সামিন, আমাদের সবাইকে মাফ করে দিও

বিবিধ

নাজনীন হোসাইন : সামিন, তোমার কষ্ট আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। তোমার মত এত ভদ্র, নম্র আর সহানুভূতিশীল ছেলে যে মনে মনে এত কষ্টের ভিতর ছিলে, আমরা কেউ জানতে পারিনি।


বিজ্ঞাপন

তাই এনোরেক্সিয়ার মতো মারাত্মক এক রোগে তুমি আক্রান্ত হয়ে গেলে। শেষ পর্যন্ত তোমাকে আমরা হারিয়ে ফেললাম গত ২৬শে জুন, রাত এগারোটায় ইউনাইটেড হাসপাতালে।

সামিন আমার ছোট বোনের দেওর মিলনের ছেলে, দশম শ্রেণীর ছাত্র। আইডিয়াল স্কুল, বনস্রি শাখায় পড়তো।

সে ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত অমায়িক আর ভীষণ অনুভূতি প্রবণ আন্তরিক ছেলে। কাউকে কষ্ট দেওয়ার কথা সে ভাবতেই পারতো না।

অথচ, তার এই স্বভাবই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল। স্কুলে তাকে অনেক বুলিইং এর শিকার হতে হয়। সে বরাবর নাদুসনুদুস সুদর্শন দেখতে ছিল। প্রমিত ভাষায় বাংলা বলতো। পড়াশোনায় ভালো ছিল। আর যায় কোথায়!

সহপাঠীদের বুলিইং এর টার্গেটে পরিনত হল এই নিরীহ, নরম সরম সামিন। কাউকেই সে প্রতিবাদ করে কিছু বলতে পারতো না।

এমনকি স্কুলের শিক্ষিকা পর্যন্ত উপহাস করতে ছাড়েননি। একবার ক্লাসে ফুটবল টিম গঠনের জন্য ছাত্রদের আহবান করা হল। সামিনও নাম দিতে গেল।

শিক্ষিকা এমনভাবে তাকে অপমান করলেন পুরো ক্লাসের ছাত্ররা হো হো করে হেসে উঠলো। তিনি একবারও ভেবে দেখলেন না, কচি মনের ছেলেটা কতটা লজ্জায় কুঁকড়ে গেল। মা’কে সে বলেছিল তার মরে যেতে ইচ্ছে করেছিল।

তাই প্রায়ই সে স্কুলে অনিয়মিত হয়ে গেল। এক পর্যায়ে সে ওজন কমাবার জন্য হন্যে হয়ে উঠে পড়ে লাগলো।

ইন্টারনেট ঘেঁটে কিটো ডায়েট করা শুরু করে দিল। অতি অল্প সময়ে ৪০ কেজি ওজনে নেমে এল। ততদিনে তার eating disorder শুরু হয়ে গেছে। সারাক্ষণ ভয়ে থাকে তার ওজন বেড়ে যাবে।

জোর করে খেলে তার বমি হয়ে যায়। অনেক ডাক্তার দেখানো হলো। ডায়াগনোসিস হলো anorexia nervosa – এক অদ্ভুত রোগ। আমাদের দেশের জন্য বিরল রোগ।

বাবা মায়ের পাগল পারা অবস্থা। কেউ বললো ভারতের বেঙ্গলোরে চিকিৎসা আছে। হায়!

ভারতে যাওয়ার উপায় নাই। লক ডাউন চলছে, সেখানে চলছে মৃত্যুর মিছিল। এখানেই চিকিৎসা চলছিলো। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না।

সামিন সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেল। সামিন ভালো থেকো তুমি। মহান রব্বুল আলামীন, তোমাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

আসুন, আমরা সবাই সচেতন হই। আর কোন সামিন যেন অকালে ঝরে না যায়। বয়োসন্ধিকালের ছেলে মেয়েদের প্রতি সহানুভূতিশীল হই।

তাদের মনের কষ্ট গুলোকে বুঝতে চেষ্টা করি। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ সবার দায়িত্ব আমাদের কোমলমতি সন্তানদের সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা।