিটন–এর কাছে। এই অর্থ মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের এফ ব্লকের ২৯/২ ও ৩ নম্বর বাড়ি (“শান্তি নিকেতন”)–এ রাখা হয়। ১৬ আগস্ট পুলিশ ওই বাসা থেকে নগদ ৩ কোটি টাকা উদ্ধার করে এবং সাবেক সচিব শাহ কামাল ও নুসরাতকে গ্রেপ্তার করে। যদিও উপস্থিত সবার ভাষ্যমতে টাকার পরিমান ছিলো ১২৭ কোটি। এই টাকাই ব্যবহার হয়েছিল হাসিনা সরকারের গুন্ডা বাহিনীকে অর্থায়নের জন্য, যারা আন্দোলনে মোহাম্মদপুর এরিয়াতে ২৬ জন ছাত্র হত্যা করেছিল।
আজও বহাল তবিয়তে আতিক সিন্ডিকেট : গত বছরের ৫ আগস্টে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পরও আতিকুল ইসলাম ও তার সিন্ডিকেট গণপূর্তে অক্ষত রয়েছে। নিজেকে এখন বিএনপি–জামায়াত ও এনসিপি–ঘনিষ্ঠ বলে প্রচার করে তিনি আবারও প্রশাসনিক প্রভাব খাটাচ্ছেন। অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ঢাকায় অবস্থানরত নির্বাহী প্রকৌশলীদের সিন্ডিকেট বর্তমানে আতিকের নিয়ন্ত্রণে। তারা একযোগে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও টেন্ডার নিজেদের পছন্দমতো বণ্টন করছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরে আজ সংস্কারের কথা যতই বলা হোক, আতিক সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না থামলে কোনো প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। যে কর্মকর্তা একসময় শেখ রেহানার “ক্যাশিয়ার” ছিলেন, তিনিই আজ বদলি বাণিজ্য, কমিশন নেটওয়ার্ক ও দুর্নীতির ছায়া সাম্রাজ্যের সম্রাট। অর্ন্তবর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া যদি গণপূর্তকে সত্যিই পরিশুদ্ধ করতে চায়, তবে এক্সেন আতিক ও তার নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
