
আখাউড়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকায় নামমাত্র শ্রম আর স্বল্প পুঁজিতে উচ্চমূল্যের মসলা জাতীয় কাঁচামরিচ বস্তায় চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শাহজাহান মিয়া নামে এক কৃষক।

বাড়ি সংলগ্ন জায়গাতে অন্য নানা প্রকারের শাক সবজির পাশাপাশি পরীক্ষামূলক প্রায় শতাধিক বস্তায় এ চাষ করে তিনি বেশ সাফল্য পেয়েছেন। তার এই সাফল্য দেখে অনেকেই এ চাষে ঝুঁকছেন।
কৃষি অফিস জানায়, বস্তায় কাঁচামরিচ চাষ খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। এ চাষের জন্য আলাদা করে জমির প্রয়োজন হয় না, জৈব সার মিশিয়ে খোলা জায়গা, পতিত জমি, ছাদে, বাড়ির আঙিনায় ও সড়কের পাশে বস্তায় এ চাষ করা যায়। খরচ এবং রোগবালাই কম হয়।

কৃষক শাহজাহান বলেন, কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ৩ বিঘা জমিতে মৌসুম অনুযায়ী বছর জুড়ে লাউ, চিচিঙ্গা, বেগুন, ঢেঁড়স, কাঁচামরিচ,লালশাক, পাটশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক, পালং শাকসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছি। বছরে ওইসব থেকে যাবতীয় খরচ বাদে ৩লাখ টাকার উপর আয় হয়।

তিনি বলেন এ মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কাঁচামরিচ উৎপাদন অনেকটাই ব্যাহত হয়। এ কারণে মসলাজাতীয় পণ্যটির দামও বেড়ে যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে কিভাবে কাঁচামরিচ চাষ করা যায় এ নিয়ে কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা নেওয়া হয়। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে গত প্রায় দুই মাস আগে প্রায় শতাধিক বস্তায় কাঁচামরিচ চাষ করি।
একেকটি বস্তায় ১৫ থেকে ২০ কেজি মাটি দিয়ে পরিমাণ মতো জৈব সার মিশিয়ে প্রতি বস্তায় একটি চারা রোপণ করি। প্রতি বস্তায় খরচ হয় ১৫ টাকার উপর। কিছু দিনের মাথায় গাছ যখন বড় হতে থাকে তখন মনে আশার সঞ্চার হতে থাকে। তিনি আরও বলেন বস্তায় মরিচ চাষে সার ও জৈব সার অপচয় হয় না। বস্তার ভেতর থেকে উর্বরা শক্তি বেশি পায়। মরিচের ফল তুলনামূলক ভালো হয়েছে।
আশা করছি প্রতি গাছ থেকে এক কেজির মতো মরিচ পাবো। যা থেকে প্রায় ১শ কেজি ফলন উৎপাদনের আশা করছি। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মরিচ ৩০০ টাকার উপর বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর ভালো থাকলে এ চাষে দ্বিগুনের উপর লাভবান হবো।
সরেজমিনে পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অন্যান্য সবজির পাশাপাশি সারি সারি বস্তায় লাগানো আছে কাঁচামরিচ গাছ। গাছগুলোও বেশ সুন্দর আর সতেজতা হয়ে উঠেছে। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচামরিচ। পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক শাহজাহান।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: ইয়াসিন মিয়া বলেন, বস্তার মধ্যে মরিচ চাষ যখন শুরু করে তখন ভেবেছিলাম এভাবে মরিচ হয় কি না। মনে হয় খালি জায়গাতে পরিশ্রম করছে। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারনা ভূল ছিল। কাঁচামরিচ অনেক ভালো হয়েছে। এখন আমিও এভাবে চাষ করার চিন্তা করছি।
আখাউড়া উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে বস্তায় কাঁচা মরিচ চাষে কম খরচ লাভ বেশী হয়। তবে এ চাষে আলাদা জমির দরকার নেই। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। এ চাষ করতে কৃষককে বস্তা,সারসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন এ চাষ করতে হলে বস্তার মাটি হতে হবে উর্বর। ভালো মাটি ও সার থাকলে বস্তায় ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
