দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা সারাদেশ স্বাস্থ্য

*অক্সিজেন নিয়ে কাড়াকাড়ি!
*উচ্চ ঝুঁকিতে ঢাকার ১৯ থানা
*করোনায় গড়ে ৭০ জনের মৃত্যু
*কেবল লকডাউনেই কমবে সংক্রমণ!

 

এমএ স্বপন : দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৮শ ২২ জনে। এর আগে গত রোববার দেশে একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ ৭৮ জনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ২০১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৭ জন। এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
করোনাভাইরাস নিয়ে সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, দেশে নতুন রোগী বাড়তে থাকায় মৃত্যুও বাড়ছে। আর কয়েকদিন ধরে যে পরিমাণ নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে- তাতে সামনের সপ্তাহে মৃত্যু আরো বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।
গত এক সপ্তাহ পর দুই দিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজারের নিচে। তবে পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার খুব একটা কমেনি। এখনো রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ঘরে। আর গত দুই দিন ধরে নমুনা পরীক্ষা তুলনামূলক কিছুটা কমেছে।
এদিকে মার্চের মাঝামাঝি থেকে প্রায় প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। তবে গত দুই দিন ৩০ হাজারের কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ।
অন্যদিকে শুরু থেকে রাজধানী ও ঢাকা বিভাগে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি। দ্বিতীয় দফা সংক্রমণে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু আরো বাড়তে দেখা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট মৃত্যুর ৫৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগে হয়েছিল। এক মাস পর গতকালের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ৫৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
সংক্রমণ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলো সরকার। যা লকডাউন হিসেবেই পরিচিতি পায়। রোববার এর শেষ দিন থাকলেও সেটা আরো দুই দিন বাড়ানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সব ধরণের গণপরিবহন ছাড়াও দোকানপাট, শপিং মল বন্ধ থাকার কথা। একই সাথে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে বলা হয়েছিল। তবে কলকারখানা, কাঁচাবাজারসহ কিছু প্রয়োজনীয় দোকানপাট খোলা থাকারও সুযোগ রাখা হয়।
৫ এপ্রিল থেকে সড়ক, রেল, নৌ, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। তবে গণপরিবহন উৎপাদন, সেবার ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হচ্ছে না। বিদেশি ও বিদেশফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হচ্ছে না। অবশ্য এই বিধিনিষেধ দেয়া হলেও গত বুধবার থেকে মহানগরগুলোকে গণপরিবহন চলাচল করতে দেয়া হয়। আর সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস, আদালত, বেসরকারি অফিস কেবল জরুরি কাজ করছে। এছাড়া শিল্পকারখানা ও নির্মাণকাজ চলছে।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ মাস থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সর্বাত্মক লকডাউন দিচ্ছে সরকার। আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হবে।
তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, শুধু মাত্র লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। এর সঙ্গে অন্যান্য পদক্ষেপ যেমন, রোগীদের চিহ্নিত করে আলাদা করতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আইসোলেশন করতে হবে, কারা কারা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন করতে হবে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত আছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৮শ ২২ জনে। এর আগে গতকাল রোববার দেশে একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ ৭৮ জনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ হাজার ২০১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯৫৭ জন। এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
করোনাভাইরাস নিয়ে সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
কেবল লকডাউনেই কমবে সংক্রমণ! :দেশে মার্চ মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬৪ হাজার ৪৯৪ জনের। এপ্রিলের ১০ দিনেই শনাক্ত ৬১ হাজার ১৭৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যের বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, এক সপ্তাহে (৪ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল) শনাক্ত হয়েছে ৪৮ হাজার ৬৬০ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪৪৮ জনের এবং সুস্থ হয়েছে ২২ হাজার ৬০৩ জন।
করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করেছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেড মিলছে না, আইসিইউর জন্য হাহাকার লেগে আছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এভাবে রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে।
সংক্রমণ ঠেকাতে ২৯ মার্চ ১৮ দফা নির্দেশনা দেয় সরকার। ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনের পর আবার ১৪ এপ্রিল এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, দুই সপ্তাহ ‘পূর্ণ লকডাউন’-এর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটি বলছে, পূর্ণাঙ্গ লকডাউন ছাড়া করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনই সংক্রমণ বন্ধের অন্যতম উপায়। যখন পাবলিক মুভমেন্ট অনেক বেড়ে যায়, তখন সংক্রমণ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়। তাই লকডাউন লাগবেই। পাশাপাশি রোগী শনাক্ত, আইসোলেশন ও রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করাও জরুরি।
জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ১৮ দফা নির্দেশনা মানুষ মানছে না। এ কারণেই কমিটি দুই সপ্তাহ লকডাউনের সুপারিশ করেছে।
অধ্যাপক ড. সহিদুল্লা বলেন, বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার এলাকাগুলোয় এ লকডাউনের সুপারিশ করা হয়েছে। দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে এসব এলাকায় সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবারও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
ভাইরাসের ট্রান্সমিশন বন্ধ হওয়ার অন্যতম পথ হচ্ছে লকডাউন। এমন মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল। তিনি বলেন, রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা প্রয়োজন। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করলেও সংক্রমণ ছড়াবে।
রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা এবং মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এর আগে যেসব এলাকায় লকডাউন দেওয়া হয়েছিল তাতে দেখা গেছে, সেখানে সংক্রমণ বাড়তে পারেনি। লকডাউনের ফলে যদি সবাই ঘরে থাকে তবে সংক্রমণ কমবেই।
একই কথা জানিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ চিন্ময় দাস বলেন, যদি প্রকৃতপক্ষেই কঠোর লকডাউন মানতে পারি, তবে সংক্রমণ কমবেই। এটা প্রমাণিত সত্য।
অক্সিজেন নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি! : ৫৫ বছরের শাহজাহান আলী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন। তার ১৫ লিটার করে অক্সিজেন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অক্সিজেন লেভেল কমে চলে আসে ৭৫ শতাংশে। অন্য রোগীর কাছ থেকে অনেকটা জোর করেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা খুলে অক্সিজেন দেওয়া হয় শাহজাহান আলীকে।
দেশে করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেডই পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হয়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যান তাদের বেশিরভাগেরই দরকার হচ্ছে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন। এর জন্য দরকার হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার।
কিন্তু এই ক্যানুলার সংখ্যা দেশে একেবারেই অপর্যাপ্ত। এটি পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকলে রোগীদের আইসিইউতে যাওয়ার হার কমানো যায়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণ সিলিন্ডারে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের দরকার হয় তাদের ৫০ ভাগ সুস্থ হয়ে যান ১৫ লিটারের মধ্যেই।
কিন্তু এরপরও যাদের দরকার হয়, তাদের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা যন্ত্র লাগে। ওটা দিয়ে ৮০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া যায়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন আইসোলেশন ওয়ার্ড-এ দায়িত্বরত ডা. শাহরিয়ার খান বলেন, হাসপাতালে ৬০-৭০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন করোনা রোগী ভর্তি আছেন প্রায় এক হাজার। দেখা যাচ্ছে অনেক রোগীর হঠাৎ করেই অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তখন মেশিন নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। তুলনামূলক একটু ভালো রোগীর স্বজনকে বুঝিয়ে যার বেশি প্রয়োজন তাকে দিতে হচ্ছে। তবে এ নিয়ে হাসপাতালে চিৎকার চেঁচামেচি লেগেই আছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, কোনও কারণে যদি হঠাৎ কারও অবস্থা ভালো হয়, তাকে বুঝিয়ে যার অবস্থা বেশি খারাপ তাকে ক্যানুলা দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। কিন্তু এটা সমাধান নয়। আইসিইউতেও এই একই যন্ত্র দিয়ে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। আর একদম শেষ পর্যায়ে গেলে তবেই রোগীকে ভেন্টিলেশনে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা) দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বিভাগীয় শহরগুলোতেই পর্যাপ্ত নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তো চিন্তাই করা যায় না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সারাদেশে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ১১৫৮টি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ৯৫৮টি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চিকিৎসক জানান, গত পরশু সন্ধ্যা থেকে চারজন রোগী এলো যাদের স্যাচুরেশন ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ। সকলকেই হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া দরকার। অথচ কোনও মেশিন খালি নেই।
অধিকাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃদু বা মাঝারি লক্ষণ দেখা যায়। কারও আবার কোনও লক্ষণই দেখা যায় না। খুব অল্প সংখ্যকেরই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হয়। পর্যাপ্ত হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই থাকলে তাদের ভেতর থেকে হাতেগোনা দুয়েকজনের আইসিইউ লাগে।’ এমনটা জানালেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান।
৮০ লিটার অক্সিজেন দিয়ে সংকটাপন্ন রোগীদের শতকরা ৯০ শতাংশকেই কাভার করা যায় বলে মন্তব্য করেন প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, অধিকাংশ রোগীকেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এবং হাই মাস্কসহ অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে ম্যানেজ করা যায়। যেহেতু অধিকাংশ হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আইসিইউতেই আছে, এ কারণে আইসিইউর দরকার হচ্ছে বেশি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর অনুপাতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল এবং হাই ফ্লো ক্যানুলার লাইন থাকতে হবে। এমনটা জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, সে হিসেবে আমরা অনেক ওভারলোডেড। এ হাসপাতালে প্রায় ১০০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫টি সবসময়ই চলছে।
নতুন রোগী এলে দেখা যাচ্ছে তার কিছুক্ষণ পরেই তার হাই ফ্লো ক্যানুলা লাগছে। এখানে স্বল্পতা থাকলেও থাকতে পারে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ইচ্ছে থাকলেও ১০০-এর জায়গায় ১৫০ মেশিন বানানো সম্ভব নয়। কারণ এখানে অক্সিজেন সাপোর্টেরও একটা বড় ব্যাপার রয়েছে। আর আমরা তো এখন সেটা নিয়েও হিমশিম খাচ্ছি।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান জানান, এখন রোগীদের এতো অক্সিজেন দরকার হচ্ছে যে সংকট লেগেই আছে। এ হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ২০টি। তার মধ্যে কয়েকটি আবার কাজ করে না। ১২-১৩টি ঠিক আছে।
অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, ক্যানুলা চালানোর মতো সবাই দক্ষ নয়। চালাতে না পারার কারণেও নষ্ট হয়েছে কিছু।
তবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার জন্য ইতোমধ্যেই হাসপাতাল তার চাহিদা জানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩০টি মেশিনের জন্য ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হয়তো এরমধ্যে চলে আসবে।
করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে ঢাকার ১৯ থানা : ঢাকার ১৯টি থানা করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব থানায় শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে। তবে এরমধ্যে রূপনগর ও আদাবরে শনাক্ত রোগী সবচেয়ে বেশি। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (আইএসএস) আইইডিসিআর এই তথ্য জানিয়েছেন।
আইইডিসিআর বলছে, রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের রূপনগর থানা এলাকায় শনাক্তের হার ৪৬ শতাংশ এবং আদাবর থানা এলাকায় শনাক্তের হার ৪৪ শতাংশ। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সংক্রমণের হার উত্তরের চেয়ে বেশি।
এদিকে সারাদেশে সংক্রমণের গড় হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ হলেও রাজধানীর অন্তত ১৭টি স্থানে সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশেরও বেশি পাওয়া গিয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আরও ২৩টি এলাকায় সংক্রমণের হার ২০ শতাংশেরও বেশি।
রাজধানীর রূপনগর ও আদাবর ছাড়া যেসব থানায় সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের বেশি, সেই থানাগুলো হল-শাহ আলী, রামপুরা, তুরাগ, মিরপুর, কলাবাগান, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মুগদা, গে-ারিয়া, ধানম-ি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, চকবাজার, সবুজবাগ, মতিঝিল, দারুসসালাম ও খিলগাঁও।
সংক্রমণের হার ২১ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে আছে-এমন থানাগুলো হচ্ছে- শাহবাগ, বংশাল, লালবাগ, শাহজাহানপুর, রমনা, কামরাঙ্গীরচর, শ্যামপুর, বাড্ডা, বনানী, উত্তরখান, শেরে বাংলা নগর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, পল্লবী, কাফরুল, ডেমরা, ওয়ারী, ভাটারা, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, কদমতলী, উত্তরা পূর্ব ও পল্টন থানা এলাকা।


বিজ্ঞাপন