থামছে না মৃত্যুর মিছিল

আন্তর্জাতিক এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন সারাদেশ স্বাস্থ্য

বিশ্বে মৃত্যু ২ লাখ ছুঁই ছুঁই
দেশে ১২৭ জনের মৃত্যু
আকান্ত ২১৮ পুলিশ

 

মহসীন আহমেদ স্বপন : বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল যেন থামবার নয়। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। দিনের শেষে সব মিলিয়ে সেই সংখ্যা কয়েক হাজারে গিয়ে ঠেকছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ৬৬ জন।
এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ৪১৪ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪১৮৬। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন আরো ৭ জন। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১২৭। মারা যাওয়া সাত জনের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা। তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা। গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৬ জন সুস্থ হয়ে ওঠায় এ পর্যন্ত মোট ১০৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের পরীক্ষা জন্য ৩ হাজার ৯২১টি নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ হাজার ৪১৬টি নমুনা। দেশে সর্বমোট করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৯০ বার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা।
এ সময় যুক্ত হন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, যারা দেশবাসীর পাশে বিভিন্ন দাঁড়িয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
মন্ত্রী বলেন, যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। দেশে ভিআইপিদের জন্য হাসপাতাল তৈরির যে আলোচনা শোনা যাচ্ছে তা সঠিক নয়। এটা গুজব। আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাবো কেউ গুজব ছড়াবেননা।
বুলেটিনে করোনার বিস্তাররোধে সবাইকে বাড়িতে থাকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়।
তথ্যমতে, দেশের ৬৪ জেলা মধ্যে ৫৮টিতেই করোনা রোগী পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা জেলায়। যেখানো মোট রোগীর প্রায় ৭৩ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। ঢাকার চার জেলার মধ্যে পর্যাক্রমে সংক্রামণে হার বেশি নায়ারণগঞ্জে। এরপর রয়েছে গাজীপুর। গাজীপুরের পর সংক্রামণের হারে এগিয়ে কিশোরগঞ্জ এবং চতুর্থ জেলা নরসিংদী।
ঢাকা সিটির যেসব জায়গায় সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে: রাজারবাগ, মোহাম্মদপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ি, বংশাল, চকবাজার, মিরপুর, উত্তরা, তেজগাঁ, মহাখালী।
দেশে মোট করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ মহিলা। ২১-৩০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক ২৪ শতাংশ আক্রান্ত রোগী।
প্রসঙ্গত, বিগত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ ছুঁই ছুঁই। মারা গেছেন এক লাখ ৮৪ হাজারেরও বেশি মানুষ। তবে ৭ লাখ ২২ হাজারেরও বেশি রোগী ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর প্রথম দিকে কয়েকজন করে নতুন আক্রান্ত রোগীর খবর মিললেও এপ্রিলের শুরু থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এ সংখ্যা।
প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে; যার মূলে রয়েছে মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। মানুষকে ঘরে রাখতে রাজপথের পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় টহল দিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।
২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সেই ছুটি চলছে এখনও। বুধবার সবশেষ জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে ছুটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ মে পর্যন্ত।
ছুটির উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। কিন্তু শুরুতে সরকারের সেই আহ্বান অনেকটা শুনতে দেখা যায়নি মানুষকে। পরবর্তীতে কঠোর হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আদেশ জারি করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত মানুষের বাইরে বেরুনে নিষিদ্ধ করা হয়।
ছুটি ২৬ মার্চ থেকে শুরু হলেও এপ্রিলের শুরু থেকেই হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা। পরীক্ষা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে করোনা রোগী বাড়ায় উদ্বেগ তৈরি হয় সাধারণের মনে। লকডাউন করা শুরু হয় বিভিন্ন জেলা।
এই ভাইরাসকে রুখতে সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় এখনও নেই। বিশ্বের অনেক দেশই চেষ্টা চালাচ্ছে এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের। শতাধিক গবেষণার কয়েকটি মানবদেহে প্রয়োগের কাজও শুরু হয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এমন শঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে যে, এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন হয়তো কোনোদিনই পাওয়া যাবে না।
এছাড়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নেই কোনো স্বীকৃত ওষুধও। জাপানের অ্যাভিগান ও হাইড্রোক্লোরোকুইন এতে মারাত্মক ফল দেয় বলে বিভিন্ন দেশ তথ্য দিলেও পাওয়া গেছে ভিন্ন মতও। তাই আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই বাসায়ই অবস্থান করছেন। অবশ্য বাসায় থেকেই সুস্থও হচ্ছেন অনেকে।
সুস্থতার হার বেশি হলেও এখনও ভাইরাসটিতে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় দ্ইু লাখ মানুষ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী এতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ।
প্রসঙ্গত, বিগত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
আকান্ত ২১৮ পুলিশ : সারাদেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২১৮ জন পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। বৃহস্পতিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের এআইজি সোহেল রানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) পর্যন্ত কনস্টেবল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ ২১৮ জন পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছেন। কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন আরও ৬৫২ জন। আক্রান্ত এই পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তাদের সুস্থ করে তুলতে পুলিশের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানুষের সুরক্ষায় হাসিমুখে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। এতে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু বিশ্ব জুড়েই সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশও এই বাস্তবতা থেকে দূরে নয়। পুলিশের দুই লাখের বেশি সদস্যের একটি বড় অংশ সরাসরি মাঠে থেকে করোনার বিস্তাররোধে কাজ করছেন। তাদেরকে যথাসম্ভব সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এখনও অনেক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা পূরণে কাজ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে পুলিশের সদস্যগণকে সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য জেনে বুঝেই জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছে এবং হচ্ছে। যেহেতু করোনা বিস্তার রোধে পুলিশকে প্রতিটি কাজেই মানুষের খুব কাছে যেতে হয়, মিশতে হয় মানুষের সঙ্গে, তাই নিজের অজান্তেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনা শনাক্ত পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. বেনজীর আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তিনি দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা। নিয়মিত আক্রান্ত সদস্যদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়ার জন্যও দেওয়া হয়েছে নির্দেশনা। পাশাপাশি, দায়িত্বরত আর সবাইকে সুস্থ রাখার জন্যও নেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ।


বিজ্ঞাপন