
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি খাতে — বিদ্যুৎ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প ও স্বাস্থ্যসেবা — নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে একাধিক এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে টেন্ডার অনিয়ম : চট্টগ্রাম জেলার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) আওতাধীন বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিবিবি), আগ্রাবাদ ও হালিশহর দপ্তরে কার্যাদেশ প্রদানসহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে আজ দুদক, জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ একটি অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানকালে প্রকিউরমেন্ট আইন অমান্য করে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান করা হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সংরক্ষিত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা এবং কর্মকর্তাদের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়।

দুদক টিম দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার, ক্রেডিট লাইন, কাজের অভিজ্ঞতা, কোয়ালিটি কন্ট্রোল সনদ, ম্যানুফ্যাকচারার অথরাইজেশন লেটার ও ই-জিপিতে কালো তালিকাভুক্তি সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে। সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ শেষে কমিশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছে টিম।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডে কোটি টাকার অনিয়ম : অন্যদিকে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট (বিসিসিটি) কর্তৃক প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে দুদক প্রধান কার্যালয়।
অভিযানকালে বিসিসিটি কার্যালয়, মহাখালী, ঢাকা থেকে বিপুল পরিমাণ রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের আওতায় ৮৯টি প্রকল্পে মোট ২,১১০ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৫৪ শতাংশ প্রকল্পে অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে অসংখ্য অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। টিম এসব রেকর্ড যাচাই করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনের কাছে দাখিল করবে।
মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবায় চরম অনিয়ম : এছাড়া যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা প্রদানে হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালায় দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, যশোর।
অভিযানের শুরুতে টিম ছদ্মবেশে তথ্য সংগ্রহ করে। গোপনে সংগ্রহ করা তথ্যে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স চালক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন এবং পরে সঠিক হিসাব দিতে ব্যর্থ হন। হাসপাতালের খাবারের মান ও পরিমাণেও ব্যাপক অসঙ্গতি পাওয়া যায়।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে দেখা যায়, অনেক সময় স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহে গাফিলতি করা হয়। পরে টিম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং সেবাগ্রহীতাদের বক্তব্য গ্রহণ করে।
অভিযানে প্রাপ্ত তথ্য ও নথিপত্র বিশ্লেষণ করে টিম কমিশনের কাছে সুপারিশসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানা গেছে।
দুদকের অবস্থান : দুদক সূত্র জানিয়েছে, এসব অভিযানের উদ্দেশ্য হলো সরকারি সেবা ও প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং জনস্বার্থে দুর্নীতি রোধে তৎপরতা বাড়ানো। কমিশন বলেছে, অভিযানে পাওয়া প্রমাণ ও নথির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
