দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় ৫ সাংবাদিকের নামে যমুনা লাইফের মামলা

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক  : দুর্নীতি, অনিয়ম ও গ্রাহক হয়রানির সংবাদ প্রকাশের জেরে পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের দাবি, এই মামলা তথ্যভিত্তিক সাংবাদিকতা রুখতে এবং প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ঢাকতে দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

সোমবার (২১ জুলাই) বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া এক লিখিত চিঠিতে এ অভিযোগ করেন সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন, রাসেল মাহমুদ ও সাইফুল ইসলাম। এতে তারা দাবি করেন, মামলা দায়েরের মাধ্যমে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।

চিঠিতে বলা হয়, অর্থনীতি বিষয়ক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইকোনমিবাংলা ডটকম-এর সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার শাহাদাত হোসেন, বাণিজ্য বার্তার সম্পাদক, সিনিয়র রিপোর্টার রাসেল মাহমুদ এবং দৈনিক সবুজ বাংলাদেশের সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদসহ মোট পাঁচজন সাংবাদিককে আসামি করে যমুনা লাইফ কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে।


বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকদের দাবি, এ মামলার পেছনে রয়েছেন যমুনা লাইফের বিতর্কিত সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল। যিনি এর আগেও অন্যান্য বীমা কোম্পানিতে দায়িত্ব পালনের সময় একাধিক সাংবাদিকের নামে মামলা করেছিলেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “যেখানে মন্ডল, সেখানেই মামলা”।


বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকদের ভাষ্য মতে, ২০২৪ সালে এক গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে যমুনা লাইফের নানা অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে একাধিক গণমাধ্যম। এসব প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বদরুল আলমের নেতৃত্বের অযোগ্যতা, অবৈধ সিইও’র বিতর্কিত ভূমিকা, আর্থিক বিভাগে সিন্ডিকেট চক্র, ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি, ও গ্রাহক হয়রানির বিষয়গুলো উঠে আসে।

এতসব তথ্য প্রকাশের ৭ মাস পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হঠাৎ করে মামলা দায়ের করা হয়। অথচ মামলার আগে কোনো উকিল নোটিশ, প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ বা সাংবাদিকদের বক্তব্য নেওয়ার ন্যূনতম আইনি প্রক্রিয়াও অনুসরণ করেনি যমুনা লাইফ কর্তৃপক্ষ।

সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমি বা আমার সম্পাদক কখনো যমুনা লাইফ অফিসে যাইনি। কোনো কর্মকর্তার সঙ্গেও যোগাযোগ হয়নি। অথচ আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করা হয়েছে। এটা যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা সহজেই অনুমেয়।”

বাণিজ্য বার্তার সিনিয়র রিপোর্টার রাসেল মাহমুদ বলেন, “যমুনা লাইফের এক কর্মকর্তার অনিয়ম ও প্রতারণা নিয়ে গ্রাহকের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি সংবাদ প্রকাশ করেছি। প্রকাশিত সংবাদে কোনো তথ্য ভুল বা অসত্য হলে প্রতিবাদ দেওয়ার সুযোগ থাকে। যমুনা লাইফও প্রতিবাদ দিয়েছিল। বাণিজ্য বার্তা সেই প্রতিবাদও সংবাদ আকারে প্রকাশ করে। এরপরও অভিযুক্ত ব্যক্তি অসন্তুষ্ট থাকলে প্রেস কাউন্সিলে যাওয়ার সুযোগ ছিলো। কিন্তু তারা সে পথে না গিয়ে মামলা দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। এভাবে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা যাবে না।”

চিঠিতে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে আরও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হোমল্যান্ড লাইফে দায়িত্ব পালনের সময়ও বিশ্বজিৎ মন্ডল একই কৌশলে সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মীদের হয়রানি করেছিলেন। সেই একই পন্থা এখন যমুনা লাইফেও অনুসরণ করছেন তিনি।

আইডিআরএ’র এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, “বীমা খাত এমনিতেই নানামুখী সংকটে রয়েছে। এ অবস্থায় সাংবাদিকদের নামে মামলা খাতটিকে আরও বিতর্কিত করবে। যমুনা লাইফের আচরণ সুশাসন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের পরিপন্থী।”

যমুনা লাইফের চেয়ারম্যান বদরুল আলম অবশ্য মামলার বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “মামলার জন্য পরিচালনা পর্ষদের কোনো সিদ্ধান্ত বা অনুমোদন নেওয়া হয়নি। কে বা কারা মামলা করেছে—তা খতিয়ে দেখছি।”

ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা এ ঘটনায় ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আয়কর গোয়েন্দা বিভাগ, আইডিআরএ এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে যমুনা লাইফের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের ব্যর্থতা এবং মামলাবাজ সিইও’র বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

👁️ 2 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *