আন্দোলন করছে করুক আন্দোলন ভালো জিনিস

এইমাত্র জাতীয় রাজধানী রাজনীতি

বিশেষ প্রতিবেদক : সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। এখন জন্মনিবন্ধন হয়। বয়স লুকানো যায় না। কাজ করার সময় থাকে। এনার্জি থাকে। দাবি তোলার জন্য যদি তোলা হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তারা আন্দোলন করছে করুক। আন্দোলন ভালো জিনিস। আন্দোলন করলে রাজনীতি শেখা যায়।
চীন সফর শেষে গণভবনে সোমবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দাবি তোলার জন্য নিশ্চয়ই কোথাও থেকে তারা প্রেরণা পাচ্ছেন। কিন্তু তার পরিণতিটা কী দাঁড়াবে? চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা হলে ট্রেনিং শেষে চাকরিতে ৩৭ বছর বয়সে জয়েন। কিন্তু চাকরি ২৫ বছর না হলে তো তারা ফুল পেনশন পাবে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যায়। যারা যুবক যারা মেধাবী কর্মক্ষমতা ভালো তাদের দিয়েই তো কাজ করাতে হবে। তাদের দাবির বিষয়টি দেশবাসী বিচার করুক।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনটি বিসিএস পরীক্ষার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২৯ বছর বয়সী যারা বিসিএস পরীক্ষায় পাসের হার তাদের কম।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একসময় ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। আমি নিজেও ঢাবির ছাত্রী। এর একটা ঐতিহ্য ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছাড়া কিছু ছিল না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বেশি ছাত্র-ছাত্রী। একটা ক্লাসে কতজন বসতে পারে। সিট সংখ্যা ৪৫-৫০। সেখানে ৬০ জন্য বসতে পারতো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা প্রতিটি জেলায় জেলায় বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে দেখলাম কেউ বিজ্ঞান পড়ে না। ১২টি করে দিয়েছি। বিশ্বটাই হয়ে গেছে প্রতিযোগিতামূলক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সুনাম আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যা করণীয় তা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে চীন। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রশ্নে চীনা প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের এমন কোনও তথ্য আছে কিনা, যা বাংলাদেশের জন্য সুখবর বিবেচনা করা যেতে পারে?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, বিষয়টি দেখবেন, বিবেচনা করবেন, এটা কি সুখবর মনে হচ্ছে না? নাকি দুঃখের খবর মনে হচ্ছে?’
তিনি বলেন, এটা ঠিক যে চীন বরাবরই মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা যে একটা সমস্যা, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারছেন। তারা সবসময় মনে করছেন বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত। এজন্য তাদের যা করণীয় তারা তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে গত ১ জুলাই বেইজিং যান প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে গত শনিবার তিনি দেশে ফেরেন।
চীন প্রথম সফরে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডালিয়ানে সামার ডাভোস নামে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্রীষ্মকালীন সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং বৈঠক করেন ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াবের সঙ্গে। এরপর ডালিয়ান থেকে বেইজিং পৌঁছান তিনি।
বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলে পৌঁছলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা, গার্ড অব অনার ও তোপধ্বনির মাধ্যমে উঞ্চ অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তারা।
চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা ও একটি লেটার অব এক্সচেঞ্জে সই করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে দেওয়া চীনের প্রধানমন্ত্রীর নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। এরপর বিকেলে চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার দুপুরের পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কিত মিনিস্টার সান তাওয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিয়েন আন মেন স্কয়ারে চীনের জাতীয় বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।
চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি ঝাংসুর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে বেইজিংয়ের দিয়ায়োতাই স্টেট গেস্ট হাইজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং শি চিনপিংয়ের দেয়া নৈশভোজেও অংশ নেন তিনি।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
সরকার শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার দেশব্যাপী প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ শিক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করে যাচ্ছে, এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অর্থের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিজিওনাল সেমিনার অন ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রোটেকশন’ শীর্ষক চার দিনের এক সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিকভাবে পলিসি সাপোর্ট, আইনগত সংস্কার, অবকাঠামো র্নিমাণসহ নানাবিধ সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম দূর করে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে।
পুঁজিবাজারে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের পুঁজিবাজার এখনও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীল। তিনি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে দৈনন্দিন লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটি দক্ষ বিনিয়োগ গোষ্ঠী গড়ে তুলতে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে ‘বাংলাদেশ অ্যাকাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি হ্রাস করতে বিএসইসি দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এ কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এর আওতায় বিভাগীয় শহরগুলোতে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে তা সব জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হবে।
পুঁজিবাজারে খেয়াল খুশিমতো বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে তিনি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মূলত, বিনিয়োগকারীরাই হলো বাজারের মূল চালিকাশক্তি। তাই তাদের সচেতনতার বিষয়টি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ার অন্যতম পূর্বশর্ত।
তিনি বলেন, জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন প্রত্যেকের বিনিয়োগ ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে নিশ্চিত হয় বাজারের স্থিতিশীলতা।
এই বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে দেশব্যাপী বিনিয়োগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর জোর দেয়, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীসহ, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের বিনিয়োগ দক্ষতা ও কলাকৌশল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ত্বরান্বিত করবে।
এতে অন্যান্য প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার দিকটি অধিকতর নিশ্চিত হয়ে বিকশিত একটি পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে এবং এই পুঁজিবাজার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেমিনারে ভারত, জাপান, ফিলিপিন্স, নেপাল, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং আইসল্যান্ডের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. মো. খায়রুল হোসেন বক্তৃতা করেন। সেমিনারে দেশের উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। বাসস


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *