সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে সেই টাকায় জুয়া খেলতো পাষণ্ড মা, পিবিআই তদন্তে মামলার রহস্য উদঘাটন

Uncategorized আইন ও আদালত


নিজস্ব প্রতিবেদক : নিজের সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করিয়ে ভিক্ষার টাকায় জুয়া খেলার ঘটনায় হোসনে আরা বেগম (৩৮) নামে এক পাষণ্ড মা’কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো।
গত ১২ মার্চ, রাত অনুমান ১০ টার সময় সিএমপি, চট্টগ্রাম আওতাধীন পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনাশাহ মাজার এলাকা হতে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত মহিলা আসামী হোসনে আরা বেগম নিজের শিশু সন্তানের পায়ে পলিথিন মুড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দিতেন ।

সেই পোড়ার ক্ষত দেখিয়ে মেয়েকে দিয়ে মানুষের নিকট হতে ভিক্ষা করিয়ে টাকা সংগ্রহ করে সেই টাকায় জুয়ার আখড়ায় লুডু খেলতেন হোসনে আরা বেগম।

গত ২৭ এপ্রিল ২০২২ সালে জনৈক মোঃ রাশেদ, লিমু সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে তার মেয়ে রাশেদা আকতার (১১) কে জোরপূর্বক অপহরন করেছে মর্মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-০৭ চট্টগ্রামে মামলা দায়ের করেন গ্রেফতারকৃত মহিলা আসামী হোসনে আরা বেগম।

আদালত মামলাটি অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোর উপর দায়িত্বভার অর্পন করেন।

পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোর উপ-পুলিশ পরিদর্শক জাহেদুজ্জামান চৌধুরী উল্লেখিত নারী ও শিশু মামলাটি অনুসন্ধানকালে কথিত ভিকটিম রাশেদা আকতার (১১) কে উদ্ধার পূর্বক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর ২২ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে উপস্থাপন করেন।

কথিত ভিকটিম রাশেদা আকতার আদালতে তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করে যে, সে বদনাশাহ মাজারের সামনে ভিক্ষা করত।

তার মা হোসনে আরা বেগম পলিথিন দিয়ে তার পা পুঁড়ে দিত। পোঁড়া পা দেখিয়ে মানুষের নিকট হতে ভিক্ষা করে টাকা সংগ্রহ করত। ভিক্ষায় সংগৃহীত টাকা দিয়ে হোসনে আরা বেগম ছক্কা নামক জুয়া খেলত।

ভিকটিম রাশেদা আকতার এর ছোট ভাই এক্সিডেন্ট করে পা ভেঙ্গে ফেলায় তার চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন হয়। তখন রাশেদ ও লিমু তার মাকে আর্থিক সহায়তা করে।
পরে রাশেদ ও লিমুর বাসায় ভিকটিম রাশেদা আকতারকে গৃহকর্মী হিসাবে কাজে দেওয়া হয়। লিমু ও রাশেদ ভিকটিম রাশেদা আকতার কে অপহরন করেন।

পরবর্তীতে অনুসন্ধানকালে প্রমাণিত হয় যে, হোসনে আরা বেগম রাশেদ ও লিমুকে মিথ্যা অপহরন মামলা দিয়ে টাকা আদায়ের জন্য আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং/০৩) ৭/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করে।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর তদন্তে উঠে আসে, টাকা আদায়ের জন্য রাশেদ ও লিমুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারকৃত মহিলা আসামী হোসনে আরা মিথ্যা অপহরণ মামলা করেছে। অপহরণের ঘটনাটি সত্য নয় মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো।

আদালত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে ভিকটিম রাশেদা আকতার কে দিয়ে ভিক্ষা বৃত্তি পেশায় জড়ানোর জন্য তার মা হোসনে আরা বেগম এর বিরুদ্ধে শিশু আইন ২০১৩ এর ৭১ ধারা মোতাবেক এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বাদী করে এফআইআর গণ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ওসি, পাঁচলাইশ মডেল থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন।

আদালতের নির্দেশে এসআই নুরুল আলম মিয়া, পাঁচলাইশ মডেল থানা, সিএমপি, চট্টগ্রাম বাদী হয়ে হোসনে আরা বেগমের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ মডেল থানার মামলা নং-০৮, তারিখ-১৯/১১/২০২২ইং, ধারা-শিশু আইন ২০১৩ এর ৭১ ধারায় মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো, চট্টগ্রাম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পিবিআই প্রধান, অ্যাডিশনাল আইজিপি, বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট প্রধান পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মর্জিনা আকতার এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স সহ পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর আভিযানিক দল গত ১২ মার্চ, রাত অনুমান ১০ টার সময় সিএমপি, চট্টগ্রাম আওতাধীন পাঁচলাইশ মডেল থানাধীন বদনাশাহ মাজার এলাকা হতে অভিযুক্ত মহিলা আসামী হোসনে আরা বেগম গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মহিলা আসামী হোসনে আরা বেগম নিজের গর্ভজাত একমাত্র মেয়েকে দিয়ে ভিক্ষা করান।

ভিক্ষা করাতে গিয়ে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের জন্য সে তার সন্তানের শরীরে বিভিন্ন আঘাতের সৃষ্টি করে। সন্তানকে দিয়ে ভিক্ষা করানোর মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে তিনি জুয়া তথা ছক্কা খেলেন।

এছাড়াও তার মেয়ে ভিকটিম রাশেদা আকতারকে গৃহকর্মীর কাজ দিয়ে পরবর্তীতে গৃহের মালিকদের অহেতুক হয়রানী করে টাকা আদায়ের জন্য সে মিথ্যা মামলার দায়ের করে।

গত ১৩ মার্চ, আসামী হোসনে আরা বেগমকে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামে সোপর্দ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন
👁️ 15 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *