টেন্ডার কারসাজি, ঘুষ ও যোগসাজশের গন্ধ : গণপূর্ত অধিদপ্তরে দুদকের হঠাৎ অভিযান — ফাঁস হলো টেন্ডার প্রক্রিয়ার গোপন তথ্য

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আবারও কাঁপিয়ে দিয়েছে সরকারি অফিসপাড়া! মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গণপূর্ত অধিদপ্তরে হঠাৎ অভিযান চালিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ পায় দুদক। অভিযোগ— অধিদপ্তরের কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা দরপত্র দাতাদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রাক্কলন ফাঁস করে কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের জাল বিস্তার করেছেন।


বিজ্ঞাপন

দুদক প্রধান কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো জোনের তিনটি বড় প্রকল্পে দরদাতাদের প্রস্তাবিত মূল্য ও গণপূর্তের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয়ের অঙ্ক আশ্চর্যজনকভাবে প্রায় কাছাকাছি। অথচ এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় বা প্রাক্কলন তথ্য সম্পূর্ণ গোপনীয়— যা বাইরের কেউ জানার কথা নয়।

ফলে দুদক মনে করছে, অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এমন মিল অসম্ভব।


বিজ্ঞাপন

অভিযানের সময় উপস্থিত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে কেউই সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। দুদক টিম সংশ্লিষ্ট নথি ও দরপত্রের কপি জব্দ করে তদন্তের জন্য নিয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হয়রানি ও অব্যবস্থাপনা :  একই দিনে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালী পরিচালিত আরেক অভিযানে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় স্থানীয় প্রশাসনে। অভিযোগ— ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা প্রদানে ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা ও রোগীদের হয়রানি চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

দুদক টিম হঠাৎ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে সরাসরি অভিযোগ গ্রহণ করে। রোগীরা জানান, চিকিৎসা নিতে ঘুষ ও তদবিরের সংস্কৃতি চালু রয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা হাসপাতালের রেজিস্টার, বিল-ভাউচার ও চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহ রেকর্ড পরীক্ষা করে নানা অসঙ্গতি শনাক্ত করেন।

অভিযান শেষে কর্মকর্তাদের দ্রুত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেন তদন্ত টিমের সদস্যরা।

দিনাজপুরে সেটেলমেন্ট অফিসে ভয়াবহ দুর্নীতি : দুদকের তৃতীয় অভিযানটি হয় দিনাজপুর জেলা কার্যালয় থেকে।

জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ও উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস, বিরামপুর— উভয় জায়গাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ভুয়া রেকর্ড তৈরি ও সরকারি খাস জমি দখলের প্রমাণ পায় এনফোর্সমেন্ট টিম।

অভিযোগ রয়েছে, অফিসের প্রধান সহকারীসহ একাধিক কর্মকর্তা অনলাইনে খতিয়ান এন্ট্রি বাবদ অতিরিক্ত ফি আদায় করে নিজেরা আত্মসাৎ করেছেন। অভিযানে ৪২(ক) ধারার মামলা রেজিস্ট্রার, বিল-ভাউচার এবং খরচের রেকর্ড পর্যালোচনা করে ‘অস্বাভাবিক লেনদেন’ চিহ্নিত করা হয়।

এছাড়া বিরামপুর উপজেলার সেটেলমেন্ট অফিসে ১৮ একর সরকারি খাস জমি অর্থের বিনিময়ে ব্যক্তির নামে রেকর্ড করে দেওয়ার ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ মেলে।
দুদক কর্মকর্তারা বলেন, “এই চক্রে স্থানীয় দালাল ও কিছু প্রভাবশালী ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজশের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।”

পরবর্তী পদক্ষেপ : দুদক সূত্র জানিয়েছে, তিনটি অভিযানে সংগৃহীত নথি, সাক্ষ্য ও প্রমাণ যাচাই শেষে কমিশনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক দুদক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“আমরা এখন আর শুধু অভিযোগ শুনে বসে থাকি না — মাঠে নেমে প্রমাণ সংগ্রহ করছি। গণপূর্ত থেকে শুরু করে হাসপাতাল বা ভূমি অফিস— কোথাও দুর্নীতি নিরাপদ নয়।”দুদকের হঠাৎ এই অভিযান গোটা প্রশাসনিক অঙ্গনে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

দরপত্রে গোপন তথ্য ফাঁস থেকে শুরু করে সরকারি জমি বিক্রির মতো গুরুতর অপরাধের ইঙ্গিত— সব মিলিয়ে সরকারি দপ্তরগুলোর ভেতরের পচন আবারও উন্মোচিত হলো দুদকের অভিযানে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *