
নিজস্ব প্রতিবেদক : গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব নির্মাণশৈলী ও টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে “এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট, গ্রিন প্রকিউরমেন্ট ও গ্রিন বিল্ডিং” শীর্ষক একটি সেমিনার গতকাল গণপূর্ত অধিদপ্তর এর প্রধান প্রকৌশলীর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নবনিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ খালেকুজ্জামান চৌধুরী। সেমিনারে পরিবেশগত ঝুঁকি হ্রাস, নির্মাণ সাইট ব্যবস্থাপনা, গ্রিন বিল্ডিংয়ের নীতিমালা ও পিপিআর–২০২৫-এর আপডেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তর এর ঢাকাস্থ ইঞ্জিনিয়ারগণ স্বশরীরে এবং বাহিরের কর্মকর্তারা জুম প্লাটফর্ম এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।

রিজওয়ানা হাসান: “সব সরকারি ভবনকে গ্রিন বিল্ডিংয়ের আওতায় আনতেই হবে” : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “গ্রিন বিল্ডিং শুধু ইচ্ছার বিষয় নয়—এটি এখন জাতীয় প্রয়োজন। গণপূর্ত অধিদপ্তরকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ গ্রিন বিল্ডিং ম্যানুয়াল প্রণয়ন করতে হবে। কোনো মন্ত্রণালয় বা সংস্থা গ্রিন স্ট্যান্ডার্ডের বাইরে গেলে চলবে না।”
তিনি আরও বলেন, ভবন নির্মাণে পানির অপচয় কমানো, প্রাকৃতিক আলো–বাতাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব উপকরণ এগুলোকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। ধানমন্ডি লেক ও নগর জলাশয় সংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “লেক মানুষের জন্য, ড্রেনেজের জন্য নয়। ব্যবসার নামে প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধ করতে হবে।”

উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান: “গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো পরিবেশবান্ধব কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে”গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “হাসপাতাল, কারাগার, আদালত—এসব স্থাপনায় পরিবেশবান্ধব নকশা অত্যন্ত জরুরি। পুরনো ভবন সংস্কারেও পরিবেশগত মান বজায় রাখতে হবে।” তিনি শহরের জলাশয় পুনরুদ্ধার, ভবন সংস্কারে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং টেকসই নির্মাণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম: “নীতিগত পরিবর্তন ছাড়া উন্নয়ন টেকসই হয় না” : গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, “সরকার এখন ভবন নির্মাণে পরিবেশ সুরক্ষা ও জ্বালানি দক্ষতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পিডব্লিউডিকে এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী ভূমিকা পালন করতে হবে।” তিনি পিপিআর ২০২৫-এ পরিবেশবান্ধব নির্মাণকে উৎসাহিত করার বিভিন্ন বিধান যুক্ত করার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।
প্রধান প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান চৌধুরী: “টেকসই উন্নয়নই আগামী দিনের মূল চ্যালেঞ্জ” : সভাপতির বক্তব্যে প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মোঃ খালেকুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “সরকারি অবকাঠামো শুধু নির্মাণ নয়, টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাই আমাদের মূল দায়িত্ব। পরিবেশবান্ধব নকশা, ব্যয়–কার্যকারিতা এবং দক্ষ প্রকিউরমেন্ট—এসবকেই আমরা সামনে রেখে কাজ করব।”
তিনি সেমিনারে আলোচিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে একটি বিশেষ গ্রিন ইমপ্লিমেন্টেশন টিম গঠনের ইঙ্গিত দেন। এছাড়া নির্মাণ সাইট এনভায়রনমেন্ট প্ল্যান, ধানমন্ডি লেক ওয়াটার কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ও গ্রিন প্রকিউরমেন্টকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, রাজউক, মোঃ আসিফুর রহমান ভূঁইয়া, প্রধান স্থপতি, এম মাহমুদ আলী, পরিচালক, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। সকলেই গ্রিন বিল্ডিং বাস্তবায়নে পিডব্লিউডির নেতৃত্বকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
সেমিনারটি প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশ এখন পরিবেশবান্ধব, আধুনিক ও টেকসই নির্মাণের দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। উপদেষ্টা, সচিব এবং বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনার সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলী খালেকুজ্জামান চৌধুরীর বাস্তবসম্মত নেতৃত্ব মিলিত হয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে আগামী দিনের পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তিতে রূপ দেবে।
