
হাকিকুল ইসলাম খোকন : সাহিত্য ও সাংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য জার্মান প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক, কবি ও উপন্যাসিক নাজমুন নেসা পিয়ারিকে সম্মাননা অ্যাওয়ার্ড প্রদান করবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫,এজেএইচআরএফ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ।

নাজমুন নেসা পিয়ারি দু’জন নোবেল বিজয়ী জার্মান লেখিকার (এলফ্রিডে ইয়েলিনেক এবং হেরটা মুলার) উপন্যাস সরাসরি জার্মান থেকে বাংলায় অনুবাদ করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ “পিয়ানো টিচার”-এর প্রচ্ছদও নাজমুন এঁকেছেন। এছাড়াও কবি শহীদ কাদরীর কবিতার বই “তোমাকে অভিবাতন প্রিয়তমা”-র প্রচ্ছদও নাজমুন নেসা পিয়ারি এঁকেছেন!
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ডয়েচে ভেলে জার্মান রেডিওতে প্রথম বারের মতো বাংলা অনুষ্ঠান শুরু হয়। তখন রেডিও টিভির অনেক প্রার্থীর ভেতরে পরীক্ষায় (লিখিত ও মৌখিক) প্রথম হয়ে ডয়েচে ভেলের কাজে যোগ দেওয়ার সূযোগ পান। তিনি বাংলা একাডেমির সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহ পুরস্কার এবং একুশে পদক পেয়েছেন।

এছাড়াও ডয়েচে ভেলের বাংলা প্রোগ্রাম যারা সেই সময়ে শুনতেন সেইসব শ্রোতাদের সংগঠন “শ্রোতা ক্লাব” থেকে তাকে “গোল্ডেন ভয়েস” পুরস্কার দিয়েছে।

বেতারের জনপ্রিয় উপস্থাপক হিসেবে দেশের রেডিও শ্রোতা ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে অন্যান্য পুরস্কারের সহ “ম্যান অফ দ্য ইয়ার” পুরষ্কার অর্জন করেছেন। জার্মান বেতার তরঙ্গ “ডয়েচে ভেলে”-তে তিনি বাংলা বিভাগ ছাড়া ইংরেজী বিভাগেও ফ্রিল্যান্স কাজ করেছেন।
ডয়েচে ভেলের জার্মান বিভাগের একটি জনপ্রিয় মঞ্চ অনুষ্ঠান “স্টাট বুমেল”-এ (জার্মানির বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত) এক যুগেরও বেশী অংশগ্রহণ করে জার্মানদের মাঝে ও জার্মান গণমাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
এভাবেই তিনি বহুমুখী কাজের ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে জার্মান মূল স্রোতে মিশে যান। দীর্ঘ একযুগেরও বেশী সময় জার্মানির “ডয়েচে ভেলে” রেডিও ও টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় মার্কেটিং ও গণসংযোগ বিভাগে সম্পাদক হিসেবে চাকরি করেছেন। পূব-পশ্চিম দুই জার্মানি অকত্রিত হওয়ার পর এক সময়ে ডয়েচে ভেলের একটি বিশেষ অফার নিয়ে ডয়েচে ভেলে ছেড়ে এবং ঐ এলাকা অর্থাৎ বন-কোলন এলাকা ছেড়ে রাজধানী বার্লিন শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।
জার্মানি বসবাসের গোড়া থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন এবং আজও তা অব্যাহত রেখেছেন! জার্মানিতে বসবাসের গোঁড়ার দিকে ডুসেলডর্ফ শহরে তিনি “কুম” নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং রাজধানী বার্লিনে তিনি “বেঙ্গল সেন্টার” নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট। এর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। বার্লিনে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কিছু ফ্রিল্যান্স কাজ (জার্মান কূটনীতিবিদদের বাংলা ভাষা শেখানো) করেন এবং সাহিত্য কর্মে নিয়োজিত রয়েছেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যকাল থেকে জার্মানিতে পেশাগত কারণে চলে যাওয়া অবধি ঢাকার চলচ্চিত্র সংগঠন “ধ্রুপদি”-র সাথে জড়িত ছিলেন! জার্মানি চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে আমান্ত্রিত হয়ে কোলকাতা, দিল্লী, হামবুর্গ, লন্ডন-এ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে জুরিবোর্ডে সদস্য হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দিয়েছেন। এভাবেই তিনি দীর্ঘদিন থেকে নিরলস ভাবে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় কাজ করে চলেছেন। ডয়েচে ভেলের বিভিন্ন বিভাগে কাজের বাইরেও তিনি জার্মানি থেকে বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকা Daily Star, Independent, বিচিত্রা, সাপ্তাহিক দু’হাজার ও ইত্তেফাক-এ করোসপেনডেনট হিসেবে কাজ করেছেন।
জার্মানিতে বন শহরে ইন্টারনাৎসিওন নামে একটি প্রাইভেট ইংরেজি পত্রিকায় এবং কলোন শহরে “মেসে কলোন” (কলোন শহরে আন্তর্জাতিক মেলার জার্মান সংগঠক)-এর জন্যও লেখালেখি করেছেন! এভাবেই নাজমুন নেসা (লেখিকা নাম: নাজমুন নেসা পিয়ারি) শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখে চলেছেন।নাজমুন নেসা পিয়ারি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও কমিউনিটি সহ সকল মহলে প্রশংসিত ও সুপরিচিত ।তার অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে ।তিনি একজন সাদা মনের ,অমায়িক মানুষ ।আজীবন মানবকল্যাণে কাজ করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন ।তিনি বহুবার বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন অতিথি ও বক্তা হিসেবে ।
