শনাক্ত লক্ষাধিক

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা সারাদেশ স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান
ডেক্সামেথাসোন সবার জন্য নয়

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : দেশে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিন হাজার ৮০৩ জনের দেহে শনাক্ত হয়েছে এ ভাইরাস। ফলে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৩৮ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ৩৪৩ জনে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
তিনি বুলেটিন উপস্থাপনের আগে বক্তব্য রাখেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, আমাকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছে। সবার দোয়ায় আমি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছি।
বুলেটিনে ডা. নাসিমা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ হাজার ৩৪৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৬ হাজার ২৫৯টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ৫০৩টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৮০৩ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ দুই হাজার ২৯২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৮ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৩৪৩ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৯৭৫ জন। সব মিলিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা এখন ৪০ হাজার ১৬৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা মারা গেছেন, তাদের ৩১ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী। হাসপাতালে মারা গেছেন ৩১ জন এবং বাসায় মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। এদের মধ্যে ১ থেকে ১০ বছরের একজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের দুজন, ত্রিশোর্ধ্ব পাঁচজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয়জন, ষাটোর্ধ্ব ১৪ জন, সত্তরোর্ধ্ব পাঁচজন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী দুজন রয়েছেন। ১৪ জন ঢাকা বিভাগের, ১৮ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন খুলনা বিভাগের এবং একজন করে রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের মারা গেছেন।
গত বুধবারের (১৭ জুন) বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৭ হাজার ৫২৭টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও চার হাজার আট জনের দেহে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমেছে। দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৫৩ জনের। সে তথ্য জানানো হয় ১৬ জুনের বুলেটিনে।
বৃহস্পতিবারের বুলেটিনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৬৭৪ জন এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৮৭১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪০০ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ছয় হাজার ৮৪৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১১ হাজার ২৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে দুই হাজার ৮২১ জনকে। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে তিন লাখ ৩২ হাজার ৬৪১ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন দুই হাজার ৬০৫ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন দুই লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬৫ হাজার ৭০৬ জন।
দেশে কোয়ারেন্টাইনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।
বরাবরের মতো ডা. নাসিমা করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
এদিকে পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্যমতে, প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সারাবিশ্বে ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৪৭২ জন। অপরদিকে সেরে উঠেছেন প্রায় ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৮ জন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ২৬ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। কয়েক দফা বাড়িয়ে এ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। ছুটি শেষে করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেয়া হয়। তবে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সবার জন্য ডেক্সামেথাসোন নয় : করোনায় প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা করতে সক্ষম স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোন কেবল গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
রয়টার্স জানায়, বুধবার ডব্লিউএইচও -এর প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অবশেষে গবেষণা ‘আশায় সবুজ অঙ্কুর’ হয়ে এসেছে বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা বড় ধরনের ট্রায়াল শেষে মঙ্গলবার ঘোষণা করে, সস্তা ও সহজলভ্য কম মাত্রার স্টেরয়েড ডেক্সামেথাসোন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক তৃতীয়াংশ এবং অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি এক-পঞ্চমাংশ কমায়, যা মারাত্মক এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় অগ্রগতি।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীতে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে ৮৩ লাখেরও বেশি।
ডেক্সামেথাসোন এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জীবন বাঁচাতে সক্ষম প্রথম ড্রাগ হিসাবে প্রমাণিত হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধটি মজুদ রাখাটা নিশ্চিত করতে শুরু করেছে। তবে মেডিকেল কর্মকর্তারা বলছেন, ওষুধটির কোনো ঘাটতি নেই।
ডব্লিউএইচওর জরুরি কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান এক ব্রিফিংয়ে জানান, ওষুধটি কেবল সেই সব গুরুতর ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা উচিত যেখানে এটি সাহায্য করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে।


বিজ্ঞাপন