!! মন্ত্রণালয়–হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য !! রাজউকের ৩০ হাজার নথি গায়েবের দুই বছরেও কোনো ব্যবস্থা নয় : ভিতরের মহলে কোটি টাকার ‘ফাইল বাণিজ্য’ নিয়ে তোলপাড়!

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বানিজ্য বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক :  রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর বহুল আলোচিত ৩০ হাজার নথি গায়েব হওয়ার ঘটনা দুই বছরেও ধামাচাপা রয়ে গেছে। মন্ত্রণালয় ও হাইকোর্ট উভয়পক্ষের নির্দেশ অমান্য করে এই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না—উল্টো গোটা ঘটনাটিই এখন পরিণত হয়েছে রাজউকের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফাইল-স্ক্যান্ডালে।


বিজ্ঞাপন

তদন্ত কমিটি গঠন, প্রতিবেদন দাখিল, দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা—কোনোটিই হয়নি। বরং হাইকোর্টের রুল জারির কয়েক মাস পর রাজউক জানায়, গায়েব হওয়া সব ফাইলই পাওয়া গেছে!
কিন্তু কীভাবে গায়েব হয়েছিল, আবার কীভাবে পাওয়া গেল—এর কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই।

ফাইল গায়েব–উদ্ধারকে ঘিরে জরুরি প্রশ্নগুলো এখনো অমীমাংসিত : ডাটা সেন্টার বলছে, কোনো ডাটা কখনো হারায়নি, রাজউক বলছে, তাদের ৩০ হাজার ফাইল উধাও, আর সাধারণ মানুষ বলছে, এটি ছিল প্ল্যান পাস বাণিজ্যের সবচেয়ে বড় ‘গেম’।


বিজ্ঞাপন

ড্যাপ বাস্তবায়নের গরম বাজারে হঠাৎই ‘৩০ হাজার ফাইল’ হারিয়ে যায় : ২০২২ সালের আগস্টে ড্যাপ অনুমোদনের পর রাজধানীতে ভবন নির্মাণের নিয়ম পাল্টে যায়। যারা ২৩ আগস্টের আগে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন করেছিলেন, তারা আগের নিয়মে বাড়তি ফ্লোর এরিয়া পাচ্ছিলেন।


বিজ্ঞাপন

ঠিক এই সময়েই— গত ৬ ডিসেম্বর ২০২২ সালে রাজউকের ওয়েবসাইট অকার্যকর হয়। এরপর ঘোষণা আসে —- > “৩০ হাজার ফাইল গায়েব হয়ে গেছে।” ফাইল হারানোর অভিযোগ উঠতেই শুরু হয় নতুন খেলা—ব্যাপক অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকা দিলে ‘উদ্ধার হওয়া ফাইলের তালিকায়’ নাম উঠছে। প্ল্যান পাসকে কেন্দ্র করে রাজউকের ভেতরে শুরু হয় ঘুষ–বাণিজ্যের উৎসব।

ডাটা সেন্টারের চাঞ্চল্যকর দাবি :  রাজউকের কোনো ফাইল কখনোই গায়েব হয়নি!, রাজউকের ডাটা সংরক্ষিত ছিল বিশ্বের সর্বাধুনিক ফোর-টায়ার সরকারি ডাটা সেন্টারে (বিডিসিসিএল)।

এই ডাটা সেন্টারের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান— “আমাদের সেন্টারে কোনো ডাটা কখনো নষ্ট হয়নি, হ্যাক হয়নি, হারায়ওনি। রাজউক কেন মিথ্যা বলেছে, সেটা তারাই জানে।”

এ ধরনের ডাটা সেন্টারে ডেটা সুরক্ষায় চার স্তরের ব্যাকআপ থাকে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ডাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি— শুধু রাজউকের ডাটা নাকি ‘উধাও’? এ দাবি অস্বীকার করেছে ডাটা সেন্টার।

আরও চাঞ্চল্যকর বিষয়— রাজউক কখনোই বিডিসিসিএলকে চিঠি দেয়নি ডাটা হারানো বিষয়ে! নিয়ম অনুযায়ী প্রথম চিঠি দেওয়ার কথা ছিল রাজউকের। কিন্তু তারা দিলই না— কারণ? “ডাটা হারায়নি, নিজেরাই হারিয়েছে বলেছে”—ডাটা সেন্টারের কর্মকর্তার ইঙ্গিত।

হাইকোর্টের রুল অমান্য : দায়িত্বহীনতার নজিরবিহীন ঘটনা,
২০২৩ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট suo motu রুল জারি করে রাজউককে চার সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়।

কিন্তু রাজউক—আদেশ মানেনি, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেয়নি, দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, চার মাস পর যেটুকু জবাব দিয়েছে তাতেও নেই—কীভাবে ফাইল গায়েব হলো, কে দায়ী, কীভাবে উদ্ধার হলো, আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি হাইকোর্ট অবমাননার একটি স্পষ্ট উদাহরণ।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশও উপেক্ষিত—তদন্ত রিপোর্ট গায়েব, ঠিক ফাইলের মতোই !  একই দিন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় রাজউককে ‘৭ কার্যদিবসের মধ্যে’ তদন্ত রিপোর্ট চায়।

রাজউক জানায়—একজন বুয়েট প্রফেসরের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু—সেই তদন্ত রিপোর্ট কখনও প্রকাশই করা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশও কার্যত অমান্য। রাজউকের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য—“তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হলে ভয়ংকর সব তথ্য বেরিয়ে যেত।”

ফাইল গায়েব ছিল না—ছিল সুবিধা আদায়ের অস্ত্র : রাজউকভুক্ত কর্মকর্তা ও আইটি ফার্ম টেকনো হেভেন–এর যোগসাজশে এটি ছিল একটি ‘ফাইল গায়েব–বাণিজ্য’।

অভিযোগগুলো—ঘুষ নিলে বলা হতো: “আপনার ফাইল পাওয়া গেছে।” ফাইল ঠিক রাখতে নতুন ঘুষ দিতে হয়েছে অনেককে।

টেকনো হেভেনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল টেন্ডার ছাড়াই : প্রতিষ্ঠানের প্রভাবশালী মহল—রাজউক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, ফলাফল—রাজউকের নাম ভাঙিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া।

নিম্ন আদালতের মামলায়ও রহস্যঘেরা কারসাজি  : ফাইল গায়েবের ঘটনায় জিডি হয়, পরে তা মামলায় রূপ নেয়।কিন্তু পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হলো— “কেউ দায়ী নয়, কোনো অপরাধ হয়নি!”

এ রিপোর্টে রাজউক ‘নারাজি’ দিলেও সূত্র বলছে—এই রিপোর্ট ছিল ম্যানেজড, এতে যুক্ত ছিল টেকনো হেভেন ও সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী মহল।

হাইকোর্ট ও গণমাধ্যমের চাপেই ফাইল ‘উদ্ধার’—তার আগে নয় ! একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার গত ১ মে ২০২৩ সংখ্যায় বিস্ফোরক অনুসন্ধান প্রকাশের পর রাজউকের ওপর চাপ বাড়ে।

এর পরই তারা ঘোষণা দেয়—“৩০ হাজার ফাইল উদ্ধার হয়েছে।”
অথচ তার আগে চার মাসেও তারা কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

উপসংহার : রাজউকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ফাইল-স্ক্যান্ডাল এখনো অমীমাংসিত, দুই বছর অতিবাহিত হলেও—দায়ীদের শাস্তি হয়নি, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি, হাইকোর্ট আদেশ মানা হয়নি, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশও উপেক্ষিত, ডাটা সেন্টার বলছে ‘ফাইল হারায়নি’ আর রাজউক বলছে ‘হারিয়েছে’

ফলে প্রশ্ন উঠছে— এটি কি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল জালিয়াতি? নাকি ঘুষ–বাণিজ্যের আড়ালে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ অপব্যবহারের এক নগ্ন রূপ? রাজউকের ৩০ হাজার ফাইল গায়েব–আবার পাওয়া—পুরো ঘটনাই আজও রয়ে গেছে রহস্যে মোড়া।

👁️ 25 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *