
নিজস্ব প্রতিবেদক : যমুনা অয়েল লেবার ইউনিয়নের সভাপতি ও নিষিদ্ব সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের বন্দর থানা শাখার যুগ্ম সাধারণ মো: আবুল হোসেন। ২০ জুলাই ২০২৫ নগরীর ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে তাকে ইপিজেড থানা পুলিশ গ্রেফতার করে৷ অথচ মজার বিষয় হলো ২০ শে জুলাই থেকে ৯ আগষ্ট পর্যন্ত আবুল হোসেনকে অফিসের কর্মস্থলে হাজিরা দেখানো হয়েছে ।

তার গ্রেফতারের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ২০ জুলাই থেকে ৯ আগষ্ট পর্যন্ত অর্থাৎ এই বিশ দিনের বিষয়ে অফিসিয়াল ভাবে কিছুই বলা হয়নি ।
বিষয়টি জানাজানি হলে ১৯ আগষ্ট প্রথম বারের মতো এজিএম টার্মিনাল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাকছুদুর রহমান ১০ আগষ্ট থেকে ১৯ আগষ্ট পর্যন্ত আবুল হোসেন কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছে বলে জিএম মানব সম্পদ বিভাগকে লিখিত ভাবে জানান।

এরপর কখনো একমাস কিংবা ২০ দিন পরপর চিঠি দিয়ে আবুল হোসেনের অনুপস্থিতির বিষয়টি জিএম মানব সম্পদ বিভাগকে অবগত করেন৷ এদিকে এজিএম টার্মিনাল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাকছুদুর হলো সিবিএ নেতা আবুল হোসেনের পৃষ্ঠ পোষক জিএম এইচ আর মাসুদুল ইসলামের অত্যান্ত বিশ্বস্ত সহোচর৷ বিগত সময় চাকরী করেছে হিসাব শাখায় কিন্তু বছর খানিক আগে মাসুদুল ইসলাম তাকে এজিএম টার্মিনাল পদে ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) দেয় ৷

অপারেশন বিভাগে কাজ করার নুন্যতম অভিজ্ঞতা নেই,কিন্তু সেই মাকছুদুর রহমানকে গত মাসের ১১ তারিখে এজিএম টার্মিনাল পদে চলতি দায়িত্বে পদায়ন করে মানব সম্পদ বিভাগের জিএম মো : মাসুদুল ইসলাম৷ এদিকে আবুল হোসেনের কারাগারে থাকার বিষয়টি গোপন করে বিশেষাধিকার ছুটির দরখাস্তও পাঠানো হচ্ছে মানব সম্পদ বিভাগের জিএম মো: মাসুদুল ইসলামের কাছে। তিনি সেই ছুটি মন্জুর করছে।
এভাবে গত ছয় মাস ধরে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকলীগ নেতাকে নিয়ে চলছে লুকাচুরির খেলা৷ এবিষয়টি বিপিসিও অবগত আছেন, এমনকি মাসুদুল ইসলাম ও আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগও জমা পরেছে বিপিসি কাছে। কিন্তু তা ফাইল চাপা পড়ে আছে৷
এদিকে একই প্রতিষ্ঠানের লেবার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, সিবিএ নেতা, নিষিদ্ব সংগঠন জাতীয় শ্রমিকলীগ নেতা মুহাম্মদ এয়াকুবকে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে ১২ ডিসেম্বর রাত দুইটায় । যদিও চান্দগাও থানায় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দায়ের কৃত ২৬ নাম্বার মামলায় ১৪ ডিসেম্বর তাকে কোর্টে চালান দেয়া হয় । অথচ গ্রেফতারের দিনই সিবিএ নেতা এয়াকুব এক মাসের ছুটির আবেদন করেন৷ এমনকি মানব সম্পদ বিভাগ তা মন্জুরও করে।
দুই সিবিএ নেতা জেল হাজতে তবে, অথচ জেল হাজতে থেকেই তাদের ছুটির আবেদন এবং মন্জুর দুটো চলছে । জানা গেছে এই দুই সিবিএ নেতাকে পৃষ্ঠা পোষকতা করেছে যমুনা অয়েলের তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান সদ্য বিদায়ী ডিজিএম অপারেশন হেলাল উদ্দিন৷ অভিযোগ উঠেছে এদেরকে জেল হাজত থেকে বের করতে কোটি টাকার ফান্ড কালেকশনেও নেমেছে আত্মগোপনে থাকা হেলাল উদ্দিন ।
দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যকে। ফান্ড কালেকশনের দায়িত্বে রয়েছে ফতুল্লা ডিপোর গ্রেজার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জয়নাল আবেদীন টুটুল, দৌলতপুর ডিপোর সিবিএ নেতা দেলোয়ার হোসেন বিশ্বাস, বাড়াবাড়ি ডিপোর এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মাহবুবুল আলম, পার্বতীপুর ডিপোর আইয়ুব আলী ( সিবিএ নেতা এয়াকুবের সহোদর) , ভৈরব ডিপোর ডেপুটি ম্যানেজার মতিয়ার রহমান , এজিএম টার্মিনাল ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাকছুদুর রহমান, ধীমান কান্তি দাস মানেজার ( ফাইনান্স) ও হোসেন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া ডেপুটি ম্যানেজার (এডমিন) এমডির দপ্তর প্রধান কার্যালয়।
জানা গেছে হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে তার সিন্ডিকেটের এই ৮ সদস্য যমুনা অয়েলের বিভিন্ন ডিপো থেকে ফান্ড কালেকশন করেছে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে বিভিন্ন ডিপো ইনচার্জদের। তেল চুরির পুরনো সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ধীমান কান্তি দাস ও হোসেন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া নামক যমুনা অয়েলের এই দুই কর্মকর্তা ।
প্রথম জন ২০০৭ সালে একাউন্টস অফিসার হিসাবে প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করে। বর্তমানে ম্যানেজার ( ফাইনান্স)। দ্বিতীয় জন চাকরিতে জয়েন্ট করে ২০১১ সালে। দীর্ঘ চাকরি জীবনে এদের কোনো বদলী নাই৷ যদিও ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর বিপিসির সমন্বিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের অধীনস্থ কোম্পানি সমুহে ৩ বছরের অধিক কর্মরত, ওদেরকে বদলী করতে।
কিন্তু এই দুজনের বেলায় কিছুই হয়নি৷ বরং হোসেন মোহাম্মদ ইয়াহিয়া দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে এমডির গোপনীয় সহকারে হিসাবে৷ এমডির দপ্তরে যেকোনো অভিযোগ গেলে তার হাত দিয়েই যেতে হয়৷ তাই তেল চোর সিন্ডিকেটের কোনো অভিযোগই নজরে আসেনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নজরে৷ তেল চোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দুই জনকে বদলী অতীব জরুরি, এমনটাই জানান যমুনা অয়েলের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।
