!  বিশেষ প্রতিবেদন !!  গণপূর্তে দুর্নীতির মহানায়ক খায়রুজ্জামান সবুজ  !!  ফরিদপুরে বদলি হলেও রয়ে গেছে অভিযোগের পাহাড় — আওয়ামী ঠিকাদার সিন্ডিকেটের নেপথ্যে এই প্রকৌশলী

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত খুলনা গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুজ্জামান সবুজের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পিরোজপুর, মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বেছে বেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতেন। জুলাই আন্দোলনের পর পিরোজপুরে অসংখ্য আওয়ামী ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে তাদের আর্থিক পুনর্বাসনের পাশাপাশি নিজেও কমিশনের নামে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ আদায় করেন—এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে নির্ভরযোগ্য সূত্র।


বিজ্ঞাপন

কাজের নামে কমিশন বাণিজ্য”  : অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদপুরে বদলি হওয়ার ঠিক আগে চলতি অর্থবছরেও তিনি স্বৈরাচার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের একাধিক কাজ পাইয়ে দেন।

২০২৫–২৬ অর্থবছরে মো. ইকবাল জমাদ্দারের নামে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় পিরোজপুর পুলিশ লাইনের ব্যারাক রেট্রোফিটিং, মেসার্স আরিন এন্টারপ্রাইজকে ৫৮ লাখ টাকায় জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুম সংস্কার, মেসার্স মাহফুজ ট্রেডার্সকে ৬৬ লাখ টাকায় আনসার-ভিডিপি অস্ত্রাগার ভবন নির্মাণ এবং ঢাকার ফায়ার ট্রেডকে ৪১ লাখ টাকায় বিদ্যুতায়ন কাজ পাইয়ে দেন।


বিজ্ঞাপন

স্থানীয় দুই ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন—“রেকর্ডরুমের কাজ তিনি নিজস্ব লোক দিয়ে করিয়ে বাইরের ঠিকাদারদের নামে টেন্ডার দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।”


বিজ্ঞাপন

পিরোজপুরে দুর্নীতির মহোৎসব :  ২০২৪–২৫ অর্থবছরে পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগে চলে দুর্নীতির মহোৎসব। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পুরাতন প্লাস্টার ফেলে নতুনভাবে প্লাস্টার, জেলা কারাগারে ট্রান্সফরমার স্থাপন, মঠবাড়িয়া কোর্ট ভবনের জরুরি স্যানিটারি মেরামত, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পুকুর প্যালিসাইডিং, বিভাগীয় অফিসে নবায়ন ও ড্রেন নির্মাণ, এসপি অফিসে সাবস্টেশন—সব কাজই আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, সদর ও মঠবাড়িয়াসহ চারটি মডেল মসজিদের টেন্ডারে ৬০ কোটি টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন খায়রুজ্জামান সবুজ।

মুন্সীগঞ্জেও একই কাহিনি :  মুন্সীগঞ্জে থাকাকালীন সময়েও একই ধাঁচের দুর্নীতি অব্যাহত রাখেন এই প্রকৌশলী।

২০২৩–২৪ অর্থবছরে মুমু এন্টারপ্রাইজ, রত্না এন্টারপ্রাইজ, ইসলাম ট্রেডার্স ও রফিক কনস্ট্রাকশনসহ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ একাধিক প্রতিষ্ঠান তার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার কাজ পায়। কোস্টগার্ড অফিস, আনসার ভবন, হাসপাতাল ও আদালত প্রাঙ্গণ—সবখানেই চলে অনিয়মের ছায়া।

গজারিয়া উপজেলায় ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকার ক্যাবল ট্রেঞ্চ নির্মাণ থেকে শুরু করে ৯৮ লাখ টাকার পিসিআর ল্যাব স্থাপন পর্যন্ত, সর্বত্রই তার কমিশন সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল।

টেন্ডারে কারচুপি ও প্রমাণ লোপাট :  মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীতে দায়িত্ব পালনকালে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কারচুপি ছিল নিয়মিত বিষয়। বেশিরভাগ টেন্ডারে মাত্র এক বা দুইটি সিডিউল ফেলা হতো, আবার ২০ জন অংশগ্রহণকারী থাকলেও রেসপন্স করা হতো মাত্র এক-দুজনের মাধ্যমে, যাতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া যায়। এই সংক্রান্ত একাধিক নথি ও ডিজিটাল প্রমাণ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

দলের অনুগত কর্মকর্তা থেকে ‘রঙ বদলানো’ প্রকৌশলী : খায়রুজ্জামান সবুজ ছিলেন শেখ হাসিনার সময়কার গণপূর্তের অন্যতম দাপুটে প্রকৌশলী। দলীয় আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ জেলায় পদায়ন পেতেন নিয়মিত। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর তিনি নিজের রঙ বদলে বিএনপিপন্থী পরিচয়ে টিকে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা চালান। তবুও ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মুন্সীগঞ্জ থেকে পিরোজপুরে বদলি করা হয় তাকে। এরপর ফরিদপুরে পদায়ন হয়েও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা বা সম্পদের তদন্ত এখনো হয়নি।

“বদলি হয়েছে কিন্তু  বিচার হয়নি”  স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ— “তাকে শুধু এক জেলা থেকে আরেক জেলায় সরানো হয়েছে, কিন্তু দুর্নীতির হিসাব নেওয়া হয়নি।”

জানা গেছে, ঢাকার মোহাম্মদপুরে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, একাধিক ফ্ল্যাট ও নাম-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই কর্মকর্তা।

নিজের অবস্থান জানাতে অস্বীকৃতি  :  এ বিষয়ে ফরিদপুর নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুজ্জামান সবুজকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, “আমি মন্ত্রণালয়ে আছি।”এরপরই ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

👁️ 630 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *