কী আছে ডিআইজি মিজানের ভাগ্যে!

অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ প্রদানসহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক ডিআইজি মিজানুর রহমান। গত বছর নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা দিয়েই প্রথম আলোচনায় আসেন ডিআইজি মিজান। এরপর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে থলের বিড়াল।
নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগের সত্যতা মিলে। তারই সূত্র ধরে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তদন্ত চলাকালীন অবস্থাতেই দুদকের এক কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে ঘুষ দেয়ার ব্যাপারটি স্বীকার করেন। আর এই ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন ডিআইজি মিজান। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনাটি। সব মিলিয়ে শেষ রক্ষা আর হচ্ছে না। গ্রেফতার হতে পারেন তিনি!
এদিকে, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগের তদন্ত শেষ হতে না হতেই নতুন করে দুদক কর্মকর্তাকে ঘুষ প্রদানের প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তিতে বিব্রত পুলিশ সদর দফতরও।
পুলিশ সদরদফতরের একাধিক সূত্র বলছে, মোটা অংকের ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাময়িক বরখাস্তসহ ফৌজদারি মামলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। তারই ধারাবাহিকতায় পুলিশ সদর দফতর থেকে মিজানের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী জানান, ডিআইজি পদমর্যাদার একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে পুলিশ সদরদফতর সরাসরি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না। এই জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রয়োজন হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে ডিআইজি সাময়িক বরখাস্তের একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী, পদস্থ কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে হলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে।
সূত্র বলছে, যদি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন মেলে, তাহলে ঘুষ লেনদেন করায় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবে দুদক, না হয় পুলিশ সদর দফতর। আর সে মামলাতেই গ্রেফতার হবেন ডিআইজি মিজান।
অন্যদিকে, ডিআইজি মিজানের এমন অপরাধের বিষয় পুলিশ সদর দফতরের ত্রৈমাসিক অপরাধবিষয়ক সভাতেও উঠে এসেছে বলে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) শাহাবুদ্দিন কোরেশী বলেন, ‘ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) থাকাকালে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত করেছি। ওই তদন্তে কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কয়েকটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। খুব সম্ভবত প্রতিবেদনটি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো ডিআইজি মিজানের ওই সাময়িক বরখাস্তের প্রস্তাবটির সঙ্গে শাহাবুদ্দিন কোরেশীর তদন্ত প্রতিবেদনও পাঠানো হবে।
সার্বিক বিষয়ে পুলিশ সদরদফতরের সহকারী মহা-পরিদর্শক সোহেল রানা জানান, ডিআইজি মিজানের বিষয়টি পুলিশ সদরদফতর নানাভাবে খতিয়ে দেখছে। পুলিশ সদরদফতর তার আগের অবস্থানেই আছে। এই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।
সর্বশেষ শনিবার (২২ জুন) একই বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আইনের ফাঁক গলে যাতে বেরিয়ে যেতে না পারে সে জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *