ধাপে ধাপে উঠে যাবে বিধিনিষেধ

এইমাত্র জাতীয় স্বাস্থ্য

বিশেষ প্রতিবেদক : করোনা সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই থেকে দেশে সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। যা আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। তবে বিধিনিষেধের মেনে চলার প্রতি অনেকের আছে অনীহা। এই বিধিনিষেধের কারণে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ক্ষতি হচ্ছে অর্থনীতি। এসব কারণে আগামী ৫ আগস্টের পর থেকে ধীরে ধীরে বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হবে এবং সব খোলা হবে। প্রথমে অর্ধেক জনবল নিয়ে অফিসগুলো খোলা হবে। তবে সব কিছু এক সঙ্গে নয়। ধাপে ধাপে সব খোলা হবে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, সব ধীরে ধীরে খোলা হবে। তবে একবারে না। সব ধাপে ধাপে খোলা হবে। কিন্তু এক সঙ্গে সব খোলা হবে না। প্রথম দিকে অর্ধেক জনবল নিয়ে অফিস খোলা হবে বলেও জানান তিনি।
এ দিকে বিধিনিষেধের মধ্যেও শিল্প-কারখানা খোলা রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকরা।
গার্মেন্টসসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা খুলে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকরা। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করে ভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা এই দাবি জানান।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে বলেও জানান তিনি।
যদিও এর আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধে শিল্পকারখানা চালু রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন মালিকরা। কিন্তু সেই অনুরোধ রাখেনি সরকার।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমরা ক্যাবিনেট সচিবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম, সব ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে। এই যে লকডাউনটা আছে, এটা থেকে যেন সমস্ত ধরনের শিল্পকে কাজ করতে সুযোগ দেয়া হয়। এটাই আমরা উনার কাছে অনুরোধ করতে আসছি।’
অনুরোধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কী জানানো হয়েছে- জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে উনার (মন্ত্রিপরিষদ সচিব) মাধ্যমে এই অনুরোধটা আমরা করেছি। তিনি (মন্ত্রিপরিষদ সচিব) বলেছেন, উনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলে এই ডিসিশানটা খুব তাড়াতাড়ি দেবেন। করোনা পরিস্থিতি, সংক্রমণ, মৃত্যু সবকিছু মাথায় নিয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকার এটা বিবেচনা করবে বলে আমরা আশাকরি।’
কোনো নির্ধারিত দিন থেকে খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে কিনা- এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট দিন নয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। যেহেতু ২৩ তারিখ থেকে লকডাউনে সবকিছু বন্ধ আছে, ঈদের আগে অলমোস্ট ১৮/১৯ তারিখ থেকে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে, সবকিছু অনেকদিন বন্ধ থাকার কারণে সবকিছুরই সাপ্লাই চেইনে একটা শর্টেজ হয়।’
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, লকডাউনের মধ্যে কারখানা খোলা রাখার জন্য শিল্প মালিকদের অনুরোধ তারা রাখতে পারছেন না। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, অনেকের লকডাউনের বিষয়ে অনীহা আছে। কিন্তু অনীহা হলে চলবে না। কারণ আগে জীবন বাঁচবে। এরপরে অর্থনীতি। আপনি আগে বেঁচে থাকুন। এরপর আপনার অর্থনীতি। অর্থনীতি দিয়ে কী করবেন? অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে জীবন বাঁচাতে হবে। জীবন বাঁচাতে হলে আপনাদের লকডাউন মানতে হবে এবং টিকা নিতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে, মাস্ক সবাইকে পরতে হবে। কিন্তু আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, লকডাউন আজ চার দিন চলছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে যেভাবে মানুষ চলাচল করছে, গাড়ি বের হচ্ছে, আমরা তাতে খুবই দুঃখিত। তারা লকডাউন ব্রেক করছে। তারা নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করছে।
এক-দুই দিনের মধ্যে গার্মেন্টস খোলার সম্ভাবনার বিষয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, চলতি মাসে সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা সবাইকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চাচ্ছি। তবে দুই সপ্তাহ পরে গার্মেন্টস খুলে দেব। সব রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেব।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের উর্ধ্বগতি ঠেকানোর জন্য ঘোষিত লকডাউনে দূরপাল্লার বাস চলাচলসহ সব যানবাহন বন্ধ রয়েছে। তবে আগামী ৫ আগস্টের পর থেকে ঢাকায় এবং অন্যান্য মহানগরীতে গণপরিবহন চলাচল শুরু করতে পারে। পরে পর্যােয়ক্রমে দূরপাল্লার বাসও চলাচল করবে।
এর মধ্যে টিকা দেয়ার কার্যোক্রম চলবে এবং সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর এর ভিতরে আরো টিকা চলে আসবে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনা রোধে সবারই সবার জায়গা থেকে চেষ্টা করা উচিত। কারণ এভাবে আমরা তো বাঁচতে পারবো না। আমাদের কাজও করতে হবে এবং মাস্কও পরতে হবে। আর আমাদের টিকার সংকট কেটে গেছে। সবাইকে এখন টিকার আওতায় আনা হবে। করোনা রোধ সরকার ঘোষিত চলমান সর্বাত্মক লকডাউনে সব সরকারি, বেসরকারি অফিস, শিল্প-কারখানা, পোশাকশিল্পসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহনও। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মানুষের চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর অপ্রয়োজনে বাইরে বের হলেই জেল এবং জরিমানাও করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন