মৃত আত্মাদের স্মরণে যশোরে কবর প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত  : ফুল, মোমবাতি ও প্রার্থনার আলোয় ভরে উঠল কারবালা ও শিমুলিয়া খ্রিস্টান মিশন

Uncategorized খুলনা গ্রাম বাংলার খবর বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

যশোরের কারবালা খ্রিস্টিয়ান কবরস্থানে প্রিয়জনের কবরে ফুল, ধূপ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। কবরের সারি জুড়ে শান্তির আবহ, প্রার্থনার মৃদু সুর ও ভালোবাসার স্মৃতি—এ যেন এক আধ্যাত্মিক বিকেল।


বিজ্ঞাপন

 

জেমস আব্দুর রহিম রানা, (যশোর) :  আজ ২ নভেম্বর—খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি মৃত লোকের পর্ব দিন বা কবর প্রতিষ্ঠা দিবস নামে পরিচিত। এই দিনে সারা বিশ্বের মতো যশোরেও গভীর ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে প্রয়াত আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও প্রিয়জনদের স্মরণে প্রার্থনা ও শ্রদ্ধা নিবেদন।

প্রভাত থেকেই যশোর শহরের কারবালা খ্রিস্টিয়ান কবরস্থান ও ঝিকরগাছার শিমুলিয়া খ্রিস্টিয়ান মিশন এলাকায় ভিড় জমতে থাকে ধর্মপ্রাণ মানুষদের। কেউ হাতে ফুল, কেউ মোমবাতি, কেউবা নীরব প্রার্থনায় চোখ বুজে স্মরণ করছেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনকে। সকাল ৯টায় শুরু হয় পবিত্র প্রার্থনা ও বাইবেল পাঠ। এরপর ধর্মযাজকরা সবাইকে নিয়ে প্রয়াত আত্মাদের শান্তির জন্য বিশেষ মিসা (Mass) অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় চার্চের পাদ্রি, ধর্মীয় সেবিকা ও অসংখ্য ভক্ত।


বিজ্ঞাপন

পাদ্রি রবার্ট গোমেজ তাঁর ধর্মোপদেশে বলেন, “আজ আমরা স্মরণ করি তাঁদের, যাঁরা আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু হৃদয়ে রয়েছেন চিরদিন। ঈশ্বরের অসীম দয়ার আলোয় তাঁরা যেন শান্তিতে বিশ্রাম পান—এই আমাদের প্রার্থনা।” তিনি আরও বলেন, “এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন ক্ষণিক, কিন্তু প্রেম ও প্রার্থনা চিরন্তন। মৃত্যুই শেষ নয়; এটি ঈশ্বরের সান্নিধ্যে চির শান্তির পথে যাত্রা।”


বিজ্ঞাপন

দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় সমবেত প্রার্থনা ও ধর্মীয় সংগীত পরিবেশনা। শিশুরা বাইবেলের বাণী আবৃত্তি করে এবং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়। শিমুলিয়া মিশনে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান, যেখানে উপস্থিত সবাই একসাথে প্রার্থনা করেন—
“প্রভু, তাঁদের চিরন্তন বিশ্রাম দান করুন,
আর অনন্ত আলোর আলো তাঁদের উপর বর্ষিত হোক।”

মোমবাতির মৃদু আলো, ফুলের সুবাস ও গির্জার ঘণ্টাধ্বনি—সব মিলিয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে গভীর আধ্যাত্মিক আবহ। যশোরের প্রবীণ ধর্মপ্রাণ নারী এঞ্জেলা বিশ্বাস বলেন, “এই দিনটি আমাদের শেখায়—মৃত্যু কোনো শেষ নয়। ভালোবাসা, স্মৃতি ও প্রার্থনা কখনও মরে না। আমরা যাঁদের হারিয়েছি, তাঁরা এখন ঈশ্বরের আলোয় শান্তিতে আছেন।”

ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের কাছে নভেম্বর মাসটিই ‘মৃত আত্মাদের মাস’ হিসেবে পালন করা হয়। মাসজুড়ে গির্জা ও মিশনগুলোতে বিশেষ প্রার্থনা, উপবাস, বাইবেল পাঠ এবং মৃত আত্মাদের জন্য মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের আয়োজন থাকে। ধর্মীয় নেতাদের মতে, এই মাসের প্রতিটি দিনই জীবিতদের শেখায় কৃতজ্ঞতা, ক্ষমা ও প্রার্থনার শক্তি।

সন্ধ্যায় প্রার্থনার পর সকল অংশগ্রহণকারী নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন কয়েক মিনিট, স্মরণে তাঁদের—যাঁরা একসময় ছিলেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ কবরের পাশে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করেন, কেউ কেবল রেখে যান একগুচ্ছ ফুল ও চোখের অশ্রু।

পুরো কারবালা ও শিমুলিয়া এলাকায় সারাদিনজুড়ে ছিল শান্ত, নির্মল ও আবেগঘন পরিবেশ। মোমবাতির আলোয় ঝলমল করছিল অসংখ্য কবর—যেন তারা নীরবে বলছে, “জীবন ক্ষণিক, কিন্তু প্রেম ও প্রার্থনা অমর।”

👁️ 172 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *