অটজিম শিশুদের জন্য সরকারের বিশেষ পদক্ষেপ

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে এখনো অনেক শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এসব শিশুদের মধ্যে রয়েছে অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যাগ্রস্থ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা। আর এসব অটিজম শিশুদর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম এন্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিএ্যাবিলিটিজ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে।
দেশের অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজএ্যাবিলিটিজ (এনডিডি) শিশুদের সমাজের মূল¯্রােতধারায় অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে ন্যাশনাল একাডেমি ফর অটিজম এন্ড নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিএ্যাবিলিটিজ শীর্ষক প্রকল্পটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের অটিজম একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা এবং একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশের অটিজম ও এনডিডি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে সমাজে যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আর এ লক্ষ্যে পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় সেক্টর-৮ এর প্লট-৪, ৪ এ এবং ৪ বি- তে ৩.৩৩ একর জমিতে একটি জাতীয় অটিজম একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের সেপ্টেম্বরে জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পটির আরো কিছু বিশেষ উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে অটিজম ও এনডিডি শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূল স্রোতধারায় অন্তর্ভূক্তকরণ; কারিগরি, বৃত্তিমূলক এবং অন্যান্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অটিজম ও এনডিডি শিশুদের উপযুক্ত ও যোগ্য সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা; প্রশিক্ষনার্থী অটিজম ও এনডিডি শিশুদের জন্য আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থা করা; শিক্ষক, সেবাদানকারী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অটিজম ও এনডিডি বিষয়ে সচেতনতাবৃদ্ধি করা এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা; শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এএসডি ও এনডিডি শিশুদের শ্রেনিকক্ষে যুগোপযোগী পাঠদান কার্যক্রম ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; নাচ, গান, খেলাধুলা, চিত্রাংকন ইত্যাদি বিকল্প দক্ষতাবৃদ্ধির মাধ্যমে এএসডি ও এনডিডি শিশুদের সমাজে যোগ্য নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে সহযোগীতা করা এবং অটিজম ও এনডিডি ব্যক্তিদের সমাজে একীভূক্তকরণ ইত্যাদি। এসব উদ্দেশ্য নিয়ে জাতীয় অটিজম একাডেমি গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবেভাবে কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। সরকারের নির্দেশে ইতোমধ্যে অনেকটা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে জাতীয় অটিজম একাডেমি বাস্তবায়নের কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় একাডেমির বেশকিছু পূর্ত কাজ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব বাস্তবায়নাধীন কাজের মধ্যে রয়েছে- অটিজম ও এনডিডি শিক্ষার্থীদের উপযোগী নকশা প্রণয়নপূর্বক আধুনিক ভবন নির্মান করা; ১৫ তলা একাডেমি ভবন নির্মাণ করা; কর্মকর্তা ও পেশাজীবীদের জন্য ১০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ; ১০০ জন ছেলের জন্য ৬ তলা আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ; ১০০ জন মেয়ের জন্য ৬ তলা আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ; ৫০০ আসনবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের অডিটোরিয়াম নির্মাণ এবং বিশেষায়িত খেলার মাঠ ও সুইমিংপুল তৈরি ইত্যাদি। এছাড়া অটিজম ও এনডিডি শিশুদের জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণে ২০২৬ থেকে ২০২০ মেয়াদী একটি কর্মপরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- সতন্ত্র কর্মপরিকল্পনা; রিসোর্স ম্যাপিং ও সক্ষমতা উন্নয়ন পরিকল্পনা ইত্যাদি। এদিকে স্থায়ী একাডেমি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজধানীর সেগুনবাগিচায় একটি অস্থায়ী একাডেমি চালু করা হবে। অস্থায় এই আকাডেমিতে সীমিত পরিসরে সরাসরি সেবা প্রদান করা হবে।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত একাডেমির ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বাস্তবসম্মত জ্ঞান অর্জন; একাডেমির অর্গানোগ্রাম; বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন; শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের প্রক্রিয়া ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে দক্ষতা লাভ; বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মূলধারার শিক্ষায় একীভূতকরণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের লক্ষে পকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সংস্থান।
সরকারের এমন পদক্ষেপে দেশের অটিজম শিশুরা সমাজে একটি মর্যাদা পাবে। দেশের অটিজম ও এনডিডি শিশুদের জন্য এই একাডেমি সমশিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ ও অভিজ্ঞ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রনী ভূমিকা রাখবে।


বিজ্ঞাপন