ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের অনন্য উদ্যোগ

জাতীয়

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে সরকার। এর মধ্যে তথ্য ও প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দশ বছর আগে যা কল্পনা করা যেতো না, এখন সেটাই পরিণত হয়েছে বাস্তবে।


বিজ্ঞাপন

সরকারের এই কার্যক্রমের সঙ্গে রয়েছে দেশের মানুষ। শ্রম দিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। এদের মধ্যে কারো কারো অবদান অনন্য।

তেমন অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ। তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর দেশ গড়তে তার উদ্যোগ নানামুখী।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, দাপ্তরিক কাজে সরকারের সেবাকে সহজ ও দ্রুত করতে মো. মোস্তাফিজুর রহমান সরকারি বিভিন্ন সিস্টেম প্রযুক্তিভিত্তিক ডেভেলপ করেছেন। যার সুবিধা কেবল ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।


বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনার একুশ শতকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। তখন তা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এখন তা বাস্তব।

ইতোমধ্যে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকারি সেবা ও বেসরকারি খাতে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ নবজাগরণ তৈরি করেছে। কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন, দাপ্তরিক কাজ যেদিকে তাকানো যায় দেখা যায় প্রযুক্তির আধিপত্য।

ডিজিটাল বাংলাদেশের এই যাত্রায় ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগ এর মধ্যে মডেল হিসেবে তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিভাগের ‘রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’টি সকল বিভাগে চালু করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এই সিস্টেমের মাধ্যমেই সকল বিভাগের কোভিড-১৯ রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।

কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান এর আগে কর্মরত ছিলেন ‘এটুআই’তে। তখন বেশ কিছু উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। এসব উদ্ভাবনের কারণে জাতিসংঘ ই-মিউটেশন উদ্যোগ বাস্তবায়নের স্বীকৃতি হিসেবে স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠান বিকাশ ক্যাটাগরিতে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল পাবলিক সার্ভিস আওয়ার্ড-২০২০’-এ ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশ। উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য ছয়বার জাতিসংঘের ‘ডব্লিওএএসআইএস’ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ।

বর্তমানে তিনি দাপ্তরিক কাজকে ত্বরান্বিত করতে নানামুখী উদ্ভাবনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনের কোভিড ১৯ রিপোর্টিং সিস্টেম উল্লেখ করার মতো। এই সিস্টেমে সকল বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদকে রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এসব রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া তিনি রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উন্নত করেছেন। এর মাধ্যমে জেলা-উপজেলা থেকে খুব সহযে রিপোর্ট দেওয়া যায়। এতে কর্মক্ষেত্রে বেড়েছে গতি।

তিনি অনলাইনে শূন্যপদ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম উন্নত করে পদায়ন ও বদলির বিষয়টিকে সহজ করেছেন। এই সিস্টেমে সকল কর্মকর্তা ও চাকর্মচারীর প্রোফাইল তৈরি করা হয়েছে। এতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অধীন কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন করতে পারছেন। এক নজরে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তথ্য পাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে পদায়ন, বদলি নৈমিত্তিক ঘটনা। প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করতে গেলে একজন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সময় নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে নতুন কর্মস্থলে এসে অনেক কর্মকর্তাকে সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হয়। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বর্তমান বিভাগীয় কমিশনার, অনলাইন সিস্টেম ডেভেলপ করেছেন। এতে কাছাকাছি ধরনের চ্যালেঞ্জ পূর্ববর্তী কর্মকর্তা কিভাবে মোকাবিলা করেছেন তা সহজে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা তথ্য লেখা থাকার কারণে পরবর্তী কর্মকর্তা এসে সেগুলো পেয়ে যাচ্ছেন।

বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের চ্যালেঞ্জ লিখতে পারছেন। আর এসব পদের বিপরীতে একটি প্রশাসনিক মেমোরিও তৈরি হচ্ছে। এই মেমোরিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা একটি আইডি তৈরি করে কর্মকালীন বিভিন্ন ঘটনা সংরক্ষণ করতে পারেন।

প্রশাসনিক কাজে নিরাপদ ও দ্রুত যোগাযোগের জন্য তিনি বার্তা অ্যাপ ডেভেলপ করেছেন। এর মাধ্যমে যে কোনো বার্তা, ছবি, ভয়েস রেকর্ড দ্রুত পৌঁছানো যায়। ঊর্ধ্বতন ও অধঃস্তন কর্মকর্তাদের মধ্যে এই অ্যাপের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ তৈরি হয়।

মো. মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে অনলাইন শুনানি ব্যবস্থাপনা। প্রশাসকের কার্যালয়, রাজস্ব আদালত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত এবং উপজেলা পর্যায়ে সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসে নামজারি মামলা ও মিস কেস মামলার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর। এর মাধ্যমে আগ্রহীরা চাইলে অনলাইনে শুনানিতে অংশ নিতে পারেন। এর মাধ্যমে সহজেই মামলা নিষ্পত্তি করা যায়।

ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে যোগদান করার পর মোস্তাফিজুর রহমান ই-নথিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সকল শাখায় শতভাগ ই-নথি ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রতি মাসে সেরা কর্মচারী বাছাইয়ের আয়োজনসহ নানাবিধ উদ্যোগের ফসল হিসেবে ঢাকা বিভাগ অষ্টম অবস্থান থেকে পর্যায়ক্রমে চতুর্থ থেকে দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ বাংলাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী ই-ক্লাবের উদ্যোগে শিশু-কিশোরদের জন্য অনলাইন প্লাটফর্মে ‘ই-জিনিয়াস হান্ট অ্যাপ’ উদ্বোধন করা হয়। এ ধরনের সময়োপযোগী ও শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের সার্বক্ষণিক দিক-নির্দেশনা ও প্রশাসনিক সহায়তা দিয়েছেন।

ই-জিনিয়াস হান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ।

আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ই-ক্লাবের সভাপতি শমী কায়সার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। এতে বিভাগীয় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও ই-কমার্স উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শিশু-কিশোরদের এই করোনার সময়ে সৃজনশীল কাজে জড়ানোর উদ্দেশে এই আয়োজন হয়।

এতে করোনাকালীন দুর্যোগ মোকাবিলায় অসামান্য অবদান রাখায় ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে সম্মাননা জানানো হয়।

👁️ 7 News Views