বেশুমার অনিয়ম ও দুর্নীতি করে  বিস্ময় জাগানিয়া সম্পদ অর্জন করেছেন  এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট) জাবেদ করিম 

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী সারাদেশ

#  রাজধানীর গুলশান ১-এর ১৩০ নম্বর সড়কের ১১/বি-এর আশক্স আমারি ওয়ে ডেভেলপার্স এলটিডির পাশে ৩০ কাঠা জমির ওপর বিশাল গ্যারেজ রয়েছে জাবেদ করিমের। গ্যারেজটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। এ ছাড়া উত্তরা, বনানী, মিরপুরে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি ও ফ্ল্যাট। তার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। বনানীর ২৫/এ সড়কের ৫৫ নম্বর বাড়িটি তার। এই বাড়ি নির্মাণে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রগতি সরণির শহিদ আব্দুল আজিজ রোডের ৩০ কাঠার ৪৮নং প্লটটিও তার। প্লটটি তিনি কিনেছেন প্রায় শতকোটি টাকা দিয়ে। সেখানে পেইন টেকিং অটোমোবাইলস নামে গ্যারেজ ভাড়া দিয়েছেন। পূর্বাচলের ৩ নম্বর সড়কের ৬৫ নম্বর প্লটটি ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন। গাজীপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন ৮ নম্বর রোডের ৭৫ নম্বর বাড়িটিও তার। এই বাড়িটি তিনি ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কিনেছেন। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়িতে ৩২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া আফতাবনগরের ২ নম্বর সড়কের ৯৮ নম্বর প্লটটিও স্ত্রীর নামে কিনেছেন ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে। বসুন্ধরা আবাসিকের ডি ব্লকে ৭ নম্বর সড়কের ৬৯ নম্বর প্লটটি ৪০ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। সেখানে ৮ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ৯ নম্বর রাস্তার ৩৬ নম্বর বাড়িটি ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায় কিনেছেন। কেরানীগঞ্জের ৬ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতে ৩৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনতে ব্যয় করেছেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ই ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লট ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকায় কিনেছেন। ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ৪ নম্বর সড়কের ৮৫ নম্বর প্লটটি স্ত্রীর নামে কিনেছেন ২ কোটি ৯০ লাখ টাকায়  #


বিজ্ঞাপন

এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট) জাবেদ করিম।

 

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সরকারি চাকরি যেন টাকা কামানোর যন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। বর্তমানে অনুসন্ধান ও তদন্তে জানা যাচ্ছে বিভিন্ন দপ্তরের রাঘববোয়ালদের সম্পর্কে, যারা অবাধে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে। এমন একজন জাবেদ করিম। বর্তমানে তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট) পদে রয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

সারা দেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণ করা সড়ক সেতুর চিত্র হচ্ছেÑ অনেক জায়গায় সেতু আছে তো রাস্তা নেই, আবার রাস্তা থাকলেও ব্যবহারের উপযোগী নয়। সড়ক সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কিছু হোক আর না হোক, জাবেদ করিমের ভাগ্যে টাকার মেশিন ঘুরছে শত কিলোমিটার গতিতে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা নেওয়া জাবেদ করিম এখন নিজেকে বিএনপি পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তবে অবৈধ সম্পদের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন। দাবি করেছেন, শুধু বনানীতে তার বাবার একটি বাড়ি আছে।


বিজ্ঞাপন

জাবেদ করিমের সম্পদের হিসাবের বিবরণ দিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা মো. আরমান হোসেন।

সেই অভিযোগ থেকে তার বিস্ময় জাগানো সম্পদের ফিরিস্তি পাওয়া গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় আগারগাঁওয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে যান জাবেদ করিম।

তার টাকা তৈরির মেশিনে জ¦ালানি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. জাহিদ হোসেন চৌধুরী। জাহিদের সঙ্গে ভাগ-বাটোয়ারা করে সম্পদের পাহাড় গড়েন জাবেদ।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি এলজিইডির সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকাকালে জাহিদের সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক এবং জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী পদায়নে ছিল তাদের বিশাল বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে, পদভেদে ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকার বেশি নিতেন জাবেদ-জাহিদ মিলে।

আরমান হোসেনের অভিযোগ ছাড়াও এলজিইডির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকেও জাবেদ করিমের অবৈধ সম্পদের কিছুটা আভাস পাওয়া গেছে। এলজিইডির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে  গণমাধ্যম কে জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাবেদ করিম কাউকেই পাত্তা দিতেন না। বদলি কিংবা প্রকল্পের পরিচালক হতে হলে টাকা দিতে হতো। সেই টাকার ভাগ যেত মন্ত্রীর এপিএস জাহিদের কাছেও।

জাবেদ করিমের কোথায় কী সম্পদ :  এলজিইডির মুন্সীগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে প্রতিটি কাজের জন্য তিনি ২ শতাংশ করে ঘুষ নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন সেখানে শতকোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। সেই সময় তার ১ লাখ ২৮ হাজার ৫৪৯ টাকার অডিট আপত্তি রয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় তিনি টাকা নয়ছয় করতেন। এরপর বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র প্রকল্পের (এমডিএসপি) পরিচালক থাকাকালে প্রায় শতকোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ রয়েছে।

রাজধানীর গুলশান ১-এর ১৩০ নম্বর সড়কের ১১/বি-এর আশক্স আমারি ওয়ে ডেভেলপার্স এলটিডির পাশে ৩০ কাঠা জমির ওপর বিশাল গ্যারেজ রয়েছে জাবেদ করিমের। গ্যারেজটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। এ ছাড়া উত্তরা, বনানী, মিরপুরে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি ও ফ্ল্যাট। তার বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। বনানীর ২৫/এ সড়কের ৫৫ নম্বর বাড়িটি তার। এই বাড়ি নির্মাণে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রগতি সরণির শহিদ আব্দুল আজিজ রোডের ৩০ কাঠার ৪৮নং প্লটটিও তার। প্লটটি তিনি কিনেছেন প্রায় শতকোটি টাকা দিয়ে। সেখানে পেইন টেকিং অটোমোবাইলস নামে গ্যারেজ ভাড়া দিয়েছেন। পূর্বাচলের ৩ নম্বর সড়কের ৬৫ নম্বর প্লটটি ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন। গাজীপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন ৮ নম্বর রোডের ৭৫ নম্বর বাড়িটিও তার। এই বাড়িটি তিনি ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কিনেছেন। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর সড়কের ৩৬ নম্বর বাড়িতে ৩২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া আফতাবনগরের ২ নম্বর সড়কের ৯৮ নম্বর প্লটটিও স্ত্রীর নামে কিনেছেন ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে। বসুন্ধরা আবাসিকের ডি ব্লকে ৭ নম্বর সড়কের ৬৯ নম্বর প্লটটি ৪০ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। সেখানে ৮ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ৯ নম্বর রাস্তার ৩৬ নম্বর বাড়িটি ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায় কিনেছেন। কেরানীগঞ্জের ৬ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতে ৩৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনতে ব্যয় করেছেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ই ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লট ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকায় কিনেছেন। ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ৪ নম্বর সড়কের ৮৫ নম্বর প্লটটি স্ত্রীর নামে কিনেছেন ২ কোটি ৯০ লাখ টাকায়।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জাবেদ করিম  গণমাধ্যম কে   বলেন, ‘শুধু বনানীর ২৫/এ সড়কের ৫৫ নম্বর বাড়িটা আমার বাবার সম্পদ। এটাতে আমরা ছোট থেকেই থাকি। সেই ১৯৭১ সাল থেকেই রয়েছি। আর যেসব বাড়ির কথা বলা হয়েছে, সেগুলো অনুসন্ধান করে দেখুন। রাজউকে আমি আবেদন করেছিলাম, পাইনি। এটা রাজউকে খোঁজ নিলেই জানা যাবে। এ রকম অভিযোগ প্রতিদিন দুই-একটা পাচ্ছি। প্রধান প্রকৌশলী ১৭ অক্টোবর অবসরে যাবেন। এখন আমার সিরিয়াল ৭ নম্বরে। তার পরও কেন এমন অভিযোগ বুঝতে পারি না।’

👁️ 65 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *