জলবায়ু অভিযোজনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বাংলাদেশ

অর্থনীতি আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ‘অলৌকিক’ হিসেবে বর্ণনা করে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন বলেছেন, জলবায়ু অভিযোজনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক এ দেশ।  বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’ বিষয়ে ঢাকা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন ও এর প্রভাব মোকাবেলায় ধারণার উন্নয়নে গঠিত এ কমিশনের চেয়ারম্যান বান। তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় এসেছি, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ও দুরদর্শিতা থেকে শিখতে। জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) বলছে, সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা আর যদি একমিটারও বাড়ে তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকার পানির নিচে তলিয়ে যাবে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ফনিতে ১২ জনের প্রাণহানির সঙ্গে পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণ নেওয়া ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের তুলনা করেন বান কি-মুন। তিনি বলেন, যথার্থ আবহাওয়া পূর্বাভাস, কমিউনিটিভিত্তিক পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও সাইক্লোন সেন্টার থাকার ফলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই ১৬ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে। অভিযোজন অনুশীলনে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার যে নেতৃত্ব অর্জন করেছে তা অলৌকিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন করে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যে প্রজ্ঞা ও কার্যকারিতার উদারহরণ দেখিয়েছে, তা আমাদের সবাইকে অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি বলেন, অভিযোজনের প্রসঙ্গ যখন আসে তখন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের অগ্রভাগে থাকা আমাদের শেষ্ঠ শিক্ষকরা তাদের দুয়ার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের তুলনায় বিশ্বের বাকি দেশের অনেক কিছু শেখার আছে। এভাবেই অভিযোজনের বিষয়ে শেখার জন্য বাংলাদেশ সর্বশেষ্ঠ। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে জাতীয় অভিযোজনের কর্মপরিকল্পনা সৃষ্টি করে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হয়েছিল। এই উদ্বোধনী সম্মেলনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার অত্যন্ত ভালো আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বান বলেন, আমরা ঢাকায় একটা অভিযোজন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ১০ দিন আগে আমরা চীনের বেইজিংয়ে একটি অভিযোজন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। এই সম্মেলনের জন্য ঢাকাকে বেছে নেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অনেক দেশ আছে যেগুলো বাংলাদেশের নাজুক। কিন্তু তাদের নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা নেই। নেদারল্যান্ডসের সাহায্যে ডেল্টা প্লান ২১০০ এর আওতায় দুর্যোগ মোকাবেলাসক্ষমতায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদাহরণ তুলে ধরেন তিনি। এসব অভিযোজন অনুশীলন বিনিময় করতে হবে। যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর সহায়তায় আমরা জরুরি ভিত্তিতে ব্যয়সাশ্রয়ী উপায়ে পদক্ষেপ নিতে পারি। ভাবনার চেয়ে অনেক অনেক দ্রত গতিতে জলাবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নষ্ট করার সময় নাই। এবিষয়ে তার কমিশন শিগগিরই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা হবে অনন্য প্রতিবেদন। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। এটা হবে কর্মমুখী। কীভাবে আমরা আসন্ন জলবায়ু মোকাবেলা করব, অভিযোজনের মাধ্যমে কীভাবে আমরা ব্যয় সাশ্রয়ী হতে পারি সেবিষয়ে এখানে তুল ধরা হবে। কমিশনের কো-চেয়ার ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা উদ্বোধী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এই সম্মেলন থেকে জাতিসংঘের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনের বিষয়ে সুপারিশমালা তৈরি করা হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *