মা-মেয়ের পরকীয়া ও দুই মেয়েকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর কারণেই ত্রিপল খুন!

অপরাধ এইমাত্র

ঘাতকের পরকীয়ায় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ব্যক্তিগত সচিব খুন হয়েছিল


বিজ্ঞাপন

 

বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর কদমতলীর ত্রিপল খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। স্বামী প্রবাসে থাকায় যৌনকর্মীদের দিয়ে বাড়িতে অসমাজিক কার্যকলাপ, নিজেসহ দুই মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অনৈতিক কর্মকান্ডের ভিডিওচিত্র ধারণ এবং ঘাতক মেহজাবিনকে জোরপূর্ব অপচ্ছন্দের ছেলে শকিুলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ায় এই খুনের ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে মা, বাবা ও ছোট বোনসহ ত্রিপুল খুনের অভিযোগে নিহত দম্পত্তির বড় মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম মুন ও তার স্বামী শফিকুলকে আসামি করে কদমতলী থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহত মাসুদ রানার ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাদি হয়ে এই মামলাটি করেছেন। বাবা-মা ও বোনকে খুনের অভিযোগে কদমতলী থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসাইন মেহজামিন মুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠান। শুনানী শেষে মেহজামিন মুনের ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
শনিবার সকালে কদমতুলি থানার মুরাদপুরের এক ভবন থেকে মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুলের (২০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আর অচেতন অবস্থায় তার মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম ও নাতনি তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ওই পরিবারের বড় বোন মেহজাবিন ইসলাম মুনকে প্রথমেই আটক করে পুলিশ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌসুমী ইসলামের স্বামী মাসুদ রানা দীর্ঘ প্রায় ২৫বছর মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। গত ৩ মাস আগে তিনি দেশে এসেছেন। তিনি প্রবাসে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী মৌসুমী অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, বেশ কয়েকজন যৌনকর্মীকে বাসায় রেখে দীর্ঘদিন অসামাজিক ব্যবসা চালাতেন। শুধু তাই নয়, নিজের দুই মেয়েকে দিয়েও দেহ ব্যবসা করাতেন তিনি। আবার মৌসুমীর কথিত প্রেমিকের সঙ্গে তার মেয়ে মেহজাবিনের অবৈধ সম্পর্ক হয়। আর মেহজাবিনের মায়ের পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থার এক ভিডিওচিত্র পবিারের কেউ ধারণ করে। সম্প্রতি ওই ভিডিও চিত্রের বিষয়টি মেহজাবিন জানতে পারেন। এতে তার মা ও ছোট বোনকে সন্দেহ করেন। ফলে তিনি তার মা ও বোনের প্রতি ক্ষীপ্ত হন।
সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ব্যক্তিগত সচিব আমিনের সঙ্গে মেহজাবিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আর বিষয়টি তার পরিবার জানতে পেরে তাকে বাধা প্রদান করা হয়। তার মা মৌসুমী বিষয়টি জানতে পেরে তার মেয়ে মেহজাবিনকে জোর করেই শফিকুলের সঙ্গে বিয়ে দেন। তার জন্যও মেহজাবিন তার মা ও বোনের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন।
নিহত মৌসুমির বোন ইয়াসমিন জানান, গত ৫বছর আগে পারিবারিকভাবেই শফিকুল ও মেহজাবিনের বিয়ে হয়। তার কিছুদিন পরই মেহজাবিনের আগের অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি তাদের মাঝে কলহের সৃষ্টি হয়। আর বিষয়টি মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল জানতে পারেন। এরপর বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার শাশুড়ি মৌসুমী ও খালাশাশুড়ি শিউলির মাধ্যমে আমিনকে ডেকে খুন করে।
এঘটনার পর মেহজাবিন ও তার স্বামী শফিকুলকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়। পরে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। পরে ছয় মাস পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন শফিকুল। এরপর মেহজাবিনের ছোট বোন জান্নাতুলের ওপর নজর পড়ে শফিকুলে। তিনি নানাভাবে তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এনিয়ে মেহজাবিনের স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন শ্বাশুড়ি মৌসুমী। অপরদিকে মৌসুমীর বিরুদ্ধেও পাল্টা মামলা দায়ের করেন শফিকুল।
সুত্র জানায়, শফিকের সঙ্গে মৌসুমি পেরে উঠতে না পেরে তার ছোট মেয়ে জান্নাতুলকে রক্ষার জন্য কারাগারে পাঠায়। কিন্তু শফিকুল তদবির করে ৫মাস পর তাকে কারাগার থেকে বের করে এনে পুনরায় অনৈতিক কাজ করতে থাকেন। এ নিয়ে মৌসুমি ও তার মেয়ের সঙ্গে শফিকুলের কলহ লেগেই থাকত। গত ৪বছর আগে সফিকুল তার শাশুড়িকে হত্যা করতে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, তাকে চিকিৎসা করতেও বাধা দেন। আবার ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে তাদেরকে মারধরও করা হতো। এ নিয়ে আদালতে মামলাও করেছিলেন মৌসুমি।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ শফিকুলই পরিকল্পিতভাবেই এই ত্রিপুল খুনের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। সে ঠান্ডা মাথার খুনি। তার স্ত্রী মেহজাবিনকে জিম্মি করে তার শিশু সন্তানকে খুনের ভয় দেখিয়ে খুনে সহায়তা করতে বাধ্য করেছে। পারিবারিক বিরোধ মেটানোর একটাই পথ বলে মেহজাবিনকে বুঝানো হয়েছিল বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
শিলা নামের এক নারী জানান, গত দুদিন আগে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে মেহজাবিন। এরপরই তার বোন জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়ার অভিযোগ করে তার
বাবা-মা’এর কাছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। আর সেই ঝগড়ার কারণেই তাদেরকে খুন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শফিকুল জানান, তার স্ত্রী মেহজাবিন অনেকদিন ধরেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করছে। এজন্য তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। আর তার মা-বাবার সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক ছিল না। গত শুক্রবার তাকে ও মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি আসেন মেহজাবিন। সেখানে রাতে তিনি সবাইকে নানারকম খাবার খেতে দেন। ওই খাবারে সম্ভবত কিছু মেশানো ছিল, কারণ খাওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তবে পুলিশ বলেছে মেহজাবিনের পক্ষে একা সম্ভব না এবং এই খুনের সঙ্গে তার স্বামীকেও সন্দেহ করছেন।
ঢাকা মহানগর ওয়ারি বিভাগের উপ-কমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, মেহজাবিনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, তার বাবা দেশে না থাকায় তার মা তাকে এবং তার ছোট বোনকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাত। এর প্রতিবাদ করে কোনো ফল পাননি। এছাড়া তার স্বামী ছোট বোনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ছিল।
অপরদিকে মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা ওমানে অপরএকটি বিয়ে করেছেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হয়। আর সে কারণেই পরিকল্পনা কওে হত্যার পর পুলিশে খবর দিয়েছেন মেহজাবিন।