ব্যাংক আইনের তোয়াক্কা না করে সাবেক আমলার পদ বিলাস

অপরাধ অর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংকের কোনো আইনের তোয়াক্কা না করেই পদ বিলাসিতা করে যাচ্ছেন সাবেক আমলা জাকির আহমেদ খান। খালেদা-নিজামী সরকারের অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খান একাই দখল করে আছেন অনেকগুলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পদ। তিনি বিএনপি-জামায়াতের আশীর্বাদপুষ্ট আমলা হিসেবে বিএনপি শাসনামলে সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময় বিএনপি জামাত চারদলীয় জোটের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার কার্যকর ভূমিকা ছিল। পরবর্তীতে সরকারি চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রভাব খাটিয়ে ধীরে ধীরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে ২০১০ সালে উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন সাউথইস্ট ব্যাংকে। তখন থেকে আজ অবধি দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ব্যাংকের উপদেষ্টা পদে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে একের পর এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ দখল করে আছেন। মূলত সাউথ ইস্ট ব্যাংকের উপদেষ্টা পদের প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পদ দখল করেন। যেটা স্পষ্টতই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম পরিপন্থী। তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও অবৈধভাবে উপদেষ্টা পদ দখল করে মাসের পর মাস বেতন নিচ্ছেন। আবার অবৈধভাবে ঋণ সুবিধা পাইয়ে দিয়ে ব্যাংকের টাকা লুটপাট করছেন হরহামেশা। সূত্রমতে জানা গেছে, জাকির আহমেদ খান ২০১০ সালে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে টানা দশবার সাউথইস্ট ব্যাংকের উপদেষ্টা পদে নবায়ন পান। কেবল সাউথ ইস্ট ব্যাংকেই এগারো বছর ধরে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি জামাত ঘেঁষা সাবেক এই আমলা। আর এই পদকে ব্যবহার করে দিনের পর দিন বেরকারি সেক্টরে করে গেছেন লাগামহীন লুটপাট। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের উপদেষ্টা থাকার পরও অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিচালক পদে নিয়োগ পান। যা ব্যাংকের স্বার্থ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম বিরোধী। এর মধ্যে রয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক গ্রিন ফাউন্ডেশন এর সদস্য, সাউথইস্ট ব্যাংক গ্রীন স্কুলের পরিচালক, সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড এর সর্বেসর্বা, বে লিজিং এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এ স্বতন্ত্র পরিচালক, বিএলআই ক্যাপিটাল লিমিটেড এর পরিচালক, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সু্যুরেন্স এর স্বতন্ত্র পরিচালক, ক্রাউন সিমেন্ট এর স্বতন্ত্র পরিচালক, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর সদস্যসহ আরো কিছু পদ।
সাউথইস্ট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানায়, অন্য প্রতিষ্ঠানে কাগজে কলমে জড়িত থাকলেও সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড এ অলিখিতভাবে রয়েছেন জাকির আহমেদ খান। এই প্রতিষ্ঠানের খাতা কলমে কোথাও জাকির আহমেদ নেই। কিন্তু সব কিছু তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তিনি। সব ধরনের নিয়োগ, প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট, বোনাস সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন এককভাবে তিনি। অন্যদিকে তিনি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক। সকল আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের সকল স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে আসীন রয়েছেন কোনো এক দৈব ক্ষমতার বলে। ক্রাউন সিমেন্ট সাউথইস্ট ব্যাংকের গ্রাহক। একই গ্রুপের জিপিএস ইস্পাতও সাউথইস্টের গ্রাহক। এদরকে অবৈধভাবে ঋণ সুবিধা পাইয়ে দেয়া ও অন্যান্য সুবিধার নাম করে জাকির আহমেদ খান প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক পদে যোগদান করেন। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট মূলত একটি আর্থিক খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান। জাকির আহমেদ খান এই প্রতিষ্ঠানেও পরিচালক পদে আছেন। আরেকটি বিষয় হলো এই প্রতিষ্ঠান আবার সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক। এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা অফিশিয়ালি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এইসব আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে জাকির আহমেদ খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পর আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এযাবৎকালের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ভয়াবহ স্ক্যামগুলোর চেয়ে এটিও কোনো অংশেই কম নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মিডিয়া কর্মী ইব্রাহিম পাটোয়ারী। মো. নাছের জানান, চিঠি পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর প্রধান কর্মকর্তা আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বরাবর অনুলিপি পাঠানো হয়। রাজী হাসান এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পরিচালক জানান, এই অভিযোগটি এর মধ্যেই আমলে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। শিগগিরেই হয়তো তদন্ত শুরু হবে। ব্যাংকিং খাতকে এ ধরনের দুর্নীতিপরায়ণ পদবিলাসী আমলার হাত থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যথোপযুক্ত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।


বিজ্ঞাপন