হত্যাযোগ্য করে তোলার অভিযোগে ডিবি হেফাজতে বিতর্কিত সাংবাদিক আনিস আলমগীর : গ্রেপ্তার না হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের আল্টিমেটাম ‘জুলাই ঐক্য’র

Uncategorized অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে প্রকাশ্যে “হত্যাযোগ্য” করে তোলার অভিযোগে অবশেষে ডিবি পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বিতর্কিত সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে। তবে কয়েক ঘণ্টা পার হলেও তাকে এখনো গ্রেপ্তার না দেখানোয় তীব্র ক্ষোভ ও বিস্ফোরক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে গণঅভ্যুত্থানের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম ‘জুলাই ঐক্য’। রোববার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ধানমন্ডি এলাকা থেকে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এরপরই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠে।


বিজ্ঞাপন

আল্টিমেটাম : গ্রেপ্তার না হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার আল্টিমেটাম। জুলাই ঐক্যের সংগঠক ইসরাফিল ফরাজী জানান, “ডিবি হেফাজতে নেওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। অবিলম্বে গ্রেপ্তার না করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে।”

তথ্যসন্ত্রাস’ ও হত্যার উসকানির অভিযোগ : জুলাই ঐক্যের ভাষ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার একনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত আনিস আলমগীর সাংবাদিকতার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে তথ্যসন্ত্রাস চালিয়ে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে—প্রকাশ্যে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, জুলাইয়ের স্পিরিট নিয়ে কটূক্তি, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাযোগ্য করে তোলা এবং জুলাই ঐক্যের দাবি, এসব কর্মকাণ্ড সরাসরি সহিংসতা ও হত্যার উসকানি।


বিজ্ঞাপন

উচ্চপর্যায় ও ভারতীয় লবিস্টদের চাপের অভিযোগ : সবচেয়ে বিস্ফোরক অভিযোগটি এখানেই। জুলাই ঐক্য জানিয়েছে—“আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জেনেছি, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আনিস আলমগীরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতীয় লবিস্টরাও তাকে ছাড়াতে তৎপর।” এই অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।


বিজ্ঞাপন

শুধু আনিস নয়, ‘প্রক্সি নেটওয়ার্ক’ বিচারের দাবি : জুলাই ঐক্য স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে—“শুধু আনিস আলমগীর নয়, ভারতীয় অর্থে যারা বাংলাদেশে তথ্যসন্ত্রাস চালাচ্ছে, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে—সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।” তাদের অভিযোগের তালিকায় উঠে এসেছে—পান্না, আব্দুন নুর তুষার, এম আজিজ এবং শাহেদ আলম, জুলাই ঐক্যের ভাষায়, “যারা টকশোতে বসে জুলাই যোদ্ধাদের হত্যাযোগ্য করে তোলে, তারাও খুনি। এদের বিচার না হলে বাংলাদেশে ভারতীয় প্রক্সিদের ধ্বংস হবে না।”

ডিবির বক্তব্য : এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির একজন ডিসি আমার দেশ-কে জানান—“আনিস আলমগীরকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনা হয়েছে।” তবে ঠিক কোন বিষয়ে—তা স্পষ্ট করা হয়নি।

পুরোনো অভিযোগের পাহাড় : উল্লেখ্য, আনিস আলমগীরের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে—জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে বিশোদগারমূলক বক্তব্য ও পোস্ট জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত গণহত্যার পক্ষে অবস্থান, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা ছাড়ার পর, তার বাড়ি, অভ্যুত্থানের স্মৃতিরক্ষায় নির্মিত গণভবন, জাদুঘর এবং গ্রামীণ ব্যাংকে হামলার আশঙ্কাজনক মন্তব্য।

গণভবন জাদুঘর ধ্বংসের হুমকিমূলক বক্তব্য : সম্প্রতি এক ইউটিউব চ্যানেলে আনিস আলমগীর বলেন— “আমি বেঁচে থাকি কি-না জানি না। আপনি লিখে রাখেন—এই গণভবন আবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হবে। আওয়ামী লীগ বা অন্য কেউ ক্ষমতায় এলে প্রথম যেটা ভাঙবে, সেটা এই স্মৃতি জাদুঘর।”এই বক্তব্যকে সহিংসতার পূর্বাভাস হিসেবে দেখছে বিভিন্ন সংগঠন।

স্বৈরাচারী আমলে সুবিধাভোগীর অভিযোগ : অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫ বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আনিস আলমগীর নানা সুবিধা ভোগ করেছেন। তিনি পরিচিত ছিলেন একজন আওয়ামীপন্থি সাংবাদিক হিসেবে।

শেখ হাসিনার আমলে তিনি দৈনিক আজকের কাগজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন এবং সাম্প্রতিক সময়ে টেলিভিশন টকশোতে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে বারবার আলোচনায় এসেছেন।

প্রশ্ন এখন একটাই :  ডিবি হেফাজতে থাকা আনিস আলমগীরকে আদৌ গ্রেপ্তার করা হবে, নাকি চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে রাষ্ট্র? জুলাই যোদ্ধাদের হত্যাযোগ্য করে তোলার অভিযোগ কি এবার আইনের মুখোমুখি হবে?  পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, সেখানে যেকোনো মুহূর্তে রাজপথ উত্তাল হয়ে উঠতে পারে।

👁️ 16 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *