দুর্নীতির তিন মুখোশ উন্মোচনে দুদকের একযোগে অভিযান কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ ও ঢাকায় টিআর–কাবিটা, হাসপাতাল ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়মের অভিযোগে তোলপাড়! 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক :  দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল থেকে দেশব্যাপী একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সর্বশেষ কুড়িগ্রাম, ঝিনাইদহ ও ঢাকায় পরিচালিত তিনটি এনফোর্সমেন্ট অভিযানে উঠে এসেছে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, সরকারি হাসপাতালের ওষুধ বাণিজ্য ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়মের ভয়াবহ চিত্র।


বিজ্ঞাপন

কুড়িগ্রামে টিআর–কাবিটা প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ :  কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলায় টিআর ও কাবিটা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না করেই বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুড়িগ্রাম থেকে আজ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযান পরিচালনা কালে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম রাজিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের তালিকা সংগ্রহ করে। প্রাপ্ত তালিকা থেকে ৮টি প্রকল্পের কাজ নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে সরেজমিন পরিমাপ গ্রহণ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রয়োজনীয় নথিপত্র তলব করা হয়।


বিজ্ঞাপন

সংগৃহীত পরিমাপ প্রতিবেদন ও নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে দুদক টিম বিষয়টি নিয়ে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে, যা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের ভিত্তি হবে বলে জানা গেছে।


বিজ্ঞাপন

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ওষুধ বাণিজ্য ও দালাল চক্রের অভিযোগ  : অপরদিকে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ওষুধ বাইরে বিক্রয়, চিকিৎসাসেবা পেতে হয়রানি এবং নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঝিনাইদহ থেকে আরেকটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।

দুদক টিম প্রথমে ছদ্মবেশে রোগী সেজে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসক ও নার্সদের সেবার মান, সরবরাহকৃত ওষুধ এবং খাবারের মান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, প্যাথলজি বিভাগ, স্টোররুম, ওষুধ বিতরণ ব্যবস্থা ও রান্নাঘর সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়।

পরিদর্শনকালে রোগী ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে জানা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত সব ওষুধ তারা পাচ্ছেন না। এছাড়া হাসপাতালের আশপাশে দালাল চক্রের সক্রিয় উপস্থিতির তথ্য পাওয়া যায়, যারা রোগীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি ক্লিনিকে রোগী সরবরাহে জড়িত বলে অভিযোগ উঠে।

পরবর্তীতে দুদক টিম হাসপাতালের ওষুধের স্টক ও বিতরণ সংক্রান্ত রেজিস্টার যাচাই-বাছাই করে। প্রাপ্ত সব তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছে টিম।

ধামরাইয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়ম যাচাই  : এদিকে, ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কালামপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা–২ থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযান পরিচালনা কালে দলিল রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন ও যাচাই-বাছাই করা হয় এবং অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। এসব রেকর্ড বিশ্লেষণ শেষে কমিশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের বার্তা স্পষ্ট  : একযোগে তিন জেলায় পরিচালিত এসব অভিযানে স্পষ্ট হয়েছে—উন্নয়ন প্রকল্প, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থা—কোনো ক্ষেত্রেই অনিয়মের অভিযোগ এলে চুপ থাকছে না দুর্নীতি দমন কমিশন। মাঠপর্যায়ে নেমে তথ্য সংগ্রহ, নথিপত্র যাচাই ও নিরপেক্ষ পরিমাপের মাধ্যমে দুদক যে কঠোর অবস্থানে রয়েছে, তা আবারও প্রমাণিত হলো। এখন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশনের পরবর্তী সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে দেশবাসী।

👁️ 84 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *