আক্রান্তে রেকর্ড

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য

বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ৪১ লক্ষাধিক

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ নেয়া করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড সংখ্যক ৮৮৭ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৬৫৭ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ১৪ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২২৮ জনে।
তিনি নতুন সংযুক্ত একটিসহ মোট ৩৬টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচ হাজার ৬৪২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আগের কিছু মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয় পাঁচ হাজার ৭৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো এক লাখ ২২ হাজার ৬৫৭টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও ৮৮৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এটি ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬৫৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ১৪ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২২৮-এ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৩৬ জন। সব মিলিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন দুই হাজার ৬৫০ জন।
বুলেটিনে বলা হয়, নতুন করে যারা মারা গেছেন, তাদের ১০ জন পুরুষ ও চারজন নারী। চার নারীর মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব একজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব একজন এবং ষাটোর্ধ্ব দুজন রয়েছেন। পুরুষদের মধ্যে চল্লিশোর্ধ্ব চারজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব দুজন, ষাটোর্ধ্ব তিনজন এবং ৯০ থেকে ১০০ বছর বয়সী একজন রয়েছেন।
গত শনিবার (৯ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় বিগত ২৪ ঘণ্টায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ হাজার ৪৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৬৩৬ জন। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু এবং শনাক্ত রোগীর সংখ্যাতো বেড়েছেই। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ডও হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এছাড়া মৃত্যুতেও গত ২৪ ঘণ্টায় হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে ১৭ এপ্রিলের বুলেটিনে জানানো হয়, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। যা এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় সর্বোচ্চ প্রাণহানির রেকর্ড। রোববারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১৬৯ জনকে এবং বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন দুই হাজার ১১৫জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭১ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন এক হাজার ১১৪জন।
করোনা চিকিৎসার জন্য সারাদেশে (ঢাকা শহরের বাইরে) আইসোলেশন শয্যা রয়েছে আট হাজার ৬৩৪টি। শনিবারের তুলনায় বেড়েছে ৪০টি শয্যা। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে দুই হাজার ৯০০টি এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঁচ হাজার ৭৩৪টি। এসব হাসপাতালে আইসিইউর সংখ্যা ৩২৯টি, ডায়ালাইসিস ইউনিট ১০২টি। এছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০০টি ও ময়মনসিংহ নার্সিং ডরমেটরিতে ২০০ আইসোলেশন শয্যা বাড়ানোর কাজ চলছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে মোট কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ২১৮ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার ৬২৩ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৯৭৯ জন এবং এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন এক লাখ ৭৪ হাজার ২০১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৩৬ হাজার এবং ৪২২ জন।
বুলেটিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হলেও এখন গোটা বিশ্বই করোনাভাইরাসের কবলে। মারাত্মকভাবে ভুগছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল। এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি। তবে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে চলছে ছুটি। বন্ধ বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। যদিও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রোববার থেকেই শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হয়েছে দোকানপাট ও শপিংমল।
রোববার দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে বেশিরভাগ দেশই ভাইরাসটিতে তেমন পাত্তা দেয়নি। অনেক দেশই ধারণা করেছিল, এটি চীনা ভাইরাস এবং এর সংক্রমণ হয়তো ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়বে না। এজন্য সেখানকার দেশগুলো তেমন কোনো পদক্ষেপও নেয়নি। ফলও দিতে হচ্ছে তাদের। কারণ সংক্রমণ সংখ্যার দিক থেকে প্রথম দেশগুলোর তালিকার মাঝেই নেই চীন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়ানো হয় সেই ছুটি, যা এখনও অব্যাহত আছে। পঞ্চম দফায় সেই ছুটি বাড়ানো হয় ৫ মে পর্যন্ত। তার আগেই আরেক দফা ছুটি বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার তথ্যানুযায়ী রোববার এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ লাখ ৮০ হাজার ৪৩২ জন। এছাড়া এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৪১ লাখ ৭৯৬ জনের শরীরে।
আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ লাখ ৪১ হাজার ৪৮৪ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮০ জন। এদের মধ্যে ২৩ লাখ ৩১ হাজার ১৯৯ জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ থাকলেও ৪৭ হাজার ৬৮১ জনের অবস্থা গুরুতর।


বিজ্ঞাপন