নিরাপত্তা হুমকিতে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা

অন্যান্য অর্থনীতি এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন ঢাকা রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো। রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হচ্ছে এসব স্থাপনা। সম্প্রতি পুরান ঢাকার জাহাজ বাড়ি ভেঙে ফেলায় শঙ্কা আরও বেড়েছে। উচ্চ আদালত এসব ভবনের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে তা রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশ দেওয়ার পরও আদেশ মানছে না সংশ্লিষ্টরা। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না বলে অভিযোগ করেছে হেরিটেজ স্থাপনা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, অতিদ্রুত নিরাপত্তা না বাড়ালে প্রভাবশালীদের ‘আক্রমণে’ হারিয়ে যাবে স্থাপনাগুলো।
ঈদের আগের দিন রাতে পুরান ঢাকার চক সার্কুলার রোডের ‘জাহাজ বাড়ি’ ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে বাড়িটি রক্ষার জন্য ২৯ মার্চ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘আরবার স্টাডি গ্রুপ’র প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ৬ জুন বাড়িটি ভাঙা শুরু হলে তিনি আরও একটি জিডি করেন। তখন ভাঙার কাজ বন্ধ করা হলেও বাড়িটি রক্ষা করা যায়নি। পুলিশও এর সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করেনি।
এর আগেও সূত্রাপুর থানাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি হেরিটেজ বাড়ি ভাঙা শুরু হলে পুলিশের সহযোগিতায় তা বন্ধ করা হয়। কিন্তু জাহাজ বাড়ি রক্ষা করা না যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মনে শঙ্কা বেড়েছে।
২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চারটি অঞ্চলকে ঢাকার ঐতিহ্য বা হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে রাজউক। গেজেটে ৯৩টি স্থাপনা ও ১৩টি সড়ক ঐতিহ্যবাহী এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৭ সালে হেরিটেজের সংখ্যা ৭৫টিতে নামিয়ে আনা হয়। ১৩টি সড়কও বাদ দেওয়া হয় তালিকা থেকে।
রাজউকের তালিকাকে ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে আরবান স্টাডি গ্রুপ ২০০৪ সালে ঢাকার প্রায় দুই হাজার ৭০০ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকা তৈরি করে। এর মধ্যে গ্রেড-১ ও ২-এ দুই হাজার ২০০ ভবন রয়েছে। এই তালিকা রাজউক, সিটি করপোরেশন, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরে জমা দিয়ে কোনও লাভ হয়নি। পরে ২০১২ সালে তারা ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করে।
রিটের রায়ে আদালত বলেন, কোন কোন ভবন ঐতিহ্যবাহী ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন তার তালিকা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আরবান স্টাডি গ্রুপের খসড়া তালিকাভুক্ত ভবনে কোনও পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা যাবে না। তালিকাভুক্ত এসব বাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণের নকশা অনুমোদন না দিতে রাজউককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তালিকাভুক্ত এসব স্থাপনা যথাযথ আছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি করতে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিকে কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন তিন মাস পরপর আদালতে দাখিল করতে হবে। ওই তালিকায় গ্রেড-১-এ জাহাজ বাড়িটিও অন্তর্ভুক্ত আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাইমুর ইসলাম বলেন, এটা স্পষ্ট, ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো নিয়ে এখন প্রভাবশালীরা অঘোষিত যুদ্ধই ঘোষণা করেছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, রাজউক ও পুলিশ কেউ আদালতের আদেশ মানছে না। ভবনগুলো ভাঙার ক্ষেত্রে দস্যুদের মতো আচরণ করা হচ্ছে। আমরা অনেক জিডি করেছি। সফল হয়েছি তা না, অনেক ক্ষেত্রে হেরিটেজ রক্ষা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, শঙ্কায় আছি যেভাবে ভবনগুলো ভাঙা হচ্ছে তাতে ঐতিহ্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। আর রাজউক যে গেজেট করেছে প্রতœতত্ত্ব আইন অনুযায়ী তা তারা করতে পারে না।
এক প্রশ্নের জবাবে এই তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার ইতিহাস ৪০০ বছরের। এই ইতিহাস আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা একটা আমানত। এজন্য এটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই। কিন্তু রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এসব স্থাপনা। অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় এসব ভবন ভাঙা অনেকটা সহজ।
এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) রাখী রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বারবার ফোন করেও রাজউক চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদকেও পাওয়া যায়নি।
সংস্থার মহাপরিচালক হান্নান মিয়া বলেন, তিনি জাহাজ বাড়ি ভাঙার বিষয়ে কিছুই জানেন না। আদালতের নির্দেশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলেও কিছুই জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, আমি এ দফতরে নতুন এসেছি। কেউ আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি। আমি একটু স্টাডি করে জানতে পারবো।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *