বেড়েই চলছে ডেঙ্গু

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন জীবনী ঢাকা রাজধানী সারাদেশ স্বাস্থ্য

*পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে কয়েক মাস
*২৪ ঘণ্টায় ভর্তি আরও ২০৬৫ জন
*ঢাকায় পৌঁছেছে মশার ওষুধের নমুনা

মহসীন আহেমদ স্বপন : সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার হার কমছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ নিয়ে সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে সবাই কাজ করছে। তাই ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। যার যার বাড়ি আর আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করলেই দ্রুত এটি নির্মূল হয়ে যাবে। ডেঙ্গু নির্মূল করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। গতকাল সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌরসভার ডেঙ্গু নিধন ক্রাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধনের সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী এসব কথা বললেও সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১৫৯ জন। সোমবার ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভর্তি হয়েছেন ৯০৬ জন। এছাড়া, প্রতিবেদনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয়েছে ১৮ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বছর ২৭ হাজার ৪৩৭ জন রোগী বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৭৬১ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন ও বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৭ হাজার ৬৫৮ জন।
এছাড়া, ৩০ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ৫ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে ঢাকায় ৭ হাজার ২৯৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৮৬৪ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ১৮৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০২ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩৮ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৯৮ জন ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়াও হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৩২ জন, বারডেম হাসপাতালে ২৬ জন, বিএসএমএমইউতে ৫০ জন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৯ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৮ জন, পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৫০ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ঢাকা শহরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে নতুনভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪০৮ জন রোগী। এদের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৪ জন, ধানমন্ডি ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ২৪ জন, ধানমন্ডি কমফোর্ট নার্সিংয়ে ৪ জন, শমরিতা হাসপাতালে ১১ জন, ল্যাব এইড হাসপাতালে ৯ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২২ জন, হাই কেয়ার হাসপাতালে ৮ জন, হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে ৬ জন, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৯ জন, কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২৯ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়াও খিদমা জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২৭ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৫ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৮ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে ২৪ জন, আদ-দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ জন, বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডে ৮ জন, আজগর আলী হাসপাতালে ২৬ জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১০ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ১৩ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জন, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ জন ও উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া, ঢাকা বিভাগের জেলা শহরগুলোতে ২২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮০ জন ও খুলনা বিভাগে ১৫০ জন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও রংপুর বিভাগে ৪৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১১২ জন, বরিশাল বিভাগে ৯৯ জন, সিলেট বিভাগে ৩৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও ময়মনসিংহ বিভাগে ৫১ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে কয়েক মাস: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার হার কমছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ নিয়ে সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে সবাই কাজ করছে। তাই ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। যার যার বাড়ি আর আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করলেই দ্রুত এটি নির্মূল হয়ে যাবে। ডেঙ্গু নির্মূল করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। গতকাল সোমবার দুপুরে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল প্রাঙ্গণে পৌরসভার ডেঙ্গু নিধন ক্রাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধনের সময় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। পৌর মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিমের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম ফেরদৌস, পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম, সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আকন্দ, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. লুৎফর রহমান, মানিকগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল মজিদ ফটো, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের দেখতে যান। তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন এবং চিকিৎসক ও নার্সদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী জানান, সারাদেশে এ পযন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঈদের সময় সরকারি হাসপাতালের মতো বেসরকারি হাসপাতালেও ডেঙ্গু চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ইতোমধ্যে সারা দেশের সব সরকারি হাসপাতালে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পরে মন্ত্রী হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধন কার্যক্রম ও পরিস্কার-পরিছন্নতার উদ্বোধন করেন।
এরআগে গত রোববার রাতে মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায় জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি ও ডেঙ্গু জ¦র এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে ডেঙ্গু হয় না। সিঙ্গাপুর সবচেয়ে পরিষ্কার দেশ। সেখানেও ডেঙ্গু হয়। আমেরিকা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের সব দেশেই ডেঙ্গু হয়। কাজেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে আছে। ঈদের সময় ডেঙ্গু রোগী আরো বাড়ার আশঙ্কা করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ডেঙ্গু যেহেতু ঢাকায় বেশি হয়েছে, এই ডেঙ্গু রোগীরা সারা দেশেই ছড়িয়ে দিতে পারে। অন্যান্য জেলায়ও ডেঙ্গু বাড়তে পারে। সে জন্য সব জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালগুলো এখন রোগীতে ভরা আছে। আরো যদি রোগী হয়, হতেই পারেই, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যতটুকু করা প্রয়োজন, তার সবটুকুই করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের সভাপতিত্বে সচেতনতামূলক সভায় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমসহ জেলার সব পদস্থ কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মশার ওষুধের নমুনা ঢাকায় পৌঁছেছে : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ব্যবহারের জন্য মশার ওষুধের নমুনা বিদেশ থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে নমুনাগুলো ঢাকায় এসে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়। এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান ভা-ার ও ক্রয় কর্মকর্তা (উপসচিব) নুরজ্জামান বলেন, মশার ওষুধের নতুন একটি নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখনও বিমানবন্দরে আছি। তবে প্যাকেট এখনও খোলা হয়নি। তিনি বলেন, ওষুধের নমুনাটি ভারত থেকে আনা হয়েছে। এর বাইরে বিস্তারিত আর কিছু বলা যাবে না। মঙ্গলবার কালকে ডিএসসিসিতে এই ওষুধের পরীক্ষা শেষে আইইডিসিআর এবং কীট তত্ত্ব বিভাগে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি। এবছর রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গুজ¦র মহামারি আকার ধারণ করায় মশা ছিটানো ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরে বিভিন্ন ল্যাব পরীক্ষায় প্রমাণ হয় ছিটানো ওষুধের কোনো কার্যকারিতা নেই। হাইকোর্টও কে জরুরিভিত্তিতে ওষুধ আনা হবে না তা জানতে চান দুই সিটির কাছে। নতুন ওষুধের নমুনা আনায় দীর্ঘ সময় লাগবে বলেও জানানো হচ্ছিল। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। এসব আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ঢাকা দক্ষিণের জন্য মশা নিধনের ওষুধের নমুনা এলো।


বিজ্ঞাপন
👁️ 19 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *