স্বস্তিতে আ’লীগ

এইমাত্র জাতীয় রাজনীতি

নুসরাত হত্যা মামলার বিচার

বিশেষ প্রতিবেদক : ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ১৬ আসামির মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। বহুল আলোচিত এ হত্যাকা-ের বিচার নিয়ে বুধবার থেকেই বেশ উৎকণ্ঠিত ছিল গোটাদেশ। সন্দেহ, সংশয় উদ্বেগ যেমন ছিল তেমনি ন্যায় বিচারের প্রত্যাশাও ছিল সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে রায় ঘোষণার পর এ সংক্রান্ত ‘সমস্ত নেতিবাচক’ মনোভাব দূর হয়ে যায়। আর এ বিষয়টিতেই স্বস্তিতে আছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল।
রায়ের পর সরকারের তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিচার প্রক্রিয়াটা ত্বরান্বিত হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে, এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বস্তি প্রকাশ করছি।
নুসরাত হত্যা মামলার বিচার দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে যে অনাস্থার কথা বিরোধী শিবির থেকে বলা হয় সেটিকে দূর করতে সাহায্য করবে বলে মনে করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
নেতাকর্মীদের মতে, এ রায় দুর্নীতি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকেই আরও স্পষ্ট করবে। শেখ হাসিনার আমলে অন্যায় করে যে পার পাওয়া যায় না সেই ধারণাকে আরও প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে। নুসরাত হত্যা মামলার বিচার যে দ্রুততার সঙ্গে হয়েছে সেটিও দ্রুত বিচার নিশ্চিতে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে একটা বিষয় স্পষ্ট যে অন্যায়কারীদের ব্যাপারে নেত্রী খুব কঠোর। এমন সময়ে অনেকটা নিরবেই নুসরাত হত্যা মামলার রায় হল। এই মামলার অনেক আসামি প্রভাবশালী ছিল। কিন্তু কাউকেই ছাড় দেওয়া হয় নি। সেটি সবচেয়ে বেশি ইঙ্গিতপূর্ণ। আর সে ইঙ্গিতটা হলো-কোন ছাড় নেই।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, এই বিচার প্রমাণ করে- বিচ্ছিন্ন যে কয়েকটা চাঞ্চল্যকর হত্যাকা- ঘটেছে সেগুলোর বিচারের ক্ষেত্রে কোন ছাড় নেই। বিচার প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করতে শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেটাও আমরা দেখতে পেলাম।
তিনি আরো বলেন, নুসরাতের রায়ের ভেতর দিয়ে দেশবাসী খুশি, সরকার খুশি, আমরা খুশি। আমাদের প্রত্যাশা এমন করে অন্যান্য হত্যা মামলার রায়ও দ্রুততম সময়ে শেষ হবে। তবে নুসরাত হত্যা মামলার বিচার সরকার ও আওয়ামী লীগকে আপাতত স্বস্তি দিলেও অস্বস্তির আরও অনেক বিষয় এখনো বাকী আছে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, অনেক অনেক নেতিবাচক ঘটনার দুনিয়ায় এই বিচার হয়ত তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আরো যেগুলো অস্বস্তি আছে সেগুলোর বিচার কী হবে? ফেনীর ঘটনায় ওসি, এসপি তাদের কী বিচার হবে? এমনকি এই ঘটনা নিয়ে যারা লেখালেখি করেছে তাদের নামে মামলা হয়েছে তাদের বিচারে কী হবে?
তিনি বলেন, জনগণের প্রত্যাশা এই ঘটনায় জড়িত প্রতিটা মানুষ তাদের অপরাধের মাত্রা অনুসারে শাস্তি পাবে। কেননা দেশে এখন সম্রাটদের শাসন চলছে। অধ্যক্ষ সিরাজও তো এক ধরনের সম্রাট ছিল।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়। ৬ এপ্রিল আলিম আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদরাসার কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।
স্থানীয় প্রভাবশালীরা মামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশ সদর দফতর থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২৯ মে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই। ১০ জুন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার শুনানি শেষ হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর।
বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।


বিজ্ঞাপন
👁️ 1 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *