উত্তরা থেকে ভূয়া চাকুরীদাতা ৮ প্রতারক গ্রেফতার

অপরাধ আইন ও আদালত এইমাত্র

র‌্যাব-৪ এর অভিযান

আজকের দেশ ডেস্ক : এলিট ফোর্স হিসেবে র‌্যাব আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই আইনের শাসন সমুন্নত রেখে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধ চিহ্নিতকরণ, প্রতিরোধ, শান্তি ও জনশৃংখলা রক্ষায় কাজ করে আসছে। সাম্প্রতিক কালে প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র। জঙ্গীবাদ, খুন, ধর্ষণ, নাশকতা এবং অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি সাম্প্রতিক এসব প্রতারক চক্রের সাথে সম্পৃক্ত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‌্যাব সদা সচেষ্ট।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে গত ১৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখ বিকাল ১৬.৩০ হতে অদ্য ১৮ অক্টোবর ২০১৯ তারিখ ০৬.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ঢাকার উত্তরায় সেক্টর-০৪ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভূয়া নিয়োগপত্র প্রদান ও লোক দেখানো ভূয়া চাকুরী প্রদানের মাধ্যমে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারকচক্রের ০৮ সদস্য যথাক্রমে ১। গিয়াসউদ্দিন পিন্টু @ আকাশ (৩৭), জেলা- গোপালগঞ্জ, ২। মোঃ হাসান গাজী (৩১), জেলা- গোপালগঞ্জ, ৩। মোঃ বিল্লাল শেখ (৩০), জেলা-ময়মনসিংহ, ৪। শেখ শের আলী রাজু (৩০), জেলা- বাগেরহাট, ৫। গনেশ প্রসাদ সাধন (৪১), জেলা- গাইবান্ধা, ৬। মোঃ সোহাগ (৩১), জেলা- খুলনা, ৭। মোঃ আজাদুল ইসলাম (১৯), জেলা- গাইবান্ধা, ৮। রশি আক্তার (২১), জেলা-শেরপুর, গাজীপুরদের গ্রেফতার করে এবং তাদের কাছ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন শূন্য পদে অফিস সহকারী পদে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যোগদানের (ক) ভূয়া নিয়োগপত্র, (খ) এপি ফাউন্ডেশনের মানি রিসিপ্ট, (গ) গোল্ডেন লাইন মেডিকেল সেন্টার এর সীল যুক্ত খালী মেডিকেল চেক-আপ ফরম, (ঘ) এপি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিঃ এর বাধাই করা প্রজেক্ট প্রাফাইল, (ঙ) এপি ফাউন্ডেশন এর টাইপকৃত প্যাডে চেয়ারম্যান, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বরাবর প্রদত্ত চিঠির কপি, (চ) এপি ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীর নামযুক্ত পদবীর সীল, (ছ) কম্পিউটারের সিপিইউ, ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রতারণার কথা স্বীকার করে প্রতারণার কলাকৌশল, তাদের সংগঠন ও প্রতারণা চক্রের নানাবিধ অভিনব তথ্য দেয় যা নি¤েœ বর্ণনা করা হলোঃ
বিবেক বর্জিত এই প্রতারকচক্রের প্রতিটি সদস্য নৈতিকতা ও মানবিকতার পৃষ্ঠে পদাঘাত করে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক তথা তার পরিবারকে করেছে নিঃস্ব, রিক্ত, হতাশাগ্রস্থ। এ প্রতারণাচক্রের প্রতিটি সদস্য যার যার অবস্থানে থেকে নিখুঁত ও দক্ষতার সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে। এই চক্রটি রাজধানীর উত্তরা ও বিভিন্ন এলাকায় অফিস ভাড়া করে জাঁকজমকপূর্ন চোখ ধাঁধাঁনো ডেকোরেশন করে যা গ্রাহককে সহজেই আকৃষ্ট করে। চক্রটি বিভিন্ন সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রথমে অফিসের বিভিন্ন পদের লোক নিয়োগ করে থাকে।
এই পর্যায়ে চাকুরী প্রত্যাশীদের সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ উর্দ্ধতন ভুয়া কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে এবং চাকুরী প্রত্যাশীদের যাবতীয় কাগজপত্র লোক দেখানো যাচাইবাচাই করে চাকুরী সংক্রান্তে বিভিন্ন প্রকার শর্তাদি আরোপ করে। চাকুরী প্রত্যাশীরা প্রদত্ত শর্তাবলীতে সম্মত হলে চাকুরী প্রদানের বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে মৌখিক অথবা লিখিত চুক্তি সম্পন্ন করে। প্রতারকচক্রের এ পর্যায়ের সদস্যরা প্রতারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা সংশ্লিষ্ট চাকুরী প্রার্থীকে সচিবালয়ের ভিতরে নিয়ে মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এ পর্যায়ে উক্ত প্রতারকচক্র চাকুরী প্রত্যাশীদের মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণসহ ভূয়া নিয়োগপত্র প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে নিয়োগপত্র প্রদান করে এবং চুক্তি মোতাবেক সমুদয় টাকা গ্রহণ করে। তারা চাকুরী প্রার্থীকে হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য সেবিকা, তাদের অফিসের আঞ্চলিক ম্যানাজার এবং বিভিন্ন ধরনের চুক্তি ভিত্তিক, অস্থায়ী ভিক্তিক, মাস্টার রোলে ভূয়া চাকুরীতে ২/১ মাসের জন্য নিয়োগ দেয় এবং বেতন প্রদান করে। পরবর্তীতে চাকুরী প্রার্থীরা জানতে পারেন তাদের নিয়োগপত্র এবং চাকুরী উভয়ই ভূয়া এবং তারা প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন।
প্রতারকচক্রটি এপি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিঃ এর নকল লগো ব্যবহার করে এপি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিঃ এর অধীনে ১। এপি এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট, ২। এপি ফিশারিজ এন্ড এগ্রিকালচার, ৩। এপি ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্ট, ৪। এপি সিকিউরিটি ফোর্স এন্ড ক্লির্নার সার্ভিস, ৫। এপি ফাউন্ডেশন, ৬। এপি ফ্যাশন নামক বিভিন্ন ভূয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। রাজধানীর উত্তরায় প্রতরণা কাজে ব্যবহারের জন্য তাদের ০২টি অফিস এবং জামালপুরে লোক দেখানো ভূয়া ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। প্রতারকচক্রটি ৩/৪ বছর ধরে কাজ করছে এবং প্রতারণার মাধ্যমে ২/৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বারের নিকট বিভিন্ন চিঠি প্রদান করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়। উপরোক্ত বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।


বিজ্ঞাপন
👁️ 20 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *