
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়কালে এমএসএফ–এর প্রতিনিধিদল।

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম নগরে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি রোধে এবার একযোগে কাজ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও আন্তর্জাতিক মানবিক স্বাস্থ্যসংস্থা ‘মেডসাঁ সঁ ফ্রঁতিয়ের’ (এমএসএফ)। নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও জরুরি প্রতিক্রিয়াশীল করতে এই অংশীদারত্বকে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে চসিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমএসএফের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিদল চট্টগ্রামে সম্ভাব্য ডেঙ্গু প্রতিরোধ উদ্যোগ, ভেক্টর কন্ট্রোল কৌশল, জনস্বাস্থ্য নজরদারি, প্রশিক্ষণ এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থার একটি সমন্বিত প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। বৈঠকে উভয় পক্ষই যৌথ কর্মপরিকল্পনায় কাজ শুরু করার বিষয়ে একমত হন।

“ডেঙ্গু–চিকুনগুনিয়া এখন শীর্ষ জনস্বাস্থ্য সংকট” — মেয়র : মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন স্পষ্ট ভাষায় বলেন—“ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ এখন চট্টগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার। নগরবাসীর জীবন রক্ষায় আমাদের কার্যক্রমকে আরও বৈজ্ঞানিক, কার্যকর ও সমন্বিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা এমএসএফ-এর অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

তিনি জানান, চসিক ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে মশার ঘনত্ব জরিপ, হটস্পট শনাক্তকরণ, লার্ভা ধ্বংস, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, রাস্তা–নর্দমা পরিষ্কার এবং জরুরি প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি পর্যালোচনা করছে।
এমএসএফের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরিকল্পনা : সভায় এমএসএফ প্রতিনিধিদল তাদের আন্তর্জাতিক জরুরি স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। বিশেষত তারা যে বিষয়গুলোতে সহায়তা দিতে আগ্রহী— ডেটা অ্যানালাইসিস ও রোগ বিস্তারের পূর্বাভাস, লার্ভা ও প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কৌশল, স্বাস্থ্যকর্মী প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রস্তুতি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া টিম গঠন এবং টেকসই ও গবেষণাভিত্তিক প্রতিরোধ কাঠামো নির্মাণ।
এমএসএফ প্রতিনিধিরা জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি ও বৈজ্ঞানিক ডেঙ্গু প্রতিরোধ কাঠামো গড়ে তুলতে আগ্রহী।
“এটি চট্টগ্রামের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট” — মেয়র : মেয়র আরও বলেন—“ডেঙ্গু প্রতিরোধ শুধুই চসিকের নয়; এটি সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্মিলিত দায়িত্ব। এমএসএফ-এর মতো আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পাশে দাঁড়ানো চট্টগ্রামের জন্য একটি বড় অর্জন।”
বৈঠকে চসিক ও এমএসএফ প্রতিনিধিরা ভবিষ্যতের জন্য—
সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, যৌথ কর্মসূচি বাস্তবায়ন, দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলা—এসব বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমএসএফের— রিজিওনাল অপারেশনাল ডিরেক্টর পল ব্রকম্যান, রিজিওনাল হেলথ ডিরেক্টর ড. মার্ক শারলক, কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইকে হারসভোর্ট, চিফ অব হেলথ ড. কারমেনজা গালভেজ, ডেপুটি চিফ অব হেলথ ড. রেজওয়ান মাসুম, হেড অব ডেঙ্গু রেসপন্স দিনালি ডি জয়সা। এছাড়া চসিক কর্মকর্তারাও নগরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি, বিদ্যমান কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ যৌথ অংশীদারিত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
উপসংহার : চসিক–এমএসএফের এই সহযোগিতা চট্টগ্রামে ডেঙ্গু–চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করবে—এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মেয়র। বিশেষজ্ঞ সহায়তা, বৈজ্ঞানিক কৌশল ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা এই উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করবে বলে তিনি মনে করেন।
