পাপ বাপকেও ছাড়ে না : নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নাজমুল হকের সাত বছর কারাদন্ড !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক  : ন৫ লাখ টাকা ঘুস গ্রহন মামলায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হককে সাত বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক রেজাউল করিম সোমবার এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।


বিজ্ঞাপন

মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ছয় বছর আগে ঘুষের পাঁচ লাখ টাকাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার হন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এস এম নাজমুল হক। ওই ঘুষ গ্রহণের মামলায় তাঁকে সাত বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার একটি হোটেল থেকে ‘ফাঁদ পেতে’ ঘুষের ৫ লাখ টাকাসহ নাজমুল হককে গ্রেপ্তার করে দুদকের একটি দল। ওই দিনই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয় রাজধানীর শাহবাগ থানায়। কিন্তু গ্রেপ্তারের পাঁচ মাস পর তিনি জামিনে মুক্ত হন।


বিজ্ঞাপন

দুদক সূত্র জানায়, সৈয়দ শিপিং লাইনস নামের একটি শিপিং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়ে সব আইনগত প্রক্রিয়া শেষে ফাঁদ পাতা হয়েছিল। পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তাকে সেগুন রেস্তুরাঁয় আসার কথা বলেছিলেন নাজমুল হক। সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল দুদকের একটি দল। ঘুষ নেওয়ার পরপরই দুদকের দলটি হাতেনাতে তাকে গ্রেপ্তার করে।


বিজ্ঞাপন

সৈয়দ শিপিং লাইনের জাহাজের রিসিভ নকশা অনুমোদন ও নতুন জাহাজের নামকরণের অনুমোদনের জন্য ১৫ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন নাজমুল। এর মধ্য থেকে পাঁচ লাখ টাকা আগেই নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় কিস্তির পাঁচ লাখ টাকা নিতে গিয়ে দুদকের ফাঁদে পড়েন তিনি।

এস এম নাজমুল হক ও তাঁর স্ত্রী সাহেলা নাজমুলের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি মামলাও আদালতে চলমান রয়েছে।

উল্লেখ্য যে, এস এম নাজমুল হক নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালে প্রতিটি বড় বড় নৌযানের রেজিষ্ট্রেশন প্রদানে ২০/৩০ লাখ টাকা ঘুস নিতেন। এ ছাড়া তিনি শীপ সার্ভেয়ার থাকা কালে অফিসে বসেই নৌযান সার্ভে দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুস নিতেন। এভাবে মাত্র ১০ বছরের চাকুরী জীবনে তিনি শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। অবৈধ টাকার গরমে তিনি ৩ টি বিয়েও করেছেন। তার বিরুদ্ধে নৌযানের জাল রেজিষ্ট্রেশন প্রদানের অভিযোগও রয়েছে। এ ছাড়া নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের পিডি হয়ে তিনি ওই প্রকল্পে ব্যপক অনিয়ম-দুর্নীত ও অর্থ আত্মসাত করেন। সেটিও দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে।

ইতিপুর্বে প্রধান প্রকৌশলী পদে বসার জন্য তিনি কোটি টাকা খরচ করে দুদকের একটি টিমের মাধ্যমে ফাঁদ নাটক সাজিয়ে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলামকে ফাঁসিয়ে দেন। পরবর্তীতে তার কথামত ফাইল ওয়ার্ক না করায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সদরঘাটে কর্মরত আরেক শীপ সার্ভেয়ার ও প্রকৌশলী মীর্জা সাইফুর রহমানকেও দুদকের ফাঁদ মামলায় ধরিয়ে দেন। এই অপকর্মে তিনি ২ কোটি টাকা খরচ করেন বলে প্রচার রয়েছে। এভাবে আক্রোশ বশত: তিনি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ২ জন দক্ষ কর্মকর্তার চাকুরী জীবন শেষ করে দিয়েছেন। তারা ওই সব মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে আজো নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে ফিরতে পারেন নি।

আরো জানাগেছে,নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী,আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় নেতা মহাদুর্নীতিবাজ শাজাহান খানকে তিনি টাকার বিনিময়ে কিনে নিয়েছিলেন। ফলে তার মাধ্যমে অনেক অবৈধ কাজকে তিনি বৈধ করে নেন। কেবল শাজাহান খানই নয় তার স্ত্রীকেও হীরার নেকলেস উপহার দিয়ে বশীভুত করেন। শাজাহান খানের মেয়েকে লন্ডনের একটি ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেওয়ার সব খরচ বহন করেন এস এম নাজমুল হক।

ফলে নাজমুলের কথামত নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সব ফাইল অন্ধের মত সই করে দিতেন সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। এতে করে এস এম নাজমুল হক নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের অঘোষিত ডিজি বনে গিয়েছিলেন। বিবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকা উপার্জন করলেও তা তিনি ভোগ করে যেতে পারবেন বলে মনে হয় না। কেন না, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। তাইতো আজ তিনি জেলখানার কয়েদী বা বাসিন্দা। ঘুস খাওয়ার আগে সরকারি কর্মকর্তাদের এই কথাটি মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

👁️ 30 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *