
নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে কক্সবাজার, যশোর ও কিশোরগঞ্জ—দেশজুড়ে পরিচালিত এসব এনফোর্সমেন্ট অভিযানে ঘুস বাণিজ্য, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং হাসপাতালের সেবা ব্যবস্থার ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া যেতে ঘুস? বোয়েসেল কার্যালয়ে দুদকের অভিযান : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)–এর মাধ্যমে সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া গমনের ক্ষেত্রে ঘুস গ্রহণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা হতে বোয়েসেল কার্যালয়ে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান পরিচালনা কালে দক্ষিণ কোরিয়া গমনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত তথ্য ও প্রাসঙ্গিক রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি একাধিক সেবাগ্রহীতার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। সংগৃহীত তথ্য ও নথিপত্র পূর্ণাঙ্গভাবে পর্যালোচনার পর কমিশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।

মৎস্য প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ, কক্সবাজারে মাঠে নামল দুদক : কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের আওতাধীন ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কক্সবাজার থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযান পরিচালনা কালে প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহের পাশাপাশি টিম ঈদগাঁও উপজেলার অন্তর্গত দুইটি মৎস্য অভয়াশ্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করে। মাঠপর্যায়ের তথ্য ও সংগৃহীত নথিপত্র বিশ্লেষণ করে কমিশনের নিকট পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
যশোর–খুলনা মহাসড়কে নিম্নমানের কাজ! নমুনা সংগ্রহ দুদকের : যশোর–খুলনা মহাসড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন, যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে আরেকটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযোগস্থল সরেজমিন পরিদর্শনের সময় নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, যশোর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও পরীক্ষণ প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে কমিশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
হাসপাতালের খাবারেই দুর্নীতি ! কুলিয়ারচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভয়াবহ চিত্র : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ–এ সেবা প্রদানে অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা কার্যালয়, কিশোরগঞ্জ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান পরিচালনা কালে হাসপাতালের সকল বিভাগ পরিদর্শন ও রোগীদের সাথে কথা বলে দুদক টিম। পরিদর্শনে দেখা যায়—রোগীদের জন্য সরবরাহকৃত খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের খাবারে মাংসের পরিমাণ কম, ব্যবহৃত তেলের মান নিম্নমানের এবং নির্ধারিত ডায়েট চার্ট অনুযায়ী মাছ সরবরাহ করা হচ্ছে না। রোগীরা অভিযোগ করেন, বরাদ্দের তুলনায় কম খাবার দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া হাসপাতালের পরিবেশ অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর বলেও প্রতীয়মান হয়। প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে কমিশনের নিকট পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছে দুদক।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে দুদক : একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতে একযোগে পরিচালিত এসব অভিযান আবারও প্রমাণ করলো—দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক এখন আগের চেয়ে আরও সক্রিয় ও কঠোর। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তে কী উঠে আসে, তা এখন দেশবাসীর নজরে।
