নিজস্ব প্রতিবেদক : গুলশানস্থ কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম স্কুল(সিটিএস) ও মালিবাগ ও ওয়ারিস্থ কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (সিটিআইএস) এর এমডি মাহমুদুর রহমান পিয়াল এর বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষিকা ও নারী কর্মকর্তাদের যৌন হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, স্কুলের প্রায় ৮০ ভাগ স্টাফ নারী। নিয়োগ দেয়ার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার স্থলে গুরুত্ব দেয়া হয় সৌন্দর্য ও যৌনতার ক্ষেত্রে উদারতাকে।
যে নারী কর্মী এমডি মাহমুদুর রহমান পিয়ালের কথায় সায় দিয়ে নিজেকে সমর্পণ করে, তার বেতন বৃদ্ধি করে, যোগ্যতার বাহিরে পদোন্নতি দেয়। আর যে নারী কর্মী পিয়ালের কথায় সায় না দেয়, তার বেতন কমিয়ে দেয়। মানুষিক ভাবে হয়রানি করে। এক পর্যায়ে অপমান অপদস্থ করে কোন পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা নিয়মিত রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বাহিরে কেবল সৌন্দর্য ও যৌন সম্পর্কে উদারতাকে বিবেচনায় নিয়ে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হচ্ছে, স্কুলের বর্তমান ভাইস প্রিন্সিপাল পাকিস্তানী নাগরিক আয়েশা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটিএস এর একজন নারী কর্মকর্তা বলেন, আয়েশা স্কুলে যোগদান করেছেন শিক্ষক সহকারী হিসেবে। চাকরির জন্য তার যখন ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম, তখন শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেখাতে পারেনি। যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই কেবল সৌন্দর্য ও এমডির সাথে বিশেষ সম্পর্কের কারনে একজন টিচার এসিস্ট্যান্ট কে ভাইস প্রিন্সিপাল বানিয়েছে। যা দেশের ইতিহাসে বিরল।
এমডির সাথে ভাইস প্রিন্সিপালের বিশেষ সম্পর্কের কোন আছে কি না জানতে চাইলে ঐ নারী কর্মকর্তা বলেন, তারা কি বিশেষ সম্পর্ক স্কুলের সিসিটিভির আওতায় আমাদের সামনে করে নাকি বিশেষ মুহূর্তের ভিডিও করে রাখে যে আপনাকে এর প্রমাণ দিতে পারবো।
কেউ বিশেষ মুহূর্তের প্রমাণ রাখেনা।এটা নানা উপসর্গ দেখে বুঝতে হয়।
পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে ঐ নারী কর্মকর্তা প্রতিবেদক কে বলেন, যার শিক্ষক হবার যোগ্যতা ছিল না, তাকে কোন স্বার্থে ভাইস প্রিন্সিপাল বানানো হয়েছে? আয়েশার স্বামী জিয়া মাদ্রাসার দাখিল পাস। দুবাইয়ে আয়েশা ও তার স্বামী জিয়া গৃহকর্মীর কাজ করতেন। অথচ জিয়া কে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রিক্রুট ম্যানেজার বানানো হয়েছে।
এটা আয়েশার সাথে এমডির ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনেই করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। আয়েশার অপছন্দ হবার কারনে অনেক যোগ্য শিক্ষিকাকে অপমান করে বেতন না দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে।
তিনি আরা বলেন, ভাইস প্রিন্সিপাল আয়েশা, ম্যানেজার শুভ্রা সহ কয়েকজন নারী শিক্ষক এমডির জন্য শিক্ষিকাদের ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করেন। এই স্কুলে নারীর নিরাপত্তা, সম্মান ও মানবাধিকার বলতে কিছুই নাই। এসকল বিষয় জানার পরও স্কুলের পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা এবং মাহমুদুর রহমান পিয়ালের স্ত্রী রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছেন।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসর ও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ সহচর কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম স্কুলের এমডি মাহমুদুর রহমানের আয়কর- ভ্যাট ফাঁকি, সরকারের অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশি শিক্ষক নিয়োগ,শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া ক্যাম্পাস পরিচালনাসহ সকল কেলেংকারি ছাপিয়ে এখন নারী কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুলশানস্থ কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম স্কুলের এমডির বিরুদ্ধে নারী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের যৌন হয়রানির অভিযোগ অনেক আগে থেকেই স্কুল ক্যাম্পাসে চাউর ছিল। স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল পাকিস্তানী নাগরিক আয়েশার সাথে মাহমুদুর রহমানের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এই ভাইস প্রিন্সিপাল আয়েশা দীর্ঘদিন সরকারি ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া অবৈধভাবে কর্মরত ছিলেন।
মাহমুদুর রহমানের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না। সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে নির্যাতিতরা মুখ খোলার সাহস পেতেন না।
কিন্তু সম্প্রতি একজন নারী শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানের যৌন হয়রানির বিষয়ে একটি পোস্ট করলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে ঐ নারী শিক্ষক দীর্ঘ পোস্টে , কৌশলে স্কুলের এইচ আর ম্যানেজার শুভ্রা কিভাবে মাহমুদুর রহমানের বাসায় নিয়ে যায় এবং শুভ্রা তাকে একা বাসায় রেখে আসলে , মাহমুদুর রহমান কিভাবে যৌন হয়রানি করেন তার নাতি দীর্ঘ বিবরণ তুলে ধরেন।
কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দোসর মাহমুদুর রহমান বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে এ্যাডমিন কে ম্যানেজ করে পোস্টটি ডিলিট করিয়ে দেয়। এমনকি মাহমুদুর রহমানের কালো টাকার জোরে ঐ ফেসবুক গ্রুপে এখন আর তার বিরুদ্ধে দেয়া পোস্ট অনুমোদন করেনা।
উল্লেখ্য, এইচ আর ম্যানেজার শুভ্রা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের দোসর ও দেশ টিভির কারাবন্দী এমডি আরিফ এর বান্ধবী।
নাম প্রকাশ না করার একান্ত শর্তে কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম স্কুলের বর্তমান ও সাবেক একাধিক কর্মকর্তা ও শিক্ষক এই প্রতিবেদক কে বলেন, মাহমুদুর রহমানের যৌন হয়রানির বিষয় নতুন কিছু নয়। তার অত্যাচারে ভালো পরিবারের মেয়েদের কাজ করা কঠিন। তার আবদারে সায় দিলে পদোন্নতি ও বেতন বৃদ্ধি হয়। সায় না দিলে চাকরিচ্যুত বা নানা ভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
ভাইস প্রিন্সিপাল পাকিস্তানী আয়েশা ও ফ্যাসিস্ট দোসর আরিফের বান্ধবী শুভ্রার সাথে মাহমুদুর রহমানের অনৈতিক সম্পর্ক ওপেন সিক্রেট ছিল। এখন আয়েশা ও শুভ্রা দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা এখন মাহমুদুর রহমানের জন্য মেয়ে ম্যানেজ করার মিশনে নেমেছে। যা আমাদের সহকর্মীর সাহসী ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে।
মাহমুদুর রহমান পিয়ালের নারী শিক্ষিকাদের যৌন হয়রানি ও অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সহ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্কুলের সাধারণ শিক্ষিকা ও নারী কর্মকর্তাগণ।
এ বিষয়ে স্কুলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদূর রহমান পিয়ালের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় তার কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশিত হলো না।