শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব স্থগিত

সারাদেশ

সিলেট থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি : কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সামাজিক দূরত্ব ও সচেতনতা রক্ষায় এবার সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারের বার্ষিক ওরস উপলক্ষে ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। ২৬ শাওয়াল প্রতি বছরের ন্যায় ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব হওয়ার কথা থাকলে করোনাভাইরাস সচেতনতার কারণে এবার উৎসব স্থগিত করেছেন দরগাহ কর্তৃপক্ষ।
দরগাহের অফিস সূত্র জানায়, প্রতি বছর ২৬ শাওয়াল ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব পালন করে আসছেন ভক্ত-অনুরাগীরা। শাহজালালের (রহ.) জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সে ঐতিহ্য রক্ষা করে উরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি তোড়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। সংগ্রহ করে লাকড়ি নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়। আর এসব লাকড়ি উরসে শিরনির রান্নায় ব্যবহার করা হয়। ভক্ত-অনুরাগীরা শহরতলীর লাক্কাতুরা ও মালনিছড়া চা বাগানের টিলা থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করেন। হজরত শাহজালালের (রহ.) দরগাহ থেকে শুরু করে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট, চৌকিদেখি হয়ে সোজা লাক্কাতুরা চা-বাগান পর্যন্ত মিছিল করেন তারা। ফেরার পথে লাল গালিচার মিছিলে যুক্ত হয় গাছের সবুজ লতাপাতা।
ওরসের শিরনিতে ব্যবহৃত কাঠ সংগ্রহের ওই উৎসবকে লাকড়ি তোড়ার উৎসব বলা হয়ে থাকে। দরগাহের বার্ষিক ওরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি সংগ্রহের এ আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেন হাজার হাজার ভক্ত। সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল সহকারে ভক্তরা অংশ নেন। শাহজালাল (রহ.)-এর জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সেই ঐতিহ্য এখনও অব্যাহত রয়েছে।
জনশ্রুতি আছে ৭০৩ হিজরির এই দিনে হজরত শাহজালাল (রহ.) তার সঙ্গীদের নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় শেষে কুড়াল হাতে পাহাড়-টিলাবেষ্টিত (বর্তমান লাক্কাতুরা চা-বাগানের নির্ধারিত টিলা) উত্তর প্রান্তের গভীর জঙ্গলের দিকে যেতে থাকেন। সঙ্গীরা তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। তিনি নিজ হাতে লাকড়ি সংগ্রহ করেন। পরে সেই জায়গার নাম হয় লাকড়ি তোড়ার (ভাঙা) টিলা। যা বর্তমানে লাক্কাতুরা চা-বাগান নামেই প্রসিদ্ধ।
প্রতি বছর দেশের প্রত্যন্ত জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান সিলেটে লাকড়ি তোড়া উৎসবে যোগ দেন।


বিজ্ঞাপন