কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ বিএনপির দপ্তরে

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, (ফরিদপুর)  :  ছয়বার দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি ও ফরিদপুর-১ আসনের (বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা) নেতা, সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।


বিজ্ঞাপন

সাংবাদিক নির্যাতন থেকে শুরু করে স্থানীয় ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দলে ভেড়ানো, কমিটি বাণিজ্য, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে সংগঠনে বিভাজন সৃষ্টি করছেন।

এতে দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতারা উপেক্ষিত হচ্ছেন, বাড়ছে ক্ষোভ ও বিভক্তি।


বিজ্ঞাপন

নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।
যেখানে ফরিদপুর–১ আসনে ‘দলীয় বিভাজন’ ও ‘হাইব্রিড প্রভাব’ বাড়ার আশঙ্কা তুলে ধরে তদন্তপূর্বক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপি রাজনীতিতে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে কৃষকদল নেতা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। স্থানীয় ত্যাগী নেতাদের অভিযোগ, তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের মোটা অঙ্কের বিনিময়ে বিএনপিতে যোগদান করিয়ে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পদে বসাচ্ছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম অতীতে ছয়বার দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে রাজাকারদের সঙ্গে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন বলে দাবি করা হয়।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির টিকিটে একাধিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত খন্দকার নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতে ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধেও অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে সরকারি রাস্তার গাছ কেটে আত্মসাৎ করার অভিযোগে এলাকায় তিনি ‘গেছো নাসির’ নামে পরিচিতি পান।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গত ১৪ আগস্ট মধুখালীতে বিএনপির এক শান্তি মিছিলে খন্দকার নাসিরের নির্দেশে তার অনুসারীরা হামলা চালিয়ে একাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। ঘটনাটি স্থানীয় গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়।

এছাড়া আওয়ামী লীগের সাবেক ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী মোল্যা, সাবেক যুবলীগ নেতা সৈয়দ মাহফুজ আহমেদ (রেনি), নারী ব্যবসায়ী সোনা মিয়া, বিতর্কিত ব্যবসায়ী সুভাষ সাহা ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এস এম রহমতুল্লাহ— তাদের সবাইকে খন্দকার নাসির বিএনপিতে এনেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এই যোগদানকে কেন্দ্র করে ত্যাগী নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সম্প্রতি স্থানীয় কাদিরদী বাজারে তার বিরুদ্ধে জুতা মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযোগকারীরা বলেন, ‘এমন বিতর্কিত ব্যক্তিদের দলে ঢুকিয়ে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ফরিদপুর-১ আসনে প্রকৃত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মাধ্যমে সংগঠন পুনর্গঠন জরুরি।’

অভিযোগপত্রের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ (রিংকু) ও ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নিকট।

ছয়বার বহিষ্কৃত হয়েছেন  : অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম অতীতে অন্তত ছয়বার দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৭১–এর পর তিনি রাজাকারদের সঙ্গে মিলে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েক বছর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। পরে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগে ঘুরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন।

আওয়ামী লীগের লোকজনকে খন্দকার নাসির বিএনপিতে এনেছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ত্যাগী নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি কাদিরদী বাজারে তার বিরুদ্ধে জুতা মিছিলও হয়।

শামা ওবায়েদকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য : ফরিদপুরে বিএনপির সাবেক মহাসচিব ওবায়দুর রহমান ও দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে ৪ নভেম্বর বিকালে। যদুনন্দী ও পরমেশ্বরর্দী ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আয়োজনে ময়েনদিয়া বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বোয়ালমারী-ময়েনদিয়া রোডে এসে সমাবেশ হয়। এতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

৩০ অক্টোবর বোয়ালমারীতে এক জনসভায় কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম শামা ওবায়েদ সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী ও উদ্দেশ্যমূলক। বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করে সমাবেশে বক্তারা বলেন— নাসিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে স্থানীয় বিএনপিকে দুর্বল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। নেতারা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আহ্বান জানান, নাসিরুল ইসলামকে অবিলম্বে বহিষ্কার করে বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হোক।

শিল্পগ্রুপ থেকে চাঁদা আদায়, সংবাদ সম্মেলন : গত ৪ নভেম্বর কে এইচ কে লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল খন্দকার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা) এলাকায় আমার কোম্পানির নথিভুক্ত খাজনা দিয়ে ক্রয়কৃত পুকুরসহ ১০ একর ৫৮ শতাংশ জমি (দলিল নং-৩৭৩৩, ০৭/০৯/২০১৭) খোন্দকার নাসিরুল ইসলাম (নাসির) ও তার ভাই খোন্দকার নাজিরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী জোরপূর্বক দখল করেছে, তারা আমাকে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির হয়ে দাঁড়াতে ২০ লক্ষ টাকা দাবী করে, অনাবশ্যক চাপ, ভয়ভীতি ও কিশোর–হেলমেট বাহিনীর মাধ্যমে আমার ভাতিজা ও অফিস স্টাফদের ওপর হামলা করেছে।

আমাদের তিনটি সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেছে এবং পুকুরে মাছ ও অন্যান্য সম্পদ দখল করছে; থানায় ওয়ার্ণিং সত্বেও পুলিশ অভিভূত হয়ে মামলা গ্রহণে আগ্রহ দেখায়নি, তাই আমি প্রধান উপদেষ্টা ও দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নজর আকর্ষণ করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি এবং অভিযোগে নামবলি করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

সাংবাদিকের বাড়ি দখলের অভিযোগ : নাসিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সাংবাদিকের বাড়ি ভাঙচুর ও জীবননাশের হুমকির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারী সাংবাদিক খন্দকার আব্দুল্লাহ (তুষার) জানান, জমিজমা বিবাদকে কেন্দ্র করে ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় নাসিরের অনুসারীরা তার বাড়িতে হামলা করে সিসি ক্যামেরা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে, ৫০ হাজার টাকা ও একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে যায় এবং তাদের ওপর প্রাণনাশের হুমকি দেয়; তার মা আফরোজা বেগম এ ঘটনার কথা স্বীকার নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে থানা লিখিত অভিযোগ দেয়।

অভিযোগ বিষয়ে নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথা বলতে চাই না।’

👁️ 172 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *