ওয়াসার ডিসিআরও দরবেশ ফারুক ওএসডি’র স্থলে বদলি!

অপরাধ রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা ওয়াসার বহুল আলোচিত, বিতর্কিত, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা দরবেশ খ্যাত ফারুক হোসেনকে অবশেষে বদলি করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। ২৭/৭/২০২১ তারিখে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এক অফিস আদেশে ফারুক হোসেনকে রাজস্ব জোন-৪ থেকে রাজস্ব জোন-১০ এ বদলি করা হয়েছে। তবে ওএসডি বা বরখাস্ত না করে কেবল বদলির আদেশে ওয়াসার সাধারণ কর্মচারীরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতে বদলি করে ফারুক হোসেনের দুর্নীতি বন্ধ করা যাবেনা। পূর্বের জোনে যা করেছে বর্তমান জোনে দায়িত্ব নিয়ে তাই করবেন। যথা পূর্বং তথা পরং। সংবাদ মাধ্যম ও বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের নিকট তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীগণ।
ফিরে দেখা : ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব জোন-৪ এ ভিআইপি সাইট কে পাবেন আর কে পাবেন না তা নির্ভর করে ”সিসটেমের” ওপর। সিসটেমের নাম হচ্ছে মাসোহারা। ভাল মাসোহারা হলে ভিআইপি সাইট না হলে নন ভিআইপি সাইট। মাসোহারার হেরফেরের কারনে স্থায়ী রাজস্ব পরিদর্শকগণ ভালো সাইট পান না। উচ্চ মাসোহারা দিয়ে ভিআইপি সাইট লুফে নেন আউটসোর্সড বিলিং সহকারীরা। রাজস্ব জোন-৪ এর ডিসিআরও ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মাসোহারা গ্রহনের এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার একান্ত শর্তে জোন-৪ এর একজন রাজস্ব পরিদর্শক বলেন, আমরা অনেকেই ডিসিআরও সার কে খুশি না করতে পারার কারনে ভালো সাইট পাইনি। জোনের সকল ভালো সাইট ফারুক হোসেনের আত্মীয় ও যাদের প্রতি তিনি রাজি খুশি তাদের দখলে। মাসোহারা ছাড়াও ঈদ পার্বন নানা পারিবারিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে নানা উপঢৌকন তো ডিসিআরও সারের জন্যে রয়েছেই। সারের মধ্যাণ্য ভোজনের সময় সেবার জন্যে সুবিধাভোগী রাজস্ব পরিদর্শক, বিলিং সহকারীরা তাদের ডুবলি সহ খেদমতে হাজির থাকেন।
তিনি ঢাকা ওয়াসার রাজস্ব জোন-৪ এর উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা। বসনে ভূষণে অতীব ধার্মিক সৎ কর্মকর্তা মনে হবে সবার। সাধারন্যে এমন ধারনাই জারি রয়েছে। তাহলে সরকারের নি¤œ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তার সম্পদের উৎস কি ? ওয়াসার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যেও আলোচনা চলছে। আলোচনা থেকে সংবাদ মাধ্যমেও পৌছেঁ গেছে কথিত সৎ কর্মকর্তার আমলনামা। আলহাজ¦(একাধিক বার পিপিআই’র টাকায় হজ করেছেন) ফারুক হোসেন ৩২৭ পিরেরবাগে ৫তলা নিজস্ব বাড়িতে( সংবাদের সাথে বাড়ির চিত্র সংযুক্ত) বসবাস করছেন। নিজস্ব ঢাকা মেট্রো –খ-১৪০০০৬ নং গাড়িতে চলাফেরা করছেন। সাভারে প্লট কিনেছেন। করেছেন মার্কেট। নিজ এলাকা মুলাদীতে গড়েছেন প্রচুর বিত্ত। পিপিআই প্রকল্পে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে আত্বীয় ও নিজের এলাকার প্রায় অর্ধশত জনকে চাকরী দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ফারুক হোসেন চাকরীর শুরুতেই দুর্নীতে বেপরোয়া ছিলেন। দুর্নীতির সুবাদে ঢাকা শহরে বহুতল বাড়ী, একাধিক ফ্লাট, সাভারে মার্কেট ও একাধিক প্লটের মালিক। পিপিআই প্রকল্পে লুটপাটের অন্যতম হোতাও তিনি। ওয়াসার কর্মচারীদের পক্ষ থেকে দুদক এবং ওয়াসার শুদ্ধি অভিযান কমিটিতে আগেই ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ মে ওয়াসার কর্মকর্তাদের এক ভার্চুয়াল সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ. খান ডিসিআরও ফারুক হোসেন কে তার অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে।
প্রশাসন বিভাগে গবেষনা সহকারী হিসেবে ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেন। চাকুরীতে যোগদানের পর কিছুদিন মেসে ছিলেন।গবেষনা সহকারী পদ থেকে রিভিনিউ সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন রাজস্ব জোন-২,৩,৪ ও ৫। পরে ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। পরে তিনি উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। প্রশাসনের লোক হয়েও তিনি রাজস্ব বিভাগে চাকুরী করছেন। রাজস্ব বিভাগে দক্ষ-অভিজ্ঞ কর্মকর্তা থাকা স্বত্ত্বেও প্রশাসনের কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হোসেনকে ডেপুটিশনে সদ্য বিলুপ্ত পিপিআই রাজস্ব জোন-৫ মহাখালীতে পোষ্টিং দেওয়া হয়। এরপর পিপিআই জোন-৪ মিরপুরে পোষ্টিং নেন। আবার ১ নভেম্বর-২০১৬ তে পিপিআই জোন-৪ মিরপুর থেকে পিপিআই জোন- ৩ লালমাটিয়াতে পোষ্টিং নেন। এপর পিপিআই প্রকল্প বাতিল হওয়ার পর আবারও ঘুরেফিরে রাজস্ব জোন- ৪ মিরপুরে পোষ্টিং নেন।
ডিসিআরও ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জন সহ নানা অনিয়ম ও দূর্নীর্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মোঃ ফারুক হোসেন ওয়াসায় চাকুরীর সুবাদে শূন্যহস্ত থেকে ঢাকা শহরে গাড়ি, বাড়ি, প্লট, মার্কেট সহ বিশাল বিত্ত বৈভবের সন্ধান পাওয়া গেছে। ঢাকা পীরের বাগে ৩২৭ নং হোল্ডিং- এ একটি ৫ তলা বিলাস বহুল বাড়ি। নিজে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকার ব্যবহার করেন। ঢাকা মেট্টো-খ-১৪০০০৬। ওয়াসার কর্মকর্তা হয়েও তিনি গত প্রায় ১৫ বছর যাবৎ ৫তলা বিশিষ্ট বাড়িটির পানির বিল দিয়েছেন এভারেজে অর্থ্যাৎ মিটার ছাড়াই তিনি ৬৯০ টাকা বিল দিয়েছেন। ৬০০ টাকা পানির বিল এবং ৯০ টাকা ভ্যাট। একটি সুত্রে জানা যায় মিডিয়ায় জানাজানি হলে ২০১৭ সালের শেষের দিকে তিনি তড়িঘড়ি করে বাড়িতে মিটার স্থাপন করেন। এখন তার বাড়িতে আনুমানিক পানির বিল ৩৫০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা হয়। সেই হিসেবে তার এক বছর বিল হয় ৪২ হাজার টাকা। সেই হিসেবে তার বিল হয় ৬ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকার মত। তিনি অবশিষ্ট বিল সংশোধিত আকারে পরিশোধ করেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। কিন্ত মিটার স্থাাপনের পর আজ পর্যন্ত তিনি সংশোধিত বিল দেন নাই। এছাড়া পিপিআই প্রকল্পে পিএম এর দায়িত্ব থাকা কালে নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন। পিপিআই প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা লোপাটের অন্যতম ফারুক হোসেন। তিনি সহ প্রকল্পের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যে দুদক ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের গঠিত শুদ্ধি অভিযান কমিটির নিকট আবেদন করেছেন ওয়াসার সিবিএ নেতৃত্ব।
এসব অভিযোগের বিষয়ে টেলিফোনে ফারুক হোসেনের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।


বিজ্ঞাপন

 

 

👁️ 10 News Views