বাগেরহাট-৩ আসনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ বেড়েছে — বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর মুখোমুখি লড়াইয়ের আভাস

Uncategorized খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

নইন আবু নাঈম তালুকদার, (শরণখোলা)  :  নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসন কমিয়ে তিনটিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এর ফলে বাগেরহাট-৩ আসনটি এখন শরণখোলা, মোড়লগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত।


বিজ্ঞাপন

এই আসন পরিবর্তনের পর থেকেই স্থানীয় রাজনীতিতে নড়েচড়ে বসেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন।

তবে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী ঘোষণা করায় দলটির মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে, অন্যদিকে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকায় দলটির ভেতরে কিছুটা বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার একটি আসন কমানোর সিদ্ধান্তে শরণখোলা ও মোড়লগঞ্জের ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা আসন পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও নির্বাচন কমিশন এখনো কোনো সাড়া দেয়নি।


বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক সূত্রে জানা যায়, কচুয়া উপজেলা যুক্ত হওয়ায় স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে শরণখোলা ও মোড়লগঞ্জের প্রার্থীদের সখ্যতা তৈরি না হওয়ায় কিছু প্রার্থী চিন্তিত। দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ভোটের মাঠে না থাকায় এবার দুই দলেরই মধ্যে উৎসবমুখর প্রস্তুতি ও প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাচ্ছে।

বিএনপির একাধিক প্রার্থী ইতোমধ্যে তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা দাবির লিফলেট ও পোস্টার ছড়িয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা মোটর শোভাযাত্রা, পথসভা, উঠান বৈঠক ও সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ তাদের একক প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট জেলা জামায়াতের শুরা সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুল আলীমকে ঘোষণা দিয়েছে। তিনি গত ছয়-সাত মাস ধরে নিয়মিতভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবলও উঁচুতে রয়েছে।

বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন—

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম,

সাবেক প্রার্থী কাজী খায়রুজ্জামান শিপন,

তাঁতি দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ড. কাজী মনির,

এবং বিএনপি নেতা এডভোকেট অলিয়ার রহমান।

ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষাক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সম্পন্ন ব্যক্তি, তাই তার প্রার্থিতা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উচ্চ প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তিনটি উপজেলায় তার প্রচারণা ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, কাজী খায়রুজ্জামান শিপনও দীর্ঘদিন ধরে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে শক্ত অবস্থানে আছেন বলে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে।

এছাড়া ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে, যদিও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি।

বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এখনো কেন্দ্র থেকে কোনো চূড়ান্ত ঘোষণা না আসায় স্থানীয় পর্যায়ে প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা সবাই ঘোষণা দিয়েছেন, “দল যাকেই মনোনয়ন দিক, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করবে।”

ভোটার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাগেরহাট-৩ (শরণখোলা–মোড়লগঞ্জ–কচুয়া) আসনে এবারের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

সবমিলিয়ে, এবারের নির্বাচন সহিংসতামুক্ত, উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক মহল।

👁️ 277 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *