এস আলম ও সন্ত্রাসী বাবলা বিতর্কে স্থগিত মনোনয়ন পেরিয়ে এখনও আশাবাদী বিএনপি বহিষ্কৃত সুফিয়ান

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত চট্টগ্রাম জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন রাজনীতি সংগঠন সংবাদ সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি  :  চট্টগ্রামের রাজনীতিতে একাধিক বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। তিনি বর্তমানে বিএনপির চট্টগ্রামের ৯ নম্বর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও, তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে বড় ধরনের শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত ও অনিয়মের অভিযোগ, যা রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য সহজ হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।


বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক সময়ে জানা যায়, শিল্প গ্রুপ এস আলম গ্রুপ-এর গাড়িসমূহ সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির তিন শীর্ষ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ানও ছিলেন। একই নোটিশে বলা হয়েছিল, ওই গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জেলা কমিটি ও সংশ্লিষ্ট নেতারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এরপর ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং আবু সফিয়ানের সহ প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়।

পরে, ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে আবু সফিয়ানের স্থগিত পদ ও সদস্যপদ প্রত্যাহার করে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এখানে একাধিক প্রশ্ন উত্থিত হয়েছে – কেন এত দ্রুত পদ পুনরায় দেওয়া হলো? এবং এই দ্রুত পরিবর্তন কি দলীয় শৃঙ্খলার প্রতিফলন না, বরং নেপথ্য প্রভাবের প্রমাণ? নাকি এসআলম এর অর্থের বিনিময়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কোন নেতার আর্শীবাদ তিনি পেয়েছেন?


বিজ্ঞাপন

এদিকে, এই ঘটনায় স্বভাবতই স্থানীয় পর্যায়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আবু সফিয়ান নিজেকে এবার চট্টগ্রামের ৯ নম্বর আসনে বিএনপি মনোনয়নপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরছেন। তবে বহিষ্কৃত ও পুনরায় সদস্যপদ ফিরে পাওয়া এই নেতার জন্য ‘নেতৃত্বযোগ্য’ হিসেবে দৃষ্টিকোণটা পরিষ্কার নয়। সাধারণ জনগণ ও দলের তৃণমূল কর্মীরা বলছেন – যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে পদ হারিয়েছে, তারা কি মনোনয়নপ্রার্থী হিসেবে মানানসই?


বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আবু সুফিয়ানের নাম আলোচনায় আসে। কারণ একই এলাকায় দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনৈতিক-সামাজিক ও অঘটনমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সরোয়ার হোসেন বাবলা – যিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানার খন্দকারপাড়া এলাকায় গুলিতে নিহত হন ৫ নভেম্বর ২০২৫। বাবলার দীর্ঘদিন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ১৫টিরও বেশি মামলা ছিল তাঁর বিরুদ্ধে।

রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে – আবু সফিয়ানের সঙ্গে বাবলার “সম্পর্ক বা যোগাযোগ” ছিল কি না? যদিও সন্ত্রাসী মৃত বাবলার সঙ্গে একাধিক ছবি তার রয়েছে। এমন সন্দেহ থেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে সাধারণ জনগনের মধ্যে।

সোমবার (৩ অক্টোবর) রাতে গুলশানস্থ চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আবু সুফিয়ানের নাম ঘোষণা করে কিছুক্ষণ পরই তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনার ভিডিওতে দেখা যায় – প্রার্থী তালিকা ঘোষণার এক পর্যায়ে একজন এসে মির্জা ফখরুলকে জানান, চট্টগ্রাম-৯ আসনে আবু সুফিয়ানের নাম ঘোষণায় সংশোধন রয়েছে। এরপর মহাসচিব তাৎক্ষণিকভাবে সেই ঘোষণা সংশোধন করেন এবং নামটি তালিকা থেকে প্রত্যাহারের কথা জানান।

চট্টগ্রাম-৯ আসনকে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই আসনে জয়ী প্রার্থী সরকার গঠনে প্রভাব রাখেন বলেই রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রচলিত ধারণা রয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রায় সব সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-৯ থেকে বিজয়ী প্রার্থী পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন। এদিকে, আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন ধরে কয়েকজন হেভিওয়েট নেতার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী আগেই তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করায় তিনি ইতোমধ্যে এলাকায় সক্রিয় প্রচারণায় রয়েছেন। চট্টগ্রাম জেলায় মোট ১৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ সবচেয়ে আলোচিত এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত। ফলে সবার চোখ এখন বিএনপি কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই।

👁️ 42 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *