স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় চসিককে স্বাবলম্বী করার পথে অগ্রযাত্রা : মেয়র ডা. শাহাদাত

Uncategorized অর্থনীতি কর্পোরেট সংবাদ চট্টগ্রাম বানিজ্য বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম)  : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) আর্থিকভাবে স্বনির্ভর ও টেকসই নগর সরকারে রূপান্তরের লক্ষ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শৃঙ্খলার ভিত্তিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।


বিজ্ঞাপন

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ সামছুল হক, সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শওকত ওসমান এবং সহকারী সচিব এস এম হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন। চসিকের পক্ষে বিভিন্ন বিভাগ ও শাখার প্রধান কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন।
মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অতীতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন

এরই অংশ হিসেবে পূর্ববর্তী মেয়রদের সময়ে সংঘটিত একটি দুর্নীতির ঘটনায় রাজস্ব বিভাগের ফিল্ডবুক ঘষামাজা করে দুই প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে দুই কর কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিচ্ছন্ন বিভাগে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে কয়েকজন কর্মচারীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন কি না—তা নিশ্চিত করতে কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই দপ্তর ও ওয়ার্ড অফিসগুলোতে আকস্মিক পরিদর্শন চালানো হচ্ছে। কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি ও দায়িত্ব পালনে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।

হোল্ডিং ট্যাক্স ও রাজস্ব আদায়ের প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, অতীতে অযৌক্তিকভাবে নির্ধারিত গৃহকর পুনর্মূল্যায়নে নিয়মিত রিভিউ বোর্ড বসানো হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে ন্যায্য ও যৌক্তিক কর নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে, বন্দর, তেল কোম্পানি, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে অবশ্যই তাদের প্রাপ্য রাজস্ব পরিশোধ করতে হবে। কারণ রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে নগর উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের হোল্ডিং ট্যাক্স প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, বন্দরের কাছ থেকে বর্তমানে যে পরিমাণ কর আদায় হচ্ছে, তা প্রকৃত পাওনার তুলনায় অনেক কম। যৌথ জরিপের মাধ্যমে প্রকৃত কর নির্ধারণের কাজ চলমান রয়েছে এবং এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি জানান, বন্দর থেকে বছরে ২৬৪ কোটি টাকা কর পাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪৫ কোটি টাকা। অথচ চসিকের অধীনে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা, ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ জনস্বার্থে বছরে প্রায় ৯৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

মেয়র বলেন, নগরীর সড়কগুলোর নকশাগত ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ ১০ টন হলেও বন্দরের ভারী যানবাহন নিয়মিতভাবে ২০ থেকে ৩৫ টন ওজন বহন করে চলাচল করছে। ফলে সড়কের স্বাভাবিক স্থায়িত্ব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেখানে একটি সড়কের আয়ুষ্কাল তিন থেকে পাঁচ বছর হওয়ার কথা, সেখানে অতিরিক্ত ওজনের কারণে দ্রুত সড়ক ভেঙে পড়ছে। এর ফলে প্রতি বছর শুধু সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে চসিককে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্দর থেকে ন্যায্য হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা গেলে সড়ক সংস্কার সঠিকভাবে করা সম্ভব হবে, যা বন্দর কার্যক্রমকেও আরও গতিশীল করবে।

চসিকের রাজস্ব বৃদ্ধি ও আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে অব্যবহৃত ও লোকসানি সম্পদ কাজে লাগানোর পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন মেয়র। তিনি জানান, পুরনো ভবন ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ, আধুনিক মার্কেট ও বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা, মধ্যবিত্তদের জন্য আবাসন প্রকল্প, আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেটের মাধ্যমে হকার পুনর্বাসন এবং পর্যটনভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে ধারণা করা হলেও বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দেড় লক্ষেরও কম। এতে বিপুল পরিমাণ সম্ভাব্য রাজস্ব হারাচ্ছে চসিক। ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।

কোচিং সেন্টারসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রেড লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন বাবদ রাজস্ব আদায়ে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, রাজস্ব আদায় জোরদার করতে কর কর্মকর্তা, উপকর কর্মকর্তা ও লাইসেন্স ইন্সপেক্টরদের ভেস্ট ও আইডি কার্ড প্রদান, নিয়মিত সভা, টার্গেট নির্ধারণ, দৈনিক মনিটরিং, সার্কেল অফিস পরিদর্শন এবং মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।

শেষে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আর কারও ওপর নির্ভরশীল রাখা যাবে না। নিজেদের সম্পদ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করে চসিককে একটি স্বাবলম্বী, জবাবদিহিমূলক ও টেকসই নগর সরকার হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”

👁️ 25 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *